শ্যামনগরে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক প্রশাসন নীরব  
এস এম মিজানুর রহমান শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে অসংখ্য প্রাইভেট ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বেসরকারি হাসপাতাল। যাহার মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের নেই কোন অনুমোদন।
এর মধ্যে কয়েক মাস আগে শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের হায়বাতপুর মোড়ে গড়ে উঠা সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়গনস্টিক সেন্টার অন্যতম। তাদের কোন প্রকার সরকারি অনুমোদন না থাকার পরেও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় বহাল তবিয়তে ক্লিনিক খুলে রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বে-সরকারি প্রতিষ্ঠান শ্যামনগর সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। হাসপাতালটির চেয়ারম্যান ফিজিওথেরাপিস্ট শাহজাহান সিরাজ ডাক্তার না হয়েও নামের পাশে সংযুক্ত করছেন ডাক্তার মোঃ শাহজাহান সিরাজ  প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও পরিচালক কনসালটেন্ট ও বিভাগীয় প্রধান, ফিজিক্যাল মেডিসিন ও থেরাপি বিভাগ কেয়ার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল- ঢাকা।
‌শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) উপজেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের বড়কুপোট গ্ৰামের মৃত, মোকবুল হোসেন মালীর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন (৬৪) জরায়ু সমস্যা জড়িত কারণে এপোলো হাসপাতালে ভর্তি হয়। সরকারি আইন অনুযায়ী একজন রোগীকে অপারেশন করার সময় এক জন ডাক্তার,এক জন এ্যানেস্তেসিয়া একজন এসিস্ট্যান্ট থাকার নিয়ম। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ্যানেস্তেসিয়া ডাক্তার আছেন ডাঃ অজিত রায়। তাকে ও নেওয়া হয়নি, অন্যদিকে তাদের প্রতিষ্ঠানের কোন এ্যানেস্তেসিয়া ডাক্তার নেই।
অথচ ডাঃ সুব্রত কুমার মন্ডল এ্যানেস্তেসিয়া ডাক্তার ছাড়াই এলাকার হাতুড়ি ডাক্তার দিয়ে এ্যানেস্তেসিয়া কাজ মিটিয়ে রোগীকে অপারেশন করে তার কর্মসংস্থান খুলনায় চলে যান। অপারেশনের পর থেকে রোগীর অবস্থা অবনতির দিকে যেতে থাকে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল আনুমানিক ১২ টার সময় সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতালেই রাবেয়া খাতুনের মৃত্যু হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উক্ত হাসপাতালের এক জন কর্মচারী বলেন, রোগী মৃত্যুর আধা ঘন্টা আগে তাকে একটি ঘুমের ইনজেকশন দেয়া হয়।তার  কিছুক্ষণ পরে রোগীটি মারা যায়।
রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কে বিভিন্ন অভিযোগ দিতে থাকে। কতৃপক্ষ বিয়টি ধামাচাপা দিতে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে।এক পর্যায়ে তাদেরকে বুঝাতে সক্ষম হয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মৃত রাবেয়া খাতুনের স্বজনদের বুঝান বিষয়টি জানাজানি হলে থানা পুলিশ হবে, আর থানা পুলিশ হলে লাশ ময়নাতদন্তে নেওয়া হবে। মৃত বৃদ্ধার স্বজনরা জটিলতা এড়িয়ে তাদের কথা মেনে নেয়। তারপর সন্ধ্যার পর একটি বেসরকারি এম্বুলেন্স যোগে মৃত বৃদ্ধা কে গোপনে বাড়িতে পাঠানো হয়।
এ সংবাদ জানাজানি হলে সাংবাদিকরা সন্ধ্যার পর সুন্দরবন এ্যাপোলো হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে উক্ত হাসপাতালে চেয়ারম্যান ফিজিওথেরাপিস্ট শাহজান সিরাজ সাংবাদিকদের কোন প্রকার তথ্য না দিয়ে বিভিন্ন ভয়ভীতি  দেখাতে থাকে। একপর্যায়ে শাহজাহান সিরাজ সাংবাদিকদের কাছে একটি রোগী মৃত্যু হয়েছে স্বীকার করলেও তথ্য গোপন করে বলেন রোগীটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ছিল এবং ডাঃ সুব্রত কুমার মন্ডল এর আত্মীয়। তিনি এ সময় তাদের রেজিস্টার খাতায় রোগীর পূর্ণ নাম ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি বলেন আমাদের প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর সভাপতির তথ্য দেওয়া নিষেধ আছে।
সে সময় তার কাছে তাদের সভাপতির নাম্বার চাইলে তিনি বলেন সেটিও আমি দিতে পারবো না। অপারেশনের সময় এ্যানেস্তেসিয়া ডাক্তার কে ছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ডাঃ ফরহাদ হোসেন ছিলেন। একপর্যায়ে তিনি অফিস কক্ষ থেকে উঠে চলে যান এবং কর্তৃপক্ষকে সাংবাদিকদের কোন প্রকার তথ্য দিতে নিষেধ করে। তথ্য অনুসন্ধান করতে মৃত ব্যক্তির বাড়িতে গেলে সেখানে মেলে ভিন্ন চিত্র। ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহজাহান সিরাজের কথার কোন মিল পাওয়া যায়নি। মারা গিয়েছে একজন মুসলিম বৃদ্ধা অথচ তিনি তথ্য গোপন করে বানিয়ে দিয়েছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলা। এবং মৃত্যু মুসলিম বৃদ্ধাকে বানিয়েছেন ডাক্তার সুব্রত কুমার মন্ডলের আত্মীয়। তবে মৃত রাবেয়া খাতুনের পরিবারের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন,যেটা হবার হয়েছে।এ বিষয়ে আমরা কিছু বলতে চাই না। আমাদের কোন অভিযোগ নেই।
এ বিষয়ে এমবিবিএস এ্যানস্তেসিয়া ডাঃ ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, শ্যামনগরে সুন্দরবন এপোলো হাসপাতাল বলে কোন প্রতিষ্ঠান আছে কিনা আমার জানা নেই। আমি শ্যামনগরে গিয়েছি বছর দুয়েক আগে। তিনি তাহার নাম ব্যবহারের জন্য ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান।
বিষয়টি জানার জন্য এমবিবিএস ডাক্তার সুব্রত কুমার মন্ডল এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, রোগীর অপারেশন ঠিকঠাক করা হয়েছিল। তিনি বলেন রোগীটি হার্ড স্টকজনিত কারণে  মৃত্যুবরণ করেন।
এ বিষয়ে শ্যামনগর প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এসোসিয়েশনের সভাপতি জিয়াউল হক পলাশ বলেন, সাংবাদিকদের তথ্য দিতে আমার কোন নিষেধ থাকবে কেন। আমি বিষয়টি শোনার পর অ্যাপোলো হাসপাতালে চেয়ারম্যান কে দুইবার ফোন দিয়েছি কিন্তু ফোনটি রিসিভ হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প,প কর্মকর্তা ডঃ জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি , ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য একটি তদন্ত টিম গঠন করা হবে। তাহার ভাষ্য অনুযায়ী ক্লিনিক টি এখনো লাইসেন্স প্রাপ্ত হয়নি।