গাজীপুরে আগুনের ঘটনায় ৩২ জন দগ্ধ শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে ৬ জন নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রয়েছে। তবে কারও অবস্থাই শঙ্কামুক্ত নয়। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে দগ্ধদের দেখে এসব মন্তব্য করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। মন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩২ জন ভর্তি রয়েছে। খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। সকালে ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকদের নিয়ে রোগীগুলো দেখেছি। সবার বাজে অবস্থা। সবারই শ্বাসনালীতে বার্ন রয়েছে। এরমধ্যে ৬ জন নিবিড় পর্যবেক্ষণ (আইসিইউ) রয়েছে। তবে কারও অবস্থাই আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। শিশুদের ১০ শতাংশের বেশি হইলেই মেজর হয়ে যায়। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী বারবার ফোন দিয়ে রোগীদের খোঁজখবর নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তাদের চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় নিজে বহন করবেন বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। এদিকে গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে গুরুতর আহত দগ্ধ রোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা নিয়ে বোর্ড সভা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে চিকিৎসকদের সঙ্গে তিনি এ বোর্ড সভা করেন। সভায় রোগীদের শারীরিক অবস্থার বিস্তারিত তথ্য জানেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তাদের মধ্যে কতজন শিশু, কতজনের অবস্থা বেশি গুরুতর, কতজন আইসিইউ, এইসডিও-তে ভর্তি আছে তার খোঁজ নেন ডা. সেন। ভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী উপস্থিত চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, দগ্ধ রোগীদের শারীরিক কষ্ট অনেক। প্রতিটি রোগীকে নিজের পরিবারের সদস্যদের মতো করে চিন্তা করতে হবে। দগ্ধ রোগীদের অনেকেরই অবস্থা অত্যন্ত আশংকাজনক। আমরা কিছু রোগীকে হয়তো বাঁচাতে পারবো না, কিন্তু কোনো রোগীর প্রতি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টার যেন কোনোরকম অবহেলা না থাকে এটি নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ নওয়াজেস খান, অধ্যাপক (রেডিওলোজি) ডা. খলিলুর রহমান, অধ্যাপক (এনেস্থিসিওলজি) ডা. আতিকুল ইসলাম, সহযোগী অধ্যাপক (বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি) ডা. হাসিব রহমান, সহযোগী অধ্যাপক (বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি) ডা.হোসাইন ইমামসহ (ইমু) অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা। উল্লেখ্য, গাজীপুর কালিয়াকৈর টপস্টার এলাকায় ফুলকি দিয়ে ছড়িয়ে যাওয়া গ্যাসের আগুনে ৩৪ জন দগ্ধ হয়ে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন। গত বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে সোলাইমান মোল্লার (৪৫) ৯৫ শতাংশ, মোতালেব হোসেনের (৪৮) ৯৫ শতাংশ, মহিদুলের (২৫) ৯৫ শতাংশ, গোলাম রাব্বীর (১৩) ৯০ শতাংশ, নার্গিসের (২৫) ৯০ শতাংশ, ইয়াছিন আরাফাতের (২১) ৮৫ শতাংশ, লাদেনের (২২) ৮৫ শতাংশ, তায়েবার (৩) ৮০ শতাংশ, মো. সোলাইমানের (৬) ৮০ শতাংশ, আব্দুল কুদ্দুসের (৪৫) ৮০ শতাংশ, কোমেলা খাতুনের (৮০) ৮০ শতাংশ, নিলয়ের (১০) ৮০ শতাংশ, মো. আরিফের (৪০) ৭০ শতাংশ, জহুরুল ইসলাম কুটির (৩২) ৫৮ শতাংশ, মশিউরের (২২) ৫২ শতাংশ, সাদিয়া খাতুনের (১৮) ৫০ শতাংশ, নুরনবীর (৫) ৫০ শতাংশ, কবির হোসেনের (৩০) ৪৫ শতাংশ, মুন্নাফের (১৮) ৪০ শতাংশ, মো. নাঈমের (১৩) ৪০ শতাংশ, লালনের (২৪) ৪০ শতাংশ, নিরবের (৭) ৩২ শতাংশ, রামিছার (৩৬) ৩০ শতাংশ, আজিজুলের (২৪) ৩০ শতাংশ, শিল্পির (৪৫) ২৫ শতাংশ, সুমনের (২৫) ২৫ শতাংশ, তারেক রহমানের (১৮) ২০ শতাংশ, মিরাজের (১৩) ১৫ শতাংশ, মনসুরের (৩০) ১০ শতাংশ, সুফিয়ার (৯) ১০ শতাংশ, শারমিনের (১১) ১০ শতাংশ, রাহিমার (১০) ১০ শতাংশ ও রতনার (৪০) ১০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। বার্ন ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক হোসাইন ইমাম ইমু জানান, গাজিপুর থেকে নারী শিশুসহ ৩৪ জন বার্ন ইনস্টিটিউটে আসেন। তাদের মধ্যে ১৬ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বাকিদের অবস্থাও শঙ্কামুক্ত না। দগ্ধদের মধ্যে পাঁজজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।
https://www.kaabait.com