পড়াশোনা শেষ। চাকরি করছেন। এবার শুরু করলেন জীবনের আরেকটি অধ্যায়। বিয়ের মাধ্যমে সংসার জীবনে প্রবেশ করলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী ফাল্গুনী সাহা। ফাল্গুনীর বরের নাম সুব্রত মিত্র। পটুয়াখালী জে’লার গলাচিপা সদরের এই বাসিন্দা একেবারে অ’পরিচিত কেউ নন। ছে’লেবেলা থেকেই তাকে চেনেন ফা’ল্গুনী। তবে দুজনের বন্ধুত্ব মাত্র পাঁচ বছরের। বৃহস্পতিবার (০২ ডিসেম্বর) হিন্দু রীতি অনুযায়ী তাদের বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। সাত পাকে বাঁ’ধা পড়েন দুজন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, দুই পরিবারের সম্মতিতে বরিশালের ঐতিহ্যবাহী শ্রী শ্রী শংকর মঠ মন্দির প্রাঙ্গণে বিয়ে হয় সুব্রত ও ফা’ল্গুনীর। স্বজনদের সঙ্গে স্থানীয়রাও হাজির হয় তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে। এ সময় বর সুব্রতের দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন সবাই। সুব্রত পটুয়াখালীতে বেসরকারি সংস্থা কোডেকের ফিল্ড অফিসার। আর ফা’ল্গুনী বরিশাল ব্রাক অফিসে সহকারী এইচআর পদে রয়েছেন। দুজনের বাড়ি গলাচিপাতে। তবে ফা’ল্গুনী বরিশাল শহরের ব্রজমোহন কলেজ সংলগ্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন।
ফাল্গুনী জানান, ২০০২ সালে একটি দুর্ঘ’টনা তার জীবন বদলে দেয়। পাশের একটি বাড়ির ছাদের সঙ্গে থাকা বৈদ্যুতিক তারে লেগে দুই হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তার। তবে এরপরেও তিনি নিজেকে কখনো দুর্বল ভাবেননি। সমানে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। ২০১১ সালে গলাচিপা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন ফা’ল্গুনী। এইচএসসি পাস করেছেন ২০১৩ সালে, উত্তরা ট্রাস্ট কলেজ থেকে। এরপর ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জিওলোজি ও এনভায়রনমেন্ট বিভাগে। ২০১৮ সালে অনার্স এবং এরপর মাস্টার্স শেষ করে চাকরিতে ঢুকেন তিনি।
ফাল্গুনী বলেন, দৃষ্টিভঙ্গি আর মানসিকতা ঠিক থাকলে প্রতিবন্ধকতা কোনো বিষয় নয়। আমাদের বিয়েটা উদাহ’রণ হয়ে থাকবে বলে মনে করি। আমি বলবো, এ পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতিকূলতা নয় সবার আন্তরিকতা দেখেছি। আপনারা সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন, সামনের দিনগুলোতে যাতে আম’রা ভালো থাকতে পারি। ফাল্গুনীর বর সুব্রত বলেন, ফা’ল্গুনীকে আমি ছোটবেলা থেকে চিনি। সে যখন ভা’র্সিটিতে পড়ত, তখন ফেসবুকে কথা হতো। একটা সময় বুঝতে পারি সে পড়াশোনায় অনেক ভালো করছে। তবে ওর ফ্যামিলি লাইফ বা সামনের দিকে আগানোর কোনো চিন্তা ছিল না। ফা’ল্গুনীর হাত নেই—এটা আমা’র কাছে কোনো সমস্যা মনে হয়নি। সবাই আমাদের জন্য আশীর্বাদ করবেন।