পাইকগাছায় ১ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পাল্টে যাবে অত্র এলাকার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট

ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা।। খুলনা জেলা শহরের সাথে পাইকগাছা কয়রা’র যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে, ৪০ কিলোমিটারের মত সড়ক উন্নয়ন, ৩টি নদীর উপর ৩টি ব্রিজ নির্মাণ ও ফেরী সহ অন্যান্য অবকাঠামো। পাইকগাছা-সোলাদানা-বটিয়াঘাটা (জেড-৭৬০৮) জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দুই উপজেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ এবং উন্নত হবে। পাশাপাশি অত্র এলাকায় গড়ে উঠবে শিল্প কলকারখানা, প্রসার ঘটবে ব্যবসা-বাণিজ্যের।

 

প্রকল্পটি অত্র এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে উপকূলীয় এ জনপদের মানুষ। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু’র ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে। খুলনা সড়ক বিভাগ এটি বাস্তবায়ন করবে। স্বাধীনতার পর এটিই হবে অত্র এলাকার মেগা বাজেটের একক প্রকল্প।

 

উল্লেখ্য, বর্তমানে পাইকগাছা-কয়রার মানুষ তালা, বেতগ্রাম, চুকনগর, ডুমুরিয়া হয়ে একমাত্র সড়ক দিয়ে খুলনায় যাতায়াত করে থাকে। এতে কয়রার মানুষের জন্য প্রায় ৫ ঘন্টা এবং পাইকগাছাবাসীর জন্য ৪ ঘন্টা সময় ব্যয় করতে হয়। সময়ের সাথে সাথে অর্থেরও অপচয় হয় অনেক বেশী। এমন দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে অবহেলিত দুই উপজেলার মানুষ দীর্ঘদিন জেলা শহরে যাতায়াত করে আসছে। যদিও বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু’র মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটির উন্নয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিল জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য একটি সহজ বিকল্প সড়ক। যেটি অবশেষে বর্তমান সংসদ সদস্যের প্রচেষ্টায় বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।

 

খুলনা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনিছুজ্জামান মাসুদ জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে খুলনা সড়ক বিভাগের অধীন খুলনা বিভাগীয় শহরের সাথে দূরবর্তী কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলাবাসীর বটিয়াঘাটা হয়ে যানজটমুক্ত, নিরাপদ, আরামদায়ক এবং সময় ও ব্যয় সাশ্রয়ী সড়ক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রকল্প এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়ন। প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে পাইকগাছা জিরোপয়েন্ট থেকে সোলাদানা, দেলুটি হয়ে বটিয়াঘাটার জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার। প্রকল্পের সম্ভাব্য মেয়াদকাল হবে ০১-০১-২০২৩ হতে ৩১-১২-২০২৫ পর্যন্ত। প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ৯৬২ কোটি টাকা, প্রকল্পের প্যাকেজ হবে ৮টি, ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে ৬৫ হেক্টর। দেলুটি ইউনিয়নের দারুনমল্লিক এলাকায় হাপরখালী নদীর উপর ১টি, সোলাদানার শিবসা নদীর উপর ১টি এবং পাইকগাছা সদরের পুরাতন শিবসা ব্রিজের পাশে আরো ১টি সহ মোট ৩টি নদীর উপর ৩টি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

 

দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, আমাদের ইউনিয়নটি একটি দ্বীপবেষ্টিত ইউনিয়ন। না আছে উপজেলা সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ, না আছে জেলা শহরের সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অত্র ইউনিয়নে উৎপাদিত তরমুজ, সবজি সহ অন্যান্য কৃষি পণ্য বিক্রয় সহ এলাকার আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিপ্লব ঘটবে।

 

উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু জানান, গ্রামকে শহর করার প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন দেখছেন প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে অত্র এলাকায় তার প্রতিফলন ঘটবে। সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আক্তারুজ্জামান বাবু জানান, নির্বাচিত হওয়ারপর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। যার অংশ হচ্ছে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি। মূলত জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য নির্বাচনী এলাকার মানুষের তেমন কোন বিকল্প সড়ক ব্যবস্থা ছিলনা।

 

 

এটি বহুমূখীকরণ করতেই প্রস্তাবিত প্রকল্পটি প্রণয়ন করা হয়েছে। আশা করছি এটি বাস্তবায়ন হলে পাইকগাছা-কয়রাবাসীর যোগাযোগ সহজ এবং উন্নত হবে। পাশাপাশি পাল্টে যাবে অত্র এলাকার আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট। গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছি। প্রকল্পটি অনুমোদন এবং বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন স্থানীয় এ সংসদ সদস্য।।