স্পোর্টস: ম্যাচ শেষ হতেই এনামুল হকের মুখে ফুটে উঠল চওড়া হাসি। ডাগআউটে সবাইকে আলিঙ্গনে জড়ালেন তিনি, ‘হাই ফাইভ’ করলেন কয়েকজনের সঙ্গে। তিনি নিজে আউট হয়েছেন প্রথম বলে। তবু তিনি হাসতে পারছেন, কোচিং স্টাফের সবার মুখেও হাসি। অবশেষে যে জিতেছে দল! ঢাকার ডাগআউট তখন সেই চেনা চেহারাতেই। সেখানে সবার মুখই শুকনো। পরাজয়ের ধারায় ছিল দুই দলই। নতুন বলে সুইং বোলিংয়ে ভিত গড়ে দিলেন ওয়েইন পার্নেল। পরে দুর্দান্ত বোলিং করলেন মুকিদুল ইসলাম। রান তাড়ায় পারভেজ হোসেন ইমন ও আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে এলো ঝড়ো দুটি ইনিংস। ৫ উইকেটের জয়ে প্লে অফের লড়াইয়ে নিজেদের অস্তিত্ব আবার জানান দিল খুলনা টাইগার্স। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শুক্রবার পার্নেল শিকার করেন ১৯ রানে ৩ উইকেট, মুকিদুল ১৮ রানে ৩টি। দুর্দান্ত ঢাকার ইনিংস থমকে যায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৮ রানে। খুলনা টাইগার্স জিতে যায় ২৮ বল বাকি রাখতেই। টানা চার জয়ে আসর শুরু করা খুলনা পঞ্চম জয়ের দেখা পেল টানা পাঁচ ম্যাচ হারার পর। জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা ঢাকার রেকর্ড পরাজয় যাত্রা পৌঁছে গেল দুই অঙ্কে। টানা ১০ ম্যাচে হার! টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকার প্রথম দুই ওভার ছিল নিস্তরঙ্গ। তৃতীয় ওভারে নাহিদুল ইসলামকে ছক্কা ও চার মেরে জ¦লে ওঠার ইঙ্গিত দেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যাডাম রসিংটন। পরের ওভারেই আরেকপ্রান্তে পার্নেলের ছোবল। মোহাম্মদ নাঈম শেখকে (১১ বলে ৫) এলবিডবিøউ করে দেওয়ার পরের বলেই ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন সাইফ হাসানকে (০)। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফিরিয়ে দেন তিনি রসিংটনকেও (১২ বলে ১৮)। ২৭ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন অ্যালেক্স রস ও ইরফান শুক্কর। তবে শুরুতে ধুঁকছিলেন দুজনই। প্রথম রানটি করতেই ৯ বল খেলেন ইরফান। রসের রান একপর্যায়ে ছিল ২১ বলে ৮। সেখান থেকে একটু জেগে উঠে অভিষিক্তি বাঁহাতি স্পিনার আরিফ আহমেদের এক ওভারে একটি ছক্কা দুটি চার মারেন ইরফান। পরে আরিফকেই চার ও ছক্কা মারেন রস। কিন্তু দুজনের কেউই পুষিয়ে দিতে পারেননি ঘাটতি। ২৬ বলে ২৫ রান করে মুকিদুলকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় বিদায় নেন ইরফান। নতুন ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস প্রথম বলেই পুল করে ধরা পড়েন সীমানায়। হতাশায় ব্যাটে ভর নিয়ে নুইয়ে থাকেন তিনি কিছুক্ষণ। আগের ম্যাচে ৪৯ বলে ৮৯ করা রস এবার ৩৫ বল খেলে করতে পারেন কেবল ২৫ রান। েেমাসাদ্দেক হোসেনের শুরুটাও ছিল মন্থর। পরে একটু বাড়ান রানের গতি। ২৩ বলে ২৬ করে শেষ ওভারে নাহিদুলের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন তিনি। চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার ২ ছক্কায় ১৩০ রানের কাছে যেতে পারে ঢাকা। রান তাড়ায় প্রথম বলেই ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে তেড়েফুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন এনামুল। কিন্তু ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে তার লেগ স্টাম্প নাড়িয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে বিপজ্জনক এভিন লুইসকেও বিদায় করেন এই বাঁহাতি পেসার। এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি অনেক আগে থেকেই। এই ম্যাচে তার উইকেট পূর্ণ হলো ২০টি। তবে সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে জোড়া ধাক্কার চাপ উড়িয়ে দেন পারভেজ হোসেন। একাদশে ফেরা তরুণ ব্যাটসম্যান ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তাসকিন আহমেদকে ছক্কা ও চার মেরে বার্তা দিয়ে দেন। পরে বিশাল এক ছক্কায় ওড়ান তিনি শরিফুলকেও। অস্ট্রেলিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ শেষ করে ফেরা শেই হোপ কার্যকর ব্যাটিংয়ে গড়ে তোলেন জুটি। ইনিংস অবশ্য বড় করতে পারেননি কেউই। চাতুরাঙ্গাকে টানা দুটি ছক্কার পর আরেকটির চেষ্টায় আউট হয়ে যান পারভেজ। ৪ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে ৪০ রান। তাসকিনকে ছক্কায় ওড়ানোর পর ¯েøায়ার বলে ক্যাচ হয়ে যান হোপ (২৮ বলে ৩২)। তবে আফিফ ছিলেন বলেই চাপে পড়তে হয়নি খুলনা। আলাউদ্দিন বাবুর এক ওভারে দুই ছক্কার পর তিনি মোসাদ্দেকের এক ওভারে মারেন দুটি চার দুটি ছক্কা। দলকে জিতিয়ে ২১ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত রয়ে যান তিনি। এবারের আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪১ করেছিলেন তিনি। দশম ম্যাচে এসে ছাড়িয়ে যেতে পারলেন সেই স্কোরকে। দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের সেরা অবশ্য ওয়েইন পার্নেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দুর্দান্ত ঢাকা: ২০ ওভারে ১২৮/৭ (নাঈম শেখ ৫, রসিংটন ১৮, সাইফ ০, রস ২৫, ইরফান ২৫, উইলিয়ামস ০, মোসাদ্দেক ২৬, চাতুরাঙ্গা ১৭*, আলাউদ্দিন ২*; নাহিদুল ৪-০-২৮-০, পার্নেল ৪-১-১৯-৩, আরিফ ৪-০-৪১-০, টম্স ৪-০-১৮-০, মুকিদুল ৪-০-১৮-৩)।
খুলনা টাইগার্স: ১৫.২ ওভারে ১৩১/৫ (লুইস ৪, এনামুল ০, পারভেজ ৪০, হোপ ৩২, আফিফ ৪৩*, জয় ২, পার্নেল ৫*; শরিফুল ৩.২-০-১৭-২, তাসকিন ৪-০-২৭-২, চাতুরাঙ্গা ৪-০-৩৫-১, মোসাদ্দেক ৩-০-৩৬-০, আলাউদ্দিন ১-০-১২-০)।
ফল: খুলনা টাইগার্স ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়েইন পার্নেল।
ছবি: ০২
ফের জাতীয় দলের স্পন্সর রবি
এফএনএস স্পোর্টস: মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মূল ফটক দিয়ে ঢুকতেই চোখে পড়ল রঙিন ব্যানার। সামনে এগোতে দেখা মিলল আরও কয়েকটি ব্যানারের, যেগুলো ধাবমান মূল মাঠের দিকে। মাঠের সবুজ গালিচায় গড়ে তোলা হয়েছে লাল মঞ্চ। সেখানেই ছোট্ট এক বর্ণিল আয়োজনে ঘোষণা করা হলো, জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন পৃষ্টপোষক টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান রবি আজিয়াটা লিমিটেড। সেই প্রতিষ্ঠান, সাড়ে ৫ বছর আগে যারা চুক্তি শেষের আগেই এই জায়গা থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। নতুন করে আবার তারা ফিরে এসেছে ক্রিকেটে। এই ফেব্রæয়ারি থেকে ২০২৭ সালের জুলাই পর্যন্ত বিসিবির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারা ৫০ কোটি টাকায়। আগের চুক্তির চেয়ে এই অঙ্ক উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম। গত নভেম্বরে ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়ে দারাজের সঙ্গে বিসিবির চুক্তি শেষ হওয়ার পর থেকে স্পন্সর ছিল না জাতীয় দলের। দেশের মাঠে নিউ জিল্যান্ড সিরিজ ও পরে নিউ জিল্যান্ড সফরে কোনো স্পন্সর ছিল না দলের। রবিকে পেয়ে তাই বিসিবিও স্বস্তি পেল যেন। আগের দফায় ২০১৫ সালে জাতীয় দলের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে যাত্রা শুরু হয় রবির। তখন প্রাথমিক চুক্তি ছিল ২০১৭ পর্যন্ত। পরে চুক্তি নবায়ন করে সেটি ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু চুক্তির মেয়াদ ১০ মাস বাকি থাকতেই সরে দাঁড়ায় রবি। দুই পক্ষের সম্পর্কের টানাপোড়েনের গুঞ্জনও ছিল তখন। রবির পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, ‘পৃষ্ঠপোষকতা বিষয়ক চুক্তিটি প্রাসঙ্গিকতা হারানোয়’ তারা সরে দাঁড়িয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত না জানালেও শোনা গিয়েছিল, বিসিবি চুক্তির কিছু শর্ত ঠিকভাবে মানতে পারছে বলে মনে করছে রবি। মূলত সাকিব আল হাসানসহ দেশের তারকা ক্রিকেটারদের কয়েকজনের সঙ্গে অন্যান্য টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিগত চুক্তিকে ঘিরে ছিল টানাপোড়েন। এবার তাই আগেভাগেই সতর্ক বিসিবি। চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরি বলেন, সার্বিক দিক মাথায় রেখেই করা হয়েছে এবারের চুক্তি। “আমি বলব না যে, (প্রথম মেয়াদে) আমাদের মধ্যে কোনো সমস্যা হয়েছিল। আমরা সমঝোতার মাধ্যমে আলাদা হয়েছিলাম। কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনার জায়গা ছিল। সমঝোতার মাধ্যমে সেগুলো সেরে আমরা পরে অন্য পৃষ্ঠপোষকের দিকে যাই।” “রবি আবারও আমাদের সঙ্গে আসায় তাদের ধন্যবাদ ও স্বাগত জানাই। যে বিষয়টা (ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত চুক্তি) বলেছেন, সেগুলো অবশ্যই আমাদের ভাবনায় ছিল। এসব বিবেচনায় রেখেই আমরা নতুন চুক্তিতে যাচ্ছি। আশা করি, এটি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।” প্রথম মেয়াদে শেষটা ভালো না হলেও সামনে বড় কিছুর আশায় আবারও বিসিবির সঙ্গে জোট বাধার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান রবির প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শিহাব আহমেদ। “জাতীয় দল বা বিসিবির সঙ্গে কাজ করা গর্বের ব্যাপার। এই সুযোগের জন্য আমরা সবসময় অপেক্ষা করেছি৷ আগে যে আমরা সরে গিয়েছিলাম, সেটা সমঝোতার মাধ্যমে হয়েছিল। এই পার্টনারশিপের মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু করার সুযোগ দেখেছি আমরা। তাই রবি আবারও আগ্রহ নিয়ে ফিরে এসেছে।” এখনও অবশ্য টেলিকম সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে জাতীয় ক্রিকেটারদের। এই বিষয়ে বিসিবি সিইও জানালেন, নতুন করে আর এমন চুক্তি কররে পারবেন না ক্রিকেটাররা। “সাংঘর্ষিক কোনো ব্র্যান্ডের সঙ্গে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটাররা চুক্তি করতে পারবে না। তবে যেসব ক্রিকেটারদের বর্তমানে চুক্তি রয়েছে, তারা সেটি মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে নিতে পারবে। নতুন করে কেউ সাংঘর্ষিক ব্র্যান্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারবে না।” প্রশ্ন উঠল পৃষ্ঠপোষকতার মূল্য কমে যাওয়া নিয়েও। আগের দফায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান সাহারার সঙ্গে বিতর্কিত চুক্তির পর ২০১৫ সালে রবির সঙ্গে চুক্তি হয় বিসিবির। সেবার অবশ্য একটি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে জিতে পরে রবির হাতে তুলে দেয় স্পন্সরশিপ। আনুষ্ঠানিকভাবে তখন জানানো হয়নি টাকার অঙ্ক। তবে তা দুই বছরের জন্য ৪২ কোটি টাকার আশপাশে ছিল বলে জানা গিয়েছিল নানা সূত্র থেকে। পরে ২০১৭ সালে আবার দুই বছরের জন্য রবি চুক্তি করে ৬৪ কোটি টাকায়। অথচ এবার সাড়ে তিন বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে ৫০ কোটি টাকায়। অন্যান্য আরও অনেক খাত থেকে স্পন্সরশিপের আয় কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে কারণটি তুলে ধরা হয় বিসিবির পক্ষ থেকে, এবারও সেটিই বললেন প্রধান নির্বাহী। “সবকিছু তো আসলে তুলনা করা যায় না (অন্য দেশের সঙ্গে)। আমাদের মনে হয়েছে, এটি ভালো চুক্তি। বর্তমান প্রেক্ষাপট ও অন্যান্য বিষয় মিলিয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। অন্যান্য পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারপর আমাদের মনে হয়েছে, রবির সঙ্গে এই চুক্তিটা আমরা করতে পারি।”
ছবি: ০৩
নিউ জিল্যান্ডের ইতিহাস গড়া জয়
এফএনএস স্পোর্টস: টেস্ট ক্রিকেটের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলির একটি মনে করা হয় চতুর্থ ইনিংসে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিকে। সেই কঠিন কাজটিই যেন সবচেয়ে ভালোবাসেন কেন উইলিয়ামসন। আরও একবার নিজের সেই অনুরাগ আর দক্ষতার প্রমাণ রাখলেন তিনি। অসাধারণ আরেকটি শতকে স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়ে। তার হাত ধরে অনন্য এক সাফল্যের স্বাদ পেল নিউ জিল্যান্ড। উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরিতে হ্যামিল্টন টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭ উইকেটের দারুণ এক জয় পেল নিউ জিল্যান্ড। দুই ম্যাচের সিরিজ তারা জিতে নিল ২-০তে। সেই ১৯৩২ সাল থেকে টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হচ্ছে এই দুই দল। ১৮ বারের চেষ্টায় অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল নিউ জিল্যান্ড। প্রোটিয়াদের অবশ্য দ্বিতীয় সারির দল এটি। এসএ টোয়েন্টিতে ব্যস্ত থাকায় মূল ক্রিকেটারদের প্রায় সবাই অনুপস্থিত এই সফরে। তবে কিউইদের জন্য এটিই ইতিহাস। তাদের টেস্ট ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান এই জয়েরও নায়ক। সেডন পার্কের উইকেটে ছিল অসমান বাউন্স। বল থমকে এসেছে খানিকটা। স্পিনারদের টার্নও মিলেছে বেশ। কিন্তু উইলিয়ামসন ছিলেন বরাবরের মতোই নির্ভরতার প্রতীক। প্রায় নিখুঁত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। ১২ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ২৬০ বলে ১৩৩ রানে। দুর্দান্ত ধারাবাহিকতায় সবশেষ ৭ টেস্টে এটি তার সপ্তম সেঞ্চুরি। ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের টেস্ট সেঞ্চুরি হয়ে গেল মোট ৩২টি। চতুর্থ ইনিংসে তার পঞ্চম সেঞ্চুরি এটি। চতুর্থ ইনিংসের সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির রেকর্ডে তিনি স্পর্শ করলেন পাকিস্তানি গ্রেট ইউনিস খানকে। উইলিয়ামসনের এই পাঁচ সেঞ্চুরির চারটিতেই জিতেছে দল। শেষ ইনিংসে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরির রেকর্ডে তিনি ছুঁয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথকে। ম্যাচের সেরা অবশ্য উইলিয়ামসন নয়। অভিষেকে নিউ জিল্যান্ডের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড গড়ে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচে সেরা হয়েছেন উইলিয়াম ও’রোক। আগের দিন শেষ ওভারে উইকেট হারানো নিউ জিল্যান্ড শুক্রবার দিনের শুরুর দিকে হারায় টম ল্যাথামকে। ২১ রানে দিন শুরু করা ওপেনার ফিরে যান ৩০ রান করে। উইলিয়ামসন যথারীতি সাবলীল ব্যাটিংয়েই শুরু করেন। রাচিন রাভিন্দ্রার সঙ্গে জুটিতে এগিয়ে নেন দলকে। লাঞ্চের একটু পর ৬৪ রানের এই জুটি ভাঙেন ডেইন পিট। এই অফ স্পিনারের তৃতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেন ১২৯ মিনিটে ২০ রান করা রাভিন্দ্রা। এই জুটি ভাঙার পর বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে ওঠেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক নিল ব্রান্ড ও তার সতীর্থরা। কিন্তু এরপর আর কোনো সাফল্য পাননি তারা। উইলিয়ামসন ও উইল ইয়াংয়ের দেড়শ রানের জুটিতেই শেষ হয়ে যায় ম্যাচ। ১১৩ বলে ফিফটি ছুঁয়ে একইরকম আস্থায় এগিয়ে যান উইলিয়ামসন। শতরানে পা রাখেন তিনি ২০৩ বল খেলে। মাইলফলকের পরও একটুও মনোযোগ না হারিয়ে কাজ শেষ করে ফেরেন তিনি। আরেকপাশে দারুণ সঙ্গ দিয়ে যান ইয়াং। ড্যারিল মিচেলের চোটের কারণে সুযোগ পাওয়া ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ৬০ রানে। চতুর্থ উইকেটে দুজনর অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ১৫২ রান। দুই টেস্টে তিন সেঞ্চুরিতে ৪০৩ রান করে সিরিজ সেরার স্বীকৃতি পান উইলিয়ামসন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ২৪২
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২১১
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: ২৩৫
নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ২৬৭, আগের দিন ৪০/১) ৯৪.২ ওভারে ২৬৯/৩ (ল্যাথাম ৩০, কনওয়ে ১৭, উইলিয়ামস ১৩৩*, রাভিন্দ্রা ২০, ইয়াং ৬০*; প্যাটারসন ২২-৫-৫৮-০, মোরেকি ১৮.২-৪-৪৪-০, পিট ৩২-৪-৯৩-৩, ফন বার্গ ১৬-০-৬০-০, দু সুয়াত ৬-৩-৭-০)।
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: ২ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: উইলিয়াম ও’রোক।
ম্যান অব দা সিরিজ: কেন উইলিয়ামসন।
ছবি: ০৪
ডাকেটের সেঞ্চুরিতে জবাব দিলো ইংল্যান্ড
এফএনএস স্পোর্টস: সিরিজের প্রথম দুই টেস্টে ভালো শুরুর পর ইনিংস বড় করতে পারেননি। সেই আক্ষেপ এবার মেটালেন বেন ডাকেট। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের প্রদর্শনী মেলে ধরে রেকর্ড গড়া সেঞ্চুরি উপহার দিলেন বাঁহাতি ওপেনার। ভারতের বড় সংগ্রহের জবাবে ইংল্যান্ড পেল শক্ত ভিত। রাজকোটে তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুক্রবার ভারতের প্রথম ইনিংস থামে ৪৪৫ রানে। দিন শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ ২ উইকেটে ২০৭ রান। ওভারপ্রতি রান তুলেছে তারা ৫.৯১ করে। এখনও ২৩৮ রানে পিছিয়ে আছে সফরকারীরা। সুইপ, রিভার্স সুইপ, সুইচ হিট, প্যাডল- দারুণ সব শটের পসার মেলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিতে ১৩৩ রানে অপরাজিত আছেন ডাকেট। তার ১১৮ বলের ইনিংসে ২১টি চারের পাশে ছক্কা ২টি। সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি ৮৮ বলে। ভারতের বিপক্ষে টেস্টে ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটসম্যানদের দ্রæততম সেঞ্চুরি এটিই। ডাকেট ভেঙে দিয়েছেন গ্রাহাম গুচের প্রায় ২৪ বছরের রেকর্ড। ১৯৯০ সালে লর্ডসে ৩৩৩ রানের ইনিংস খেলার পথে ৯৫ বলে শতক ছুঁয়েছিলেন তখনকার ইংলিশ অধিনায়ক গুচ। ভারতের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ডাকেটের চেয়ে কম বলে সেঞ্চুরি করতে পেরেছেন কেবল দুজন। ১৯৭৪ সালে বেঙ্গালুরুতে ৮৫ বলে সেঞ্চুরি করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্লাইভ লয়েড। ২০০১ সালে মুম্বাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট শতরানে পৌঁছান ৮৪ বলে। ডাকেটের ১৩৩ রানের ১১৪ আসে দিনের শেষ সেশনে। ভারতে এই প্রথম কোনো সফরকারী ব্যাটসম্যান এক সেশনে একশ বা এর বেশি রান করলেন। দ্বিতীয় দিনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ৫০০ উইকেট। দ্বিতীয় ভারতীয় এবং বিশ্বের নবম ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন ৩৭ বছর বয়সী অফ স্পিনার। তার আগে ব্যাট হাতে ৩৭ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৩২৬/৫) ১৩০.৫ ওভারে ৪৪৫ (জাদেজা ১১২, কুলদিপ ৪, জুরেল ৪৬, অশ্বিন ৩৭, বুমরাহ ২৬, সিরাজ ৩*; অ্যান্ডারসন ২৫-৭-৬১-১, উড ২৭.৫-২-১১৪-৪, হার্টলি ৪০-৭-১০৯-১, রুট ১৬-৩-৭০-১, রেহান ২২-২-৮৫-২)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩৫ ওভারে ২০৭/২ (ক্রলি ১৫, ডাকেট ১৩৩*, পোপ ৩৯, রুট ৯*; বুমরাহ ৮-০-৩৪-০, সিরাজ ১০-১-৫৪-১, কুলদিপ ৬-১-৪২-০, অশ্বিন ৭-০-৩৭-১, জাদেজা ৪-০-৩৩-০)
ছবি: ০১
অবশেষে জয় পেল খুলনা
এফএনএস স্পোর্টস: ম্যাচ শেষ হতেই এনামুল হকের মুখে ফুটে উঠল চওড়া হাসি। ডাগআউটে সবাইকে আলিঙ্গনে জড়ালেন তিনি, ‘হাই ফাইভ’ করলেন কয়েকজনের সঙ্গে। তিনি নিজে আউট হয়েছেন প্রথম বলে। তবু তিনি হাসতে পারছেন, কোচিং স্টাফের সবার মুখেও হাসি। অবশেষে যে জিতেছে দল! ঢাকার ডাগআউট তখন সেই চেনা চেহারাতেই। সেখানে সবার মুখই শুকনো। পরাজয়ের ধারায় ছিল দুই দলই। সেই হতাশার ¯্রােতে বাঁধ দিতে পারল খুলনা টাইগার্স। নতুন বলে সুইং বোলিংয়ে ভিত গড়ে দিলেন ওয়েইন পার্নেল। পরে দুর্দান্ত বোলিং করলেন মুকিদুল ইসলাম। রান তাড়ায় পারভেজ হোসেন ইমন ও আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে এলো ঝড়ো দুটি ইনিংস। ৫ উইকেটের জয়ে প্লে অফের লড়াইয়ে নিজেদের অস্তিত্ব আবার জানান দিল খুলনা টাইগার্স। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে শুক্রবার পার্নেল শিকার করেন ১৯ রানে ৩ উইকেট, মুকিদুল ১৮ রানে ৩টি। দুর্দান্ত ঢাকার ইনিংস থমকে যায় ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১২৮ রানে। খুলনা টাইগার্স জিতে যায় ২৮ বল বাকি রাখতেই। টানা চার জয়ে আসর শুরু করা খুলনা পঞ্চম জয়ের দেখা পেল টানা পাঁচ ম্যাচ হারার পর। জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা ঢাকার রেকর্ড পরাজয় যাত্রা পৌঁছে গেল দুই অঙ্কে। টানা ১০ ম্যাচে হার! টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা ঢাকার প্রথম দুই ওভার ছিল নিস্তরঙ্গ। তৃতীয় ওভারে নাহিদুল ইসলামকে ছক্কা ও চার মেরে জ¦লে ওঠার ইঙ্গিত দেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান অ্যাডাম রসিংটন। পরের ওভারেই আরেকপ্রান্তে পার্নেলের ছোবল। মোহাম্মদ নাঈম শেখকে (১১ বলে ৫) এলবিডবিøউ করে দেওয়ার পরের বলেই ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন সাইফ হাসানকে (০)। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ফিরিয়ে দেন তিনি রসিংটনকেও (১২ বলে ১৮)। ২৭ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন অ্যালেক্স রস ও ইরফান শুক্কর। তবে শুরুতে ধুঁকছিলেন দুজনই। প্রথম রানটি করতেই ৯ বল খেলেন ইরফান। রসের রান একপর্যায়ে ছিল ২১ বলে ৮। সেখান থেকে একটু জেগে উঠে অভিষিক্তি বাঁহাতি স্পিনার আরিফ আহমেদের এক ওভারে একটি ছক্কা দুটি চার মারেন ইরফান। পরে আরিফকেই চার ও ছক্কা মারেন রস। কিন্তু দুজনের কেউই পুষিয়ে দিতে পারেননি ঘাটতি। ২৬ বলে ২৫ রান করে মুকিদুলকে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় বিদায় নেন ইরফান। নতুন ব্যাটসম্যান শন উইলিয়ামস প্রথম বলেই পুল করে ধরা পড়েন সীমানায়। হতাশায় ব্যাটে ভর নিয়ে নুইয়ে থাকেন তিনি কিছুক্ষণ। আগের ম্যাচে ৪৯ বলে ৮৯ করা রস এবার ৩৫ বল খেলে করতে পারেন কেবল ২৫ রান। েেমাসাদ্দেক হোসেনের শুরুটাও ছিল মন্থর। পরে একটু বাড়ান রানের গতি। ২৩ বলে ২৬ করে শেষ ওভারে নাহিদুলের দারুণ ক্যাচে বিদায় নেন তিনি। চাতুরাঙ্গা ডি সিলভার ২ ছক্কায় ১৩০ রানের কাছে যেতে পারে ঢাকা। রান তাড়ায় প্রথম বলেই ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে তেড়েফুঁড়ে মারার চেষ্টা করেন এনামুল। কিন্তু ভেতরে ঢোকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে তার লেগ স্টাম্প নাড়িয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। সেই ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগে বিপজ্জনক এভিন লুইসকেও বিদায় করেন এই বাঁহাতি পেসার। এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি অনেক আগে থেকেই। এই ম্যাচে তার উইকেট পূর্ণ হলো ২০টি। তবে সহজাত আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে জোড়া ধাক্কার চাপ উড়িয়ে দেন পারভেজ হোসেন। একাদশে ফেরা তরুণ ব্যাটসম্যান ক্রিজে যাওয়ার পরপরই তাসকিন আহমেদকে ছক্কা ও চার মেরে বার্তা দিয়ে দেন। পরে বিশাল এক ছক্কায় ওড়ান তিনি শরিফুলকেও। অস্ট্রেলিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ শেষ করে ফেরা শেই হোপ কার্যকর ব্যাটিংয়ে গড়ে তোলেন জুটি। ইনিংস অবশ্য বড় করতে পারেননি কেউই। চাতুরাঙ্গাকে টানা দুটি ছক্কার পর আরেকটির চেষ্টায় আউট হয়ে যান পারভেজ। ৪ ছক্কায় তার ব্যাট থেকে আসে ৩০ বলে ৪০ রান। তাসকিনকে ছক্কায় ওড়ানোর পর ¯েøায়ার বলে ক্যাচ হয়ে যান হোপ (২৮ বলে ৩২)। তবে আফিফ ছিলেন বলেই চাপে পড়তে হয়নি খুলনা। আলাউদ্দিন বাবুর এক ওভারে দুই ছক্কার পর তিনি মোসাদ্দেকের এক ওভারে মারেন দুটি চার দুটি ছক্কা। দলকে জিতিয়ে ২১ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত রয়ে যান তিনি। এবারের আসরের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪১ করেছিলেন তিনি। দশম ম্যাচে এসে ছাড়িয়ে যেতে পারলেন সেই স্কোরকে। দারুণ বোলিংয়ে ম্যাচের সেরা অবশ্য ওয়েইন পার্নেল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দুর্দান্ত ঢাকা: ২০ ওভারে ১২৮/৭ (নাঈম শেখ ৫, রসিংটন ১৮, সাইফ ০, রস ২৫, ইরফান ২৫, উইলিয়ামস ০, মোসাদ্দেক ২৬, চাতুরাঙ্গা ১৭*, আলাউদ্দিন ২*; নাহিদুল ৪-০-২৮-০, পার্নেল ৪-১-১৯-৩, আরিফ ৪-০-৪১-০, টম্স ৪-০-১৮-০, মুকিদুল ৪-০-১৮-৩)।
খুলনা টাইগার্স: ১৫.২ ওভারে ১৩১/৫ (লুইস ৪, এনামুল ০, পারভেজ ৪০, হোপ ৩২, আফিফ ৪৩*, জয় ২, পার্নেল ৫*; শরিফুল ৩.২-০-১৭-২, তাসকিন ৪-০-২৭-২, চাতুরাঙ্গা ৪-০-৩৫-১, মোসাদ্দেক ৩-০-৩৬-০, আলাউদ্দিন ১-০-১২-০)।
ফল: খুলনা টাইগার্স ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়েইন পার্নেল।
https://www.kaabait.com