স্পোর্টস: কম্পাউন্ড ইভেন্টের দেশসেরা আর্চার অসীম কুমার অনেকটা চুপিসারে দেশ ছেড়ে গেছেন। ভাগ্যান্বেষণে তিনি এখন যুক্তরাষ্ট্রে। জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা, প্রাপ্য মূল্যায়ন না পাওয়ার ক্ষোভ আর হতাশায় রোমান সানার অবসরের খবরটা গত পরশু নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একের পর এক শেয়ার করেছেন অসীম। হয়তো তাঁরও মনের অপ্রকাশিত ক্ষোভ, হতাশা এতে প্রকাশ করতে চেয়েছেন তিনি। রোমানেরও আগে যুব কমনওয়েলথ আর্চারিতে সোনা জেতা তামিমুল ইসলাম নীরব থাকেননি, ‘আমরা আর্চাররা তো পেটে-ভাতে খেলা চালিয়ে গেছি। আমার যুব কমনওয়েলথ গেমসের সোনা, সাউথ এশিয়ান গেমসের সোনা, ইসলামিক সলিডারিটি চ্যাম্পিয়নশিপের সোনা, এশিয়া কাপে রুপা, বিশ্বকাপে চতুর্থ—এসবই হলো দেশের জন্য পেটে-ভাতে দিন কাটানোর ফসল।’ রোমানের ক্ষোভ, অভিমানের ঢেউ শুধু আর্চারিতেই নয়, ছড়িয়েছে অন্যান্য খেলার খেলোয়াড়দের মধ্যেও। সাঁতারে দীর্ঘদিনের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মাহফিজুর রহমানের কথা, ‘যে দেশে গুণীর কদর নেই, সে দেশে গুণী জন্মায় না। পারলে অভিমান ভেঙে ফিরে এসো রোমান। দেশের প্রথম অলিম্পিক পদকটা তোমার হাতেই দেখার ইচ্ছা ছিল।’ রোমান সেই সব স্বপ্ন পায়ে মাড়িয়ে জাতীয় দলকে না বলে দিয়েছেন। ফেডারেশন থেকে পাওয়া মাসে তিন হাজার টাকা আর বাংলাদেশ আনসারের ৩০ হাজার টাকা বেতনে এত বড় স্বপ্নের পিছু ধাওয়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন রোমান। নতুন বিয়ে করেছেন, সংসার চালাবেন নাকি তীর-ধনুকে নজর রাখবেন! সাবেক শ্যুটার শারমিন আক্তার বলছিলেন, ‘রোমানের এই সিদ্ধান্ত কেন, এর কারণ কে খুঁজবে? আপনি দেশের জন্য শুধু দিয়েই যাবেন, কিছু আশা করতে পারবেন না! রোমান বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ থেকে পদক আনল, অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করে ইতিহাস গড়ল। কিন্তু এখন নিজের দিকে তাকিয়ে দেখছে ওর জীবিকারই নিশ্চয়তা নেই। এখান থেকে নতুন করে কোন শক্তিবলে সে আরো নতুন সাফল্যের জন্য ঝাঁপাবে? ওর জাতীয় দল ছেড়ে না দিয়ে উপায় কী?’ ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২০১০ এসএ গেমসে জোড়া সোনা জেতা শারমিনের নিজের ক্যারিয়ারেও চড়াই-উতরাই কম নয়, ‘ক্রিকেটের বাইরে আর যত খেলা আছে সবখানেই এই বাস্তবতা। আমি যখন কমনওয়েলথ শ্যুটিং থেকে সোনা জিতে ফিরি, তখন ক্রিকেটে বোধ হয় নিউজিল্যান্ড বা কোনো দলের সঙ্গে সিরিজ জয়ে খেলোয়াড়দের উপহারের বন্যায় ভাসানো হচ্ছে। আমিও একটি অভিনন্দনবার্তা পেয়েছিলাম, সেটিও ফটোকপি হয়ে আমার হাতে যখন পৌঁছে, তখন সেটির মর্ম উদ্ধারই কঠিন হয়ে পড়েছিল!’ এসএ গেমসে সোনাজয়ী সাঁতারু মাহফুজা আক্তারও মানতে পারেন না রোমানের এই পরিণতি, ‘এসএ গেমসের সাফল্যের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ফ্ল্যাট পেয়েছি। কিন্তু এটা অনেকেই পাননি। রোমান ভালো করার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিল, সে হয়তো নিজের মুখে কিছু চায়নি। কিন্তু ফেডারেশন কেন ওর হয়ে বলল না?’ রোমানের নিষেধাজ্ঞা নিয়েও বাড়াবাড়ি হয়েছে বলে মনে করেন মাহফুজা, ‘ওর লঘু পাপে গুরু দÐ হয়েছে। যা হয়েছিল তা ব্যক্তিগত বিষয় ছিল। কিন্তু ফেডারেশন সে জন্য ওর মতো একজন খেলোয়াড়কে এক-দেড় বছর বাইরে রাখতে পারে না।’ ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার ক্ষোভ নিয়ে বলেছেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই না, বললে আবার বেয়াদব হয়ে যাব!’ সিনিয়র শ্যুটার শোভন চৌধুরীর উপলব্ধি হলো, রোমানের ক্রীড়াঙ্গনের কঠিন বাস্তবতাটা দেখিয়েছে আরেকবার, ‘রোমানের মতো একজন নিবেদিত অ্যাথলেটের এই পরিণতি কিছুতেই কাম্য নয়। আমাদের এই ক্রীড়াঙ্গন বদলাতে হবে, এই অ্যাথলেটদের পাশে দাঁড়াতে হবে সবার।’
https://www.kaabait.com