পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ১৫ বছর আজ রোববার। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি কিছু বিপথগামী সদস্য দাবি আদায়ের নামে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদর দপ্তর পিলখানায়। অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের পাশাপাশি তৎকালীন মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বিপথগামী বিদ্রোহীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু ও নারীরাও। তারা নারী ও শিশুসহ ১৭ জন বেসামরিক নাগরিককেও নির্মমভাবে হত্যা করে। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় থাকলেও বিস্ফোরক মামলাটি এখনো বিচারিক আদালতের গন্ডি পার হয়নি। দেশের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা। অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে সর্বোচ্চ আদালতে মামলাটির শুনানি শুরু করা যাচ্ছে না। পিলখানা ট্র্যাজেডির ভয়াবহ নৃশংসতার পর হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আলাদা দুটি মামলার বিচার শুরু হয় একসাথে। বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট দুই জায়গাতেই হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে। এখন অপেক্ষা, আপিল বিভাগে চুড়ান্ত আইনি লড়াইয়ের। তবে ১৫ বছরেও নিম্ন আদালতে সুরাহা হয়নি বিস্ফোরক আইনে করা মামলাটি। তাই হত্যা ও বিদ্রোহ মামলায় খালাস মিললেও কারাগার থেকে বের হতে পারছেন না দুই শতাধিক আসামি। এ মামলায় আপিল দ্রুত শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করে চুড়ান্ত নিষ্পত্তির দাবি জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধান বিচারপতির কাছে আমাদের আকুল আবেদন, এ নিরীহ আসামিদের দিক বিবেচনা করে এবং উভয় দিক বিবেচনা করে এই মামলার শুনানি কার্যক্রম যদি দ্রুত নিষ্পত্তি হয় তাহলে আমার মনে হয় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, আপিল বিভাগে বিচারক সংকটের কারণে মামলা শুরু করতে পারছেন রাষ্ট্রপক্ষ। জানান, ১৩৯ জনের ফাঁসি বহালের পাশাপাশি যাদের সাজা কমানো হয়েছে সে বিষয়েও শক্ত অবস্থান নেবে রাষ্ট্রপক্ষ। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, সরকার পক্ষ থেকে আমরা আশা করছি যে ট্রায়েল কোর্ট যাদেরকে মৃত্যুদন্ডাদেশ দিয়েছে এবং যাদেরকে হাইকোর্ট কনফার্ম করেছে বা মৃত্যুদন্ডা বহাল রেখেছে সেটা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকবে। তিনি আরও বলেন, কিন্তু এই মুহূর্তে পর্যাপ্ত বিচারক নেই। আশা করা যাচ্ছে বিচারক এলে আলাদা বেঞ্চ করতে হবে। কারণ এটি শুনানির একসাথে শুনতেই পারবে না। তাছাড়া একটানা শুনেও যদি শুনানি করেন তাহলে ২ মাস সময় লেগে যেতে পারে। তবে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা নিয়ে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য দিলেন, দুপক্ষের আইনজীবী। আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, উচ্চ আদালতে না হয় বিচারক সংকট আছে কিন্তু নিম্ন আদালতে তো বিচারক সংকট নেই। কিন্তু নিম্ন আদালতের মামলা আজ ১৫ বছর ধরে ট্রায়েল চলছে। এ বিষয়ে তো রাষ্ট্রপক্ষের একটা ব্যাখ্যা থাকা উচিত। অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, এতজন আসামি তাদের উকিল কতজন। একজন আসামিকে যদি একশজন জেরা করে তাহলে কত সময় লাগে? সময় তো আমাদের জন্য না, সময় লাগছে তাদের জন্যই। নৃশংস এই ঘটনায় করা দুই মামলায় আসামি আছেন ৮৫০ জন। এ ছাড়া বাহিনীর নিজস্ব আইনে ৫৭টি মামলায় প্রায় ৬ হাজার জন বিচারের মুখোমুখি হয়।
https://www.kaabait.com