আন্তর্জাতিক: জানুয়ারির শেষ দিকে তালেবানের উদ্যোগে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ১১ দেশের প্রতিনিধি অংশ নিয়েছিলেন। আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে এই সম্মেলনের আয়োজন বলে তালেবান জানিয়েছে। ‘আফগানিস্তান রিজিওনাল কো-অপারেশন ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক সম্মেলনে ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও ইরানের মতো দেশ অংশ নিয়েছে। ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় তালেবান। এর পর থেকে এখনো কোনো দেশের স্বীকৃতি না পেলেও চীন, ইরান, ভারতের মতো দেশগুলো একধরনের সম্পর্ক স্থাপন করেছে। যেমন জানুয়ারির শেষ দিকে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত হিসেবে মাওলাউই আসাদুল্লাহ বিলাল করিমির অ্যাক্রিডিটেশন গ্রহণ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। তবে চীনের দাবি, ক‚টনৈতিক এই অ্যাক্রিডিটেশন তালেবান শাসনকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া নয়। অবশ্য তালেবান ক্ষমতায় যাওয়ার পর আফগানিস্তান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে। আলজাজিরা জানিয়েছে, ২০২৩ সালে চীনের কয়েকটি কম্পানি তালেবানের সঙ্গে ব্যাবসায়িক চুক্তি করেছে। এর মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদি একটি তেল চুক্তি রয়েছে। এর আওতায় প্রথম বছরে ১৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে চীন। পরবর্তী তিন বছরে তা ৫৪০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এদিকে তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে ইরান ক‚টনীতিবিদ হাসান কাজেমি কমিকে আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও অত্র অঞ্চলের লাভের জন্য তালেবানের সঙ্গে যোগাযোগ জরুরি বলে মনে করে ইরান। ভারতের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রায় একই। তারা আফগানিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রæপের (আইসিজি) এক প্রতিবেদন বলছে, আফগানিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলো কাবুলের শাসকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পক্ষে। ওই অঞ্চলের ক‚টনীতিক আইসিজিকে বলেছেন, ‘আমরা তালেবান সম্পর্কে পশ্চিমা বিশ্বের মনোভাব পরিবর্তনের অপেক্ষায় থাকতে পারি না, কারণ আমরা ফ্রন্টলাইনে আছি।’ ইনডিপেপেনডেন্ট থিংকট্যাংক আফগানিস্তান অ্যানালিস্টস নেটওয়ার্কের সহপ্রতিষ্ঠাতা থমাস রুটিগ মনে করেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব হলে তা তালেবানের জন্য বিজয় হবে। তিনি বলেন, নারী অধিকারসহ তালেবানের নানা নিপীড়নমূলক নীতির কারণে পশ্চিমের সঙ্গে যোগাযোগ অনেক কঠিন হবে। ‘তাই তালেবান এখন অন্য অঞ্চলের দেশগুলোর দিকে নজর দিচ্ছে। কারণ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সহজ মনে হচ্ছে।’ আইসিজির প্রতিবেদন বলছে, সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে আদর্শিক মিল খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে না। এর পরিবর্তে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার মতো ভ‚-রাজনৈতিক স্বার্থ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। রুটিগ বলেন, মধ্য এশিয়ার দেশ থেকে শুরু করে চীন, ইরানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো সন্ত্রাসবাদ দমন। সন্ত্রাসী সংগঠন ‘ইসলামিক স্টেট অব খোরাসান প্রভিন্স’ হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ায় ওই দেশগুলো তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। আন্তর্জাতিক সহায়তা ছাড়া সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়া কতটা কঠিন তা পাকিস্তানের দিকে তাকালে বোঝা যায়। দ্য ডিপ্লোম্যাট ম্যাগাজিন বলছে, তালেবান ক্ষমতায় আসার পর পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলা অনেক বেড়েছে। ২০২৩ সালে হামলা বেড়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এসব হামলায় প্রায় ৯৭০ জন প্রাণ হারিয়েছে। তালেবান এখনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পাকিস্তানকে রাজনৈতিক চাপ দিতে তালেবান এমন করতে পারে। দ্য ডিপ্লোম্যাট মনে করছে, তালেবান নিষ্ক্রিয় থাকায় পাকিস্তান তার দেশে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে দেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তবে এসবের মধ্যেও আফগানিস্তান ও পাকিস্তান নতুন রুট খোলাসহ অর্থনৈতিক বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ দূত টোমাস নিকলাসন তালেবানের আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। কয়েক দশকের যুদ্ধের পর এটি ‘প্রয়োজন’ বলে মনে করছেন তিনি।
https://www.kaabait.com