দেবহাটার রূপসী ম্যানগ্রোভ আধূনিকায়ণে নিরলস কাজ করছেন ইউএনও খালিদ হোসেন সিদ্দিকী

কে এম রেজাউল করিম দেবহাটা ব্যুরো: জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত সাতক্ষীরার রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটিকে আরোও আধূনিকায়ন ও দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। গত কয়েকমাস ধরে তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং আধুনিকায়নের ফলে বর্তমানে প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে দেবহাটা উপজেলার ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণী ইছামতি নদীর অববাহিকায় প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বণাঞ্চলের আদলে গড়ে তোলা রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি।

 

শনিবার ইংরেজি নববর্ষের প্রথম সকালে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটির চলমান উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপচারিতায় এ বিনোদন স্পটটিকে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষনীয় করে তোলার কথা জানান তিনি।

 

২০২১ সালের শেষের দিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দেবহাটাতে যোগদানের পরপরই এ পর্যটন কেন্দ্রটি দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষনীয় করে গড়ে তুলতে তা আধূনিকায়ন ও দৃষ্টিনন্দনের উদ্যোগ নেন খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। এরআগে মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারনে টানা প্রায় একবছর বন্ধ রাখা এবং পরপর আম্পান ও ইয়াসসহ কয়েকটি প্রাকৃতিক দূর্যোগে পর্যটন কেন্দ্রটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পাশাপাশি বন্ধ হয়ে যায় এর যাবতীয় উন্নয়ন কাজ। পরবর্তীতে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন শেষে পর্যটন কেন্দ্রটি খুলে দেয়া হলেও, সেসময় স্থানটি দর্শনার্থীদের চিত্তবিনোদনের সক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় বিনোদনের জন্য জেলার অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্র ও দর্শণীয় স্থানের দিকে ঝুঁকেছিলেন ভ্রমন পিপাসূরা।

 

এমন অবস্থা থেকে কাটিয়ে তুলতে দেবহাটাতে যোগদানের পর ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি আরোও আধূনিকায়নের মাধ্যমে দর্শণার্থাদের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলতে মনোনিবেশ করেন নির্বাহী অফিসার খালিদ হোসেন সিদ্দিকী। বিগত অর্থবছরে ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দে বৈঠক খানার সেড নির্মান, ২ লক্ষ ৬৪ হাজার টাকা বরাদ্দে গাড়ি পার্কিংয়ের স্থানে মাটি ভরাট, ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দে নামাজের ঘর সংস্কার, ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে ওয়াকওয়ের কাচা রাস্তা ইট সোলিংকরণ, ২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা ব্যায়ে কফি হাউজ নির্মান, ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে গেষ্ট রুম সংস্কার, ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে সেলফি পয়েন্ট পুনঃনির্মান, ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দে শিশু কর্নার ও অনামিকা লেকের পাশে দর্শনার্থীদের বসার স্থান নির্মান, ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দে অনামিকা লেকের ওপর ট্রেইল সংস্কার ও ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দে লেক সংলগ্ন রাস্তা সংস্কার এবং বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক ও টিআর তৃতীয় পর্যায় থেকে ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার আরোও তিনটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্নের জন্য তোড়জোড় শুরু করেন তিনি। ইতোমধ্যেই এসব প্রকল্পের কয়েকটির কাজ শেষ হয়েছে এবং কয়েকটি অপেক্ষমান রয়েছে। পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্রটির অভ্যন্তরে রং বেরংয়ের বৈদ্যুতিক লাইট স্থাপন, চিড়িয়াখানার জন্য বালু ভরাট, মূল ভবনটি দ্বিতলকরণের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া একাধিক সেলফি পয়েন্ট তৈরী এবং পর্যটন কেন্দ্রটিকে ফুলে ফুলে ভরিয়ে তুলতে আপ্রান প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ইউএনও খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।
বর্তমানে দর্শনার্থীদের পদচারনায় আবারো মুখরিত হয়ে উঠেছে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি। পূর্বের তুলনায় আধুনিকায়ন ও দৃষ্টিনন্দনের ফলে স্থানটি ক্রমশ দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষনীয় হয়ে ওঠায় প্রানচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে পর্যটন কেন্দ্রটিতে।

 

উল্লেখ্য, প্রায় ১০ বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব আ.ন.ম তরিকুল ইসলাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার থাকাকালে নদী ভাঙন রোধ ও চিত্তবিনোদনের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শিবনগরে ইছামতি নদীর অববাহিকায় ৩১.৪৬ একর জমির ওপর সুন্দরবনের সুন্দরী, কেওড়া, গরান, গেওয়া, গোলপাতাসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করে ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটি গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে সুন্দরবনের আদলে গড়ে তোলা স্থানটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পায় দর্শনার্থীদের কাছে।

 

কয়েক বছর আগে তৎকালীন ইউএনও হাফিজ আল আসাদের প্রচেষ্টায় জনপ্রশাসন পদকেও ভূষিত হয় পর্যটন কেন্দ্রটি।

 

আধূনিকায়ন ও দৃষ্টিনন্দনে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, পর্যটন কেন্দ্রটিকে দর্শনার্থীদের কাছে আরোও বেশি আকর্ষনীয় করে তুলতে আমরা নিরলস কাজ করছি। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি এটির চারপাশে আলোকসজ্জা ও ফুলে ফুলে ভরিয়ে তোলা হচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রটি। আশাকরি চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র দর্শনার্থী ও ভ্রমন পিপাসূদের বিনোদনের চাহিদা পূরনের সক্ষমতা অর্জন করবে।