আর মাত্র কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল আযহা। আর তাই ঈদের আগেই দর্শনার্থীদের জন্য নতুন রূপে প্রস্তুত করা হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে পরিচালিত পিকনিক স্পট রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটিকে।
প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আযহার দিন থেকে শুরু করে পরবর্তী অন্তত ১৫ দিন দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে এ পর্যটন কেন্দ্রটি। ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে একটু বিনোদন আর আনন্দ উপভোগের জন্য দর্শনার্থীরা সদলবলে ভিড় জমান এখানে। বিশেষ করে পর্যটন কেন্দ্রটির কোলঘেঁষে প্রবহমান ইছামতি নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন বারবার কাছে টানে পর্যটকদের। পড়ন্ত বিকেলে ইছামতির পানিতে অস্তমিত রক্তিম সূর্যের আলোর ঝলকানি, নদীর তীরে প্রিয়জনের সাথে রোমাঞ্চকর কিছু সময় কাটানো, ইচ্ছে হলেই প্রিয়জনকে সাথে নিয়ে নদীর বুকে নৌকায় ভেসে বেড়ানো, ট্রেইল বেঁয়ে প্রিয়জনের হাতে হাত রেখে ম্যানগ্রোভ বনের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো, সন্ধ্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে আবাসস্থলে ফেরা নানা প্রজাতির পাখির কলকাকলি, আর ভাটির টানে নদীর পানি কমে গেলে ইছামতির বুকে জেগে ওঠা বিস্তৃর্ণ বালু চরে ছুটে বেড়ানো অনেকটা সমুদ্র সৈকতের মতো অনুভূতির সঞ্চার করে সব বয়সের মানুষের মনে, তাতেই যেন বিমোহিত হয়ে এ পর্যটন কেন্দ্রটির প্রেমে পড়েন দর্শনার্থীরা।
এতো গেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দর্শনার্থীদের পছন্দ আর প্রত্যশাকে প্রধান্য দিয়ে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের বাড়তি সৌন্দর্য ফুঁটিয়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা ও দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন। তাইতো জেলা শহর থেকে ২৫ কিঃমিঃ দুরের এ পর্যটন কেন্দ্রে ২০ বিঘা জমিতে অনামিকা লেক, শিশুদের জন্য বঙ্গবন্ধু শিশু পার্ক ও মিনি চিড়িয়াখানা, সভা-সমাবেশের জন্য কনফারেন্স রুম, ফটোসেশনের জন্য আকর্ষনীয় ও ব্যতিক্রমী একাধিক সেলফি পয়েন্ট, লেকের পানিতে প্যাডেল বোট, কফিশপ, নানা ধরনের কৃত্রিম জীবযন্তু, ঘোড়ার গাড়ি, রাত্রিযাপনের জন্য কটেজ ইত্যাদির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, সীমান্ত এলাকা হওয়া স্বত্তে¡ও ইতোমধ্যেই বিদ্যুতায়নের পাশাপাশি সেখানে পৌঁছেছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা নামাজের স্থান, ওয়াশ ব্লক এমনকি দর্শনার্থীদের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থাও এখানে রেখেছে দেবহাটা উপজেলা প্রশাসন।
আর ঈদ কিংবা অন্যকোন উৎসব এলেই আলোকসজ্জা সহ নানা আয়োজনে পর্যটন কেন্দ্রটিকে দর্শনার্থীদের জন্য সাজিয়ে তুলতে মোটেও কালবিলম্ব করেননা কর্তৃপক্ষ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ইতোমধ্যেই রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রকে নতুন রূপে সাজাতে তোড়জোড় শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ‘প্রতিবছরের মতো ঈদকে ঘিরে এবারও দর্শানার্থীদের জন্য পর্যটন কেন্দ্রটিকে নতুন রূপে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থানকালীন দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে পরিবার পরিজন নিয়ে একবারের জন্য হলেও রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।’
উল্লেখ্য, নদী ভাঙন রোধের পাশাপাশি সুপার সাইক্লোনের তান্ডব থেকে এ জনপদকে রক্ষায় ২০১০ সালের দিকে দেবহাটা উপজেলার শিবনগরে বাংলাদেশ-ভারতের আর্ন্তজাতিক সীমানা নির্ধারনী ইছামতি নদীর অববাহিকায় সারি সারি সুন্দরী, কেওড়া, গরান, গেওয়া ও গোলপাতা সহ নানা প্রজাতির বনজ বৃক্ষের চারা রোপনের মধ্যদিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনের আদলে কৃত্রিম এ বনটি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছিলেন তৎকালিন ইউএনও বর্তমান ক্রীড়া পরিদপ্তরের পরিচালক উপসচিব আ.ন.ম তরিকুল ইসলাম। পরে সাতক্ষীরার পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধকরণের পরিকল্পনায় এ বনাঞ্চলকে আধুনিকায়নের মাধ্যমে রূপসী ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়। তৎপরবর্তী সময়ে হাফিজ আল আসাদ ও এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী দেবহাটাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকাকালেও এ পর্যটন কেন্দ্রটির উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে নিরালস কাজ করেছেন। তাছাড়া বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামানও যোগদানের পর থেকে এটিকে আরও আধুনিকায়ন করে দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষনীয় করে তুলতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছেন।