শ্যামনগরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে দীপ ইউনিয়ন গাবুরার ৪০ হাজার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার ম্মান

এস এম মিজানুর রহমান শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ শ্যামনগরের দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ চারটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি ইউনিয়ন হেলথ কমপ্লেক্সের মাধ্যমে এক ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষের চিকিৎসা সেবা চলছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়তনে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা।

 

 

সেই উপজেলারই দীপ ইউনিয়ন গাবুরা। ইউনিয়নবাসী বলছেন বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপক উন্নয়ন হলেও যাতায়াত থেকে শুরু করে পিছিয়ে আছে উন্নত জীবনধারনেও। তবে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রের অভাবে দিন দিন গাবুরা ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সেবার মান ভেঙে পড়ছে বলে দাবি ইউনিয়নবাসীর। জানা গেছে, পানিউন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২৯.৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে আচ্ছাদিত ইউনিয়নটিতে গড়ে ৪০ হাজার মানুষের বসবাস থাকলেও সবচেয়ে নিকটতম উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্স ৩৫ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। উন্নয়ন হয়নি গাবুরা ইউনিয়নের চিকিৎসাসেবা উপজেলা শহরের সাথে নেই সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় গাবুরা ইউনিয়নে কোনরকম চারটি বিধ্বস্ত ও ভঙ্গুর কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি ইউনিয়নে হেলথ কমপ্লেক্স দিয়ে চলছে বৃহৎ ইউনিয়নের স্বাস্থ্য সেবা কার্যক্রম। যার মধ্যে ইউনিয়নের পার্শ্বেমারি কমিউনিটি ক্লিনিকটি বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম মাসুদুল আলমের ব্যক্তিগত এক লক্ষ টাকা আর্থিক সহযোগিতায় কোনরকম মেরামত করা হলেও বাকি গুলো প্রায় পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে।

 

 

 

সেখানে সার্বক্ষণিক ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। কথা বলে জানা গেছে বিগত পাঁচ বছর ধরে ছুটির দিন ব্যতীত প্রত্যেকদিন কয়েক শত মানুষের স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছি। প্রাণ ভয়ে ঠিকমত বসতে পারি না। সম্পূর্ণ ছাদে ফাটল ধরেছে, দেয়ালের বালু সিমেন্ট ঝুরঝুর করে পড়ে সেই জানালা-দরজা। সরকারি ঔষধ ও চিকিৎসাসেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি এবং অফিশিয়াল খাতাপত্র সবকিছুই অনিরাপদ। এমন ভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময় ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

 

 

 

এমনটাই জানাচ্ছিলেন গাবুরা কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যসেবিকা হেলেনা বিলকিস। তার কথার সাথে সুর মিলিয়ে পাশে বসে থাকা চিকিৎসা সেবা নিতে আসা হরিশখালি গ্রামের সালেহা আক্তার (৪২) বলেন, এখানের অবস্থা যা তাতে আসতে ভয় করে তারপরও কি করবো আসতে হয়। লবণ পানির জন্য সমস্ত গায়ে চুলকানি পাঁচড়া হয়েছে তাই ঔষধ নিতে এসেছি। দূর থেকে দেখে একটি পরিত্যাক্ত ভবন মনে হলেও সেখানেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। কমিউনিটি ক্লিনিকে সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়, আব্দুল আজিজ শেখ ও আহম্মাদ আলীর পুকুর পাড়ে অবস্থিত ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক। দীর্ঘদিন পুকুরের পাড় মেরামত না করায় প্রবেশপথটি ইতিমধ্যে বিলুপ্তির হয়ে গেছে। কোন রকম ভাবে কষ্ট করে ভিতরে ঢুকে দেখা যায় অত্যন্ত নাজুক ও নড়বড়ে অবস্থায় কোনো রকম দাঁড়িয়ে আছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটি। ঘরটি নির্মাণে যে লোহার গ্রিল, আলনা-দরজা লাগানো হয়েছিল সেগুলো সম্পূর্ণ অবস্থায় নষ্ট হয়ে গেছে। উপরের ছাদের প্রায় প্রতিটা জায়গায় ফাটল নিয়েছে।

 

 

 

মাঝেমধ্যে সেখান থেকে ছোট বড় টুকরা পড়ছে মেঝেতে। যে কোন সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ডুমুরিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকের সভাপতি ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জিএম আরিয়ার রহমান বলেন, ‘আমরা গাৰুৱার মানুষ সব সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকি। প্রাকৃতিক, দুর্যোগ ঝড়-ঝঞ্ঝার সাথে বুদ্ধি প্রয়োগ করা যায়। কিন্তু রোগের সাথে কোন রকম বুদ্ধি খাটে না। ইতিমধ্যে রেজুলেশনের মাধ্যমে উপজেলাকে জানানো হয়েছে ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য। গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, গ্রামের প্রতি ছয় হাজার মানুষের জন্য একটি করে ক্লিনিক নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। আইলার পর থেকে আজ পর্যন্ত গাৰুৱাতে ছোট বড় প্রায় দশটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। যার মধ্যে আইলা, আম্পান, ইয়াশ ও বুলবুলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাবুরা ইউনিয়ন। ইউনিয়নটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দীর্ঘদিন লবণ পানির নিচে তলিয়ে থাকায় শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক নয় মানুষের বসতবাড়িও একই অবস্থা।

 

 

 

কোনরকম টিকে থাকার মতো বসবাস করছে গাবুরার মানুষ। অনতিবিলম্বে গাবুরা তে সর্বনিম্ন ১০ শয্যার একটি হাসপাতাল খুবই জরুরী। তিনি আরো জানান, ইউনিয়ন থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। শুকনা মৌসুমে কোনরকম মোটরসাইকেল যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও বৃষ্টির সময় সম্পূর্ণ বিপরীত রূপে থাকে গাবুরা। বেড়িবাঁধের পাশাপাশি বসবাসকারী মানুষের ইঞ্জিন চালিত বোর্ড বা নৌকা ব্যবহার করতে পারলেও ভিতরে যারা বসবাস করে তারা তাদের রোগীকে নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া খুবই দুরূহ ব্যাপার। ইতিপূর্বে চিকিৎসাসেবা নিতে যেয়ে অনেক গর্ভবতী মা নৌকাতেই তাদের সন্তান প্রসব করেছেন বা চিকিৎসা নিতে যাওয়া অনেকেই তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর আগেই মারা গিয়েছেন। এটাই হল গাবুরা ইউনিয়নের বাস্তবতা। স্থায়ী বেড়িবাঁধ ও চিকিৎসা সেবা গাবুরার মানুষের প্রাণের দাবি।