শেখ আব্দুল গফুর, কপিলমুনি (খুলনা) অফিস: কপোতাক্ষির অববাহিকায় লালিত দক্ষিণ বাংলার সংস্কৃতি চর্চার পাদপীঠ
হিন্দু মুসলিম সহবস্থানের প্রাচীন জনপদ কপিলমুনিতে এবার ৪ শত বছরেরঐতিহ্যবাহী মহা বারুনী মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ মেলাকে ঘিরে রয়েছে নানা ইতিহাস ও নানা কাহিনী। ঐতিহ্যবাহী এ বারুনী মেলা কপিলমুনির সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধতায় ভরে দিয়েছে। এ মেলার প্রতি শুধু বর্ধিষ্ণু জনপদ কপিলমুনি নয় আশপাশের বিভিন্ন জেলার সংস্কৃতিমনা মানুষের রয়েছে এক দুর্নিবার আকর্ষণ। পক্ষ কাল ব্যাপী এ মেলাকে ঘিরে সার্কাস, যাদু, পুতুলনাচ সহ বসে যাত্রাপালার আসর। আর মনোহরী দোকানের পাশাপশি বাহারী মিষ্টান্ন দ্রব্য ও মোয়া-মুড়কির পসরা বসে।
বসে কাঠ, বাশ ও বেঁতের নানা গৃহস্থলী সামগ্রীর দোকান ও বইয়ের স্টল। অত্যন্ত মনোরম পরিবেশে আয়োজিত হওয়ায় মেলাটি মুগ্ধতায় ভরে ওঠে। নানা জটিলতা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দুর্বিপাকের কারণে সর্বশেষ ২০১৪ সালের পর অর্থাৎ প্রায় ১০ বছর যাবৎ কপিলমুনিতে মেলা বসেনি। তাই হারিয়ে যাওয়া এ মেলাকে প্রায় ভুলতে বসেছিল কপিলমুনিবাসী। তবে
স্থানীয় এমপি মোঃ রশীদুজ্জামানের আন্তরিকতায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মেলাকে ঘিরে আমেজ সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে। জানাযায়, কোন এক চৈত্র মাসের মধুকৃৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে শতভিষা নক্ষত্র যোগে মহামুনি কপিলদেব কপিলমুনির কপোতাক্ষ ঘাটে সাধনায় মা গঙ্গার সাক্ষাৎ পেয়ে সিদ্ধি লাভ করেন। এ কারণে তাঁর সিদ্ধিলাভের দিনটিকে স্মরণ রাখতে ও নিজেকে পাপ মুক্ত করতে ধর্ম প্রাণ সনাতন ভক্তরা কপোতাক্ষ নদের কপিলমুনি নামক স্থানের কালীবাড়ী ঘাটে ১ হাজার বছর ধরে গঙ্গা স্নান বা বারুণী
স্নান করে পুত-পবিত্র হয়ে উৎসব পালন করে আসছেন। তবে এ উপলক্ষ্যে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৪ শত বছর ধরে। আগামী ৬ এপ্রিল শনিবার ৭ টা ৫৩ মিনিটে শতভিষা নক্ষত্র যোগে কালীবাড়ী ঘাটে স্নান শুরু হবে। আর ওইদিন দুপুর ১ টা ৫০ মিনিটে স্নান শেষ হবে। প্রবাদ আছে, মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে গঙ্গার পবিত্র জল এই স্থানে প্রবাহিত হয়। বরুণ জলের দেবতা, বরুণের স্ত্রী বারুণী, বারুণী আর এক নাম গঙ্গা। তাই বারুণী স্নান মানেই গঙ্গা স্নান। অতীত ঐতিহ্য সমুন্নত রাখতে তাই আয়োজক
কমিটি এবারও মহা বারুণীর পূণ্যস্নানের অয়োজন করেছেন।মেলা কমিটির পরিচালক ও কপিলমুনি বণিক সমিতির সদস্য সচিব এম মাহমুদ আসলাম বলেন, সেই স্মরণাতীত কাল থেকে কপিলমুনিতে বারুণী হয়ে থাকে। সকল শ্রেণীর মানুষ মেলা উপভোগ করে থাকেন। কিন্তু ১০ বছর যাবৎ মেলা না হওয়ায় এ জনপদের মানুষ বিনোদন থেকে বঞ্চিত হয়। তবে এ বছর এমপি মোঃ রশীদুজ্জামানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বারুনী মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
সুষ্ঠুভাবে মেলা অনুষ্ঠানের জন্য প্রশাসন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সুধীমহলের সহযোগীতা কামনা করছি। মেলা কমিটির সভাপতি ও কালী মন্দিরের সভাপতি শ্রী চম্পক কুমার পাল বলেন, বারুনী মেলা আমাদের ঐতিহ্য, মেলা অনুষ্ঠানের জন্য এমপি রশীদুজ্জামান সর্বাত্মক সহযোগীতা করছেন। বারুনী মেলা সকল শ্রেণীর মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হোক এটা আমার প্রত্যাশা।
https://www.kaabait.com