প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ গঠনে সততা ও সাহসিকতার সাথে পেশাগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে জনগণ এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তা বিধানে শান্তি বজায় রাখতে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আপনাদের বলবো আমাদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সকলকে কঠোর পরিশ্রম ও সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে ‘বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪৪তম জাতীয় সমবেশ -২০২৪’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ বাহিনী হিসেবে আপনাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন। জননিরাপত্তা রক্ষায় যেকোন অশুভ তৎপরতার মোকাবিলা করতে হবে এবং সততা, সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে আপনারা সেটা রুখে দাঁড়াবেন। তিনি বলেন, জনগণও বিনিয়োগের শন্তিপূর্ণ পরিবেশ ধরে রাখা আপনাদের পবিত্র দায়িত্ব। দেশের সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা ও অর্থনৈতিক পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা। সেই পরিবেশ রক্ষার জন্য সকলকে অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় যেকোন প্রয়োজনে আনসার বাহিনীর সদস্যদের আহবান করা হয় এবং তারা দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন দূতাবাস থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আমাদের আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩, ১৪ এবং ২০২৩ সালে আমাদের বিরুদ্ধে যখন অগ্নি সন্ত্রাস, রেলে আগুন দেয়া, রেল লাইন কেটে ফেলা,মানুষকে হত্যা করাসহ বিএনপি জামাত যে ধ্বংসাত্মক কাজ করেছিল তখন জাতীয় নিরাপত্তা বিধানে আনসার বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে। এজন্য আমি সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। সরকার প্রধান বলেন, ’৯৬ সালে প্রথম সরকারে আসার পর থেকেই এই বাহিনীর উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যার ফলে আজকে এই বাহিনী শুধু দেশে নয়, বিদেশেও সুনাম অর্জন করে যাচ্ছে। আমাদের এই বাহিনী গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত কাজ করে থাকেন। আমরা গ্রাম উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নিয়েছি। ‘আমার গ্রাম আমার শহর’, ‘আমার বাড়ি আমার খামার’, এরকম প্রতিটি ক্ষেত্রেই আনসার বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। তাছাড়া যে কোন দুর্যোগ দূর্বিপাকে আনসার বাহিনীর সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের সহযোগিতা করে। কখনো ঝড়, বন্যা বা অগ্নিকা- ঘটে এরকম যে কোন ঘটনায় আমরা দেখেছি আমাদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেন। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য ৬১ লাখ। দুটি নারী ব্যাটালিয়ানসহ এতে ৪২টি ব্যাটালিয়ান রয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা পার্বত্য এলাকায় শান্তিশৃংখলা রক্ষায় এবং দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘অপারেশন উত্তোরণ’এ দেশের স্বাধীনতা ও স্¦ার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন,তাঁর সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে, অববকাঠামোর উন্নয়ন করেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আত্মবিশ^াস গড়ে উঠেছে। যেটা তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল। কারণ আত্মবিশ^াস ছাড়া কোন জাঁতি এগিয়ে যেতে পারেনা। আর সেটা তাঁর সরকার আজকে করতে পেরেছে। যে কোন অবস্থা মোকাবিলা করার মত সক্ষমতা আছে আমাদের। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক এবং আনসার ও ভিডিপি একাডেমির কমান্ড্যান্ট মো. নুরুল হাসান ফরিদী অনসার একাডেমীর অনুষ্ঠানস্থলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৮০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যের মাঝে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পদক বিতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী খোলা জিপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ প্রত্যক্ষ করেন। সুসজ্জিত প্যারেড তাঁকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। পরে তিনি কোরিওগ্রাফি এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। আনসার বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭ কোটি মানুষের এই দেশে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করা, তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটানোর পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করাই সরকারের কাজ। তিনি বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের হাত থেকে আমরা দেশকে রক্ষা করতে চাই। দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান সবসময় অব্যাহত থাকবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের আনসার বাহিনীর সদস্যরা অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছেন এবং আগামীতেও করে যাবেন। ইতোমধ্যে তাঁর সরকার আনসার বাহিনীর কল্যাণে পুরাতন আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আনসার ব্যাটালিয়ন আইন-২০২৩’ পাশ করা হয়েছে। সেখানে চাকরির শুরু থেকেই স্থায়ীকরণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বার্ষিক সম্মানি ভাতা বৃদ্ধি, রেশন বৃদ্ধি,নারী সদস্যদের পোষাক পরিচ্ছদ পরিবর্তনসহ বাহিনীর আধুিনকায়নে তাঁর সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকার প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ২০০৮ থেকে টানা সরকার পরিচালনার দায়িৎ¦ পাওয়ায় বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়ে আসতে পেরেছি। ২০২৬ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের কার্যক্রম শুরু হবে। তখন আমাদের আরো আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যেতে হবে। ২০৪১ সালে যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো সেখানে আমাদের প্রত্যেকটি বাহিনী বিশেষ করে আনসার বাহিনীও সেভাবেই স্মার্ট বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠবে এবং দেশের উন্নয়নের সাথে একাত্ম হয়ে কাজ করে যাবে। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নিরাপদ করতে চাই। আমাদের গ্রামগুলোও স্মার্ট গ্রাম হিসেবেই গড়ে উঠবে। সেখানে কোন মানুষ দরিদ্র থাকবেনা, ভ’মিহীন-গৃহহীণ থাকবে না, আমরা ইতোমধ্যে প্রতিটি ভ’মিহীন-গৃহহীণ মানুষকে ঘর করে দিচ্ছি। তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি। ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে আনসার বাহিনীর বলিষ্ঠ অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় যথেষ্ঠ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে থাকেন। ‘বাংলাদেশ গেমস’ এ পরপর পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং এই বাহিনীতে একটি ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের কার্যক্রমও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। কারণ সরকার চায় এখান থেকে উদীয়মান এবং খ্যাতিমান ক্রীড়াবিদ তৈরী হবে। তারা যেন দেশের জন্য আরো সুনাম বয়ে আনতে পারে সে পদক্ষেপও সরকার নেবে। তিনি বলেন, গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাÐ যেন অব্যাহত থাকে তারও ব্যবস্থা করতে চাই। কারণ মানুষের পেটের ভাতের সাথে সাথে তাদের মনোরঞ্জণের ব্যবস্থা করা এবং খেলাধূলা, শরিরচর্চার মাধ্যমে শিশুদের ছোটবেলা থেকেই গড়ে তোলাও আমাদের লক্ষ্য। ভাষা আন্দোলনের এই মাসে আনসার কমান্ডার আবদুল জব্বারসহ ভাষা আন্দোলনের সকল শহীদদের তিনি শ্রদ্ধভরে স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে ৬৭০ জন আনসার সদস্যের আত্মাহুতিকে এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন মুজিনগরে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের সময় তাদের উপস্থিতি ও বাংলাদেশের প্রথম সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদানেও আনসার বাহিনীর সদস্যদের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতার আহবানে বহুত্যাগের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট করে গড়ে তোলার মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মানে তাঁর সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
ছবি: ০৫
ব্যাংকে আমানত বাড়ছে, কেটে যাচ্ছে তারল্যের সংকট
এফএনএস অর্থনীতি: ব্যাংক খাতের আমানত বাড়ছে। কেটে যাচ্ছে তারল্য সংকট। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংক খাতে আমানত দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৫৪ হাজার কোটি টাকা-যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণের সুদ বাড়ার কারণে আমানতের সুদ হার বেড়ে গেছে। আর আমানতের সুদ হার বাড়ার কারণে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন সুদ আয়-নির্ভর আমানতকারীরা। ব্যাংকের এমডিরা বলছেন, সুদ হার নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি প্রচলনের পর এর প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্মার্ট রেট (ছয় মাসের ট্রেজারি-বিল বন্ডের গড় রেটের) অনুযায়ী সুদ হার বাড়ানো হচ্ছে। চলতি ফেব্রæয়ারি মাসের জন্য ব্যাংকের বিনিয়োগে (ঋণে) সর্বোচ্চ সুদ হার ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেঁধে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে তারল্য সংকটে থাকা ইসলামি ব্যাংক আরও প্রতিযোগিতামূলক হারে সর্বোচ্চ ১১ থেকে ১২ শতাংশ মুনাফায় আমানত নিচ্ছে। আমানতে প্রবৃদ্ধির যা অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে এক বছরের বেশি সময় ধরে আমানতের সুদ হার ছিল মূল্যস্ফীতি হারের চেয়ে নিম্ন। জানা গেছে, যেসব ব্যাংকের বাধ্যতামূলক জমা সঞ্চিতির অনুপাত অপ্রতুল- তাদের নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) ও বিধিবদ্ধ জমার অনুপাত (স্ট্যাটুটরি লিকুইডিটি রেশিও বা এসএলআর) কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা উচ্চ সুদ হার দিয়ে আমানত আকৃষ্ট করতে হচ্ছে। এতেই সুফল পাচ্ছেন সঞ্চয়কারীরা। যদিও এর আগে এক বছরের বেশি সময় ধরে আমানতের সুদ হার ছিল মূল্যস্ফীতি হারের চেয়ে নিম্ন। জানা গেছে, তারল্য সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো এখন তুলনামূলক বেশি সুদে আমানত নিচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদে আমানত নিচ্ছে। এর ফলে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা ব্যাংকে ফিরতে শুরু করেছে। বেসরকারি পদ্মা ব্যাংক মেয়াদি আমানত নিচ্ছে ১০ শতাংশের বেশি সুদে। ন্যাশনাল ব্যাংক বিশেষ সঞ্চয় স্কিমে সাড়ে পাঁচ বছরে দ্বিগুণ তথা ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। শরিয়াহভিত্তিক সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক তিন বছর মেয়াদি আমানত রাখলে দিচ্ছে সাড়ে ৯ শতাংশ মুনাফা। সংকটে থাকা কোনো কোনো ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি সুদ দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এ হার গত ২৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আমানত প্রবৃদ্ধির হার ১১ দশমিক ২৬ শতাংশে পৌঁছেছিল। এ প্রসঙ্গে এবিবি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানবলেন, ‘ব্যালেন্স শিট শক্তিশালী করতে ব্যাংকগুলো সাধারণত বছরের শেষ দিকে এসে আমানত বৃদ্ধির লক্ষ্যে জোরেশোরে প্রচারণা চালায়। এবারও সেটা হয়েছে। এ ছাড়া সুদের হার বেড়েছে। আমানতকারীরাও ব্যাংকে সঞ্চয় করাকেই বেছে নিয়েছেন। এতে আমানত বেড়েছে।’ প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের এপ্রিলে ঋণের সুদ হারে এক অঙ্কের যে সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহারের পরেই আমানতে সুদের হার বাড়তে শুরু করে। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ঋণের সুদ হারে সীমা তুলে নেওয়ায় আমানতের সুদ হার বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘পলিসি রেট (নীতি সুদ হার) বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের সুদ হার বেড়েছে। যদিও এখনও মূল্যস্ফীতি রেটের তুলনায় আমানতের রেট কম।’ প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ব্যাংক ঋণের সুদ হার সীমা তুলে নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্মার্ট রেট’ ঘোষণা করেছে। সেপ্টেম্বরে সুদ হারের ব্যবধানের (স্প্রেড) সীমাও তুলে নেওয়া হয়। এর ফলে ব্যাংকগুলো এখন উচ্চ সুদ হারে আমানত নিতে পারছে। বর্তমানে গ্রাহকের ঋণের রেট পরিবর্তন হচ্ছে ছয় মাসের ট্রেজারি-বিল বন্ডের গড় রেটের (স্মার্ট) ওপর ভিত্তি করে। এর সঙ্গে আরও ব্যাংকগুলো ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ মার্জিন যোগ করে গ্রাহক ঋণ দিতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর-এই ছয় মাসে ব্যাংকের বাইরে থাকা টাকার পরিমাণ কমেছে ৩৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা।
ছবি: ০৬
ফি কমলো ডিএনসিসি হলিডে মার্কেটে স্টল বুকিংয়ে
এফএনএস অর্থনীতি: ডিএনসিসি হলিডে-ঐক্য মার্কেটের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে স্টল বুকিং ফি কমিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি)। রোববার ডিএনসিসির ফেসবুক পোস্টে এ তথ্য জানানো হয়। ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, ‘ঢাকাসহ দেশের সব এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য আনন্দের সংবাদ। সব নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুসংবাদ। সব তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য সুসংবাদ। ডিএনসিসি ঐক্য-হলিডে মার্কেটের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে স্টল বুকিং ফি কমলো! দুইদিনের ফি মাত্র ৩ হাজার টাকা। আগামী ১৬ ও ১৭ ফেব্রæয়ারি স্টল বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করুন ০১৭৩০৭৪৫৮৮৮ নম্বরে।’ গত বছরের ১৩ ফেব্রæয়ারি দেশের কুটিরশিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের নানা ধরনের পণ্য ও খাদ্যপণ্য নিয়ে ‘ডিএনসিসি-ঐক্য হলিডে মার্কেট’ চালু হয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি রোডে। এরপর থেকে প্রতি শুক্র ও শনিবার এ রোডে হলিডে মার্কেট বসছে।
ছবি: ০৭
রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ
এফএনএস অর্থনীতি: বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের সরকারি ব্যয় অনেক কম। ২০২১ সালে যেখানে বাংলাদেশে সরকারি ব্যয় ছিল জিডিপির ১৩ শতাংশ, সেখানে ভারতের ছিল ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ২২.৩ শতাংশ এবং ভিয়েতনামে ছিল ২০.৪ শতাংশ। এছাড়া, উন্নত অর্থনীতিতে সরকারি ব্যয় বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় বাংলাদেশে সরকারি ব্যয় ১৫ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিচ্ছে। আর এজন্য রাজস্ব বা আয় বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, মধ্য মেয়াদে সরকারি ব্যয় আগামীতে জিডিপির সাড়ে ১৫ শতাংশের ওপরে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, সরকার ক্রয়ান্বয়ে জিডিপির শতাংশ হারে ব্যয় বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে সরকারি ব্যয় ছিল জিডিপির ১৩ শতাংশ, যা ২০২১-২০২২ অর্থবছরে (সংশোধিত বাজেটে) ১৪ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার সংস্কার কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের ফলেই তা সম্ভব হয়েছে। সূত্র জানায়, গত ২০২১-২০২২ এর চেয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে জিডিপির শতাংশ হিসেবে সরকারি ব্যয় (বাজেট) ২ শতাংশ কমে গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) শতকরা হিসেবে বাংলাদেশে সরকারি ব্যয় বর্তমানে কিছু উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির তুলনায় কম। অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ ও ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় জিডিপির শতাংশ হিসাবে সরকারি ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি এবং গুণগত ও মানসম্পন্ন সরকারি সেবা নিশ্চিতকরার লক্ষ্যে মৌলিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিষেবা খাতসমূহে ব্যয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। তবে সীমিত সম্পদ ব্যবহার করে সরকারি ব্যয়ের আকার বৃদ্ধি এবং একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী যদি আমাদের বাজেট তৈরি করা হতো তা হলে চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার অবশ্যই আট লাখ কোটি টাকার বেশি হতো। কিন্তু তা করা সম্ভব হয়নি। এর অন্যতম কারণ সম্পদের স্বল্পতা। একদিকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আশানুরূপ আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে বিদেশি সাহায্য কাঙ্খিত হারে আসছে না। বিশেষ করে দুই বছরের কোভিডজনিত কারণে দেশের ব্যবসা বাণিজ্য অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছিল। এর ফলে রাজস্ব আদায়ে এক ধরনের স্থবিরতা দেখা দেয়। ফলে আয় ভালো না হওয়ার কারণে সরকারের পক্ষে ব্যয়ও বেশি করা সম্ভব হয়নি। সরকারের আয় যে আশানুরূপ বাড়ছে না, তার প্রমাণ পাওয়া যায় জিডিপির শতাংশ হিসেবে এনবিআরের অবদান বছরের পর বছর ধরে সাড়ে ৭ থেকে ৯ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে জিডিপির শতাংশে এনবিআরের অংশ ছিল সাড়ে ৭ ভাগ। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এটি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৫ ভাগে। কিন্তু পরে তা সংশোধন করে ৮ দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এই হার ধরা হয়েছে আট দশমিক ৩ শতাংশ, পরবর্তী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৯ শতাংশ। তবে প্রাক্কলন যাই করা হোক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এই হার অর্জন করাও দুরূহ হয়ে পড়বে। অর্থ বিভাগ ও আইএমএফ এর তথ্যে দেখা যায়, ২০২১ সালে বেশ কয়েকটি দেশে সরকারি ব্যয় জিডিপির শতাংশে ২০ ভাগের ওপরে ছিল। এর মধ্যে, ফ্রান্সের ৫৭ শতাংশ, সুইডেনের ৪৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের ৪১ দশমিক ৭ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার ৩৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ, চীনের ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতের ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ২২ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ভিয়েতমানের ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। সে হিসেবে বাংলাদেশে অনেক কম। এ অবস্থায় রাজস্ব আয় বাড়াতে নানা উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে।
https://www.kaabait.com