স্পোর্টস: দুই বছর পর গত রোববার রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে বসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চলতি বছরের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম)। তবে এই সভার আগে বেশ কিছু গুঞ্জনে উত্তাল ছিল দেশের ক্রিকেটপাড়া। কেননা বাতাসে উড়া খবরে শোনা যাচ্ছিল এ সভা দিয়েই বিসিবির গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন এনে হয়তো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার পথে পা বাড়াতে যাচ্ছে। তবে এসবে গুঞ্জন উড়িয়েই দিয়েছে বিসিবি। আর গঠনতন্ত্রে কোনো পরিবর্তন নয়, আনা হয়েছে সংশোধনী। আর তা আনা হয়েছে সংস্থানটির ব্যাংকিং কার্যক্রমগুলোকে গতিশীল করতেই। এছাড়া বিসিবি সভাপতি আলোচনাও করেছেন বিসিবি টিভি নিয়ে। রবিবার এজিএম শেষে দেড় ঘণ্টা দেরিতে সংবাদ সম্মেলন করে বিসিবি। সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘বোর্ডের চলতি আর্থিক সালের পহেলা জুলাই ২০২৩ থেকে ৩০ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বাজেট অনুমোদিত হয়। যা মোট সম্ভাব্য আয় হচ্ছে ৪৪৬.৮০ কোটি টাকা এবং মোট সম্ভাব্য ব্যয় হচ্ছে ৪০৭.৭৮ কোটি টাকা বিপিএলসহ। এছাড়া মোট উদ্বৃত্ত ৩৯.০২ কোটি টাকা। এখানে একটা জিনিস লক্ষণীয় যে, বুঝতেই পারছেন ব্যয় বেড়ে গিয়েছে। আমাদের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। তো যেই সেভিংসটা হতো এখন আর হবে না। সামনে কী হবে সেটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’ এজিএমের আগেই শোনা যাচ্ছিল বিসিবি বাণিজ্যিক কার্যক্রমে নিয়োজিত করার জন্য তার গঠনতন্ত্রে দুটি সংশোধনী আনছে। সংস্থাটি ধারা ৬, অনুচ্ছেদ ৬.১৭ এবং ৬.২০ সংশোধন করে উপধারা ৬.১৭-এর সংশোধনের লক্ষ্য হলো সরকার, স্পনসর এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উৎস থেকে তহবিল সংগ্রহ করা যাতে প্রোগ্রামটি বাস্তবায়নে অর্থায়ন করা যায় এবং যে কোনো পরিমাণের এফডিআরসহ ট্রেজারি বন্ড কেনা। যে কোনো তপশিলি ব্যাংকে এবং ঝুঁকির বিধান অতিরিক্ত তহবিল বিনা মূল্যে লাভ বিনিয়োগ। এছাড়া ৬.২০-এর সংশোধনীতে বলা হয়েছে, সারা দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে অবকাঠামো, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সামাজিক সুবিধা বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনে এক বা একাধিক ট্রাস্ট, কোম্পানি, সোসাইটি/ফাউন্ডেশন গঠন। এতে করে ধারণা করা হচ্ছিল যে, বিসিবি এবার বাণিজ্যিক দিকে হাঁটতে চলেছে। তবে বিষয়টি পরিষ্কার করেন প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী। বলেন, ‘অর্থনৈতিক লেনদেন ও ব্যাংকিং যে কার্যক্রম, এগুলোতে আরো গতিশীলতা আনার জন্য এবং আমাদের লিগ্যাল অ্যাডভাইজ অনুযায়ী এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে; যেমন আমাদের ব্যাংকিং কার্যক্রমে আপনারা জানেন যে, স¤প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কমপ্লাইন্সেস পূরণ করতে হয়; যে কোনো অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে। মূলত এসব ক্ষেত্রে যেসব ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনা করা হয়, সেগুলোর আলোকেই এই দুইটা অনুচ্ছেদে আমাদের সংশোধনী আনা হয়েছে।’ ‘বিষয়টা একটা মিসলিডিং ইনফরমেশন (বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হওয়া) আমরা বলব। কারণ আমাদের বুঝতে হবে, কোম্পানি ফরমেশন এবং কোনো কোম্পানির যে শেয়ার সেটা শেয়ার মার্কেটে দেওয়ার মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে। আমাদের মূলত বিসিবি টিভি করার যে একটা পরিকল্পনা আছে। ওই বিসিবি টিভি করতে গিয়ে আমাদের…যেহেতু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশের ক্রিকেটের গভর্নিং বডি। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের কাজ, এর বাইরে যে এসব কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করার জন্য একটা লিগ্যাল ফ্রেম ওয়ার্কের মধ্যে করতে হবে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। এজন্যই সংশোধনীগুলো করা হয়েছে।’ এছাড়া এই সভায় আঞ্চলিক ক্রিকেটের উন্নতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জানা গেছে প্রতিটি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থার কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে, যেখানে প্রতিটি আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থাকে বোর্ডের পক্ষ থেকে উক্ত টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য ২০ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হবে। এ নিয়ে পাপন বলেন, ‘পরীক্ষামূলকভাবে আমরা একটা টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের করতে বলেছি। এটা শুধুমাত্র দেখার জন্য। ঐ টুর্নামেন্টটা তারা (নির্বাচিত কমিটি) চালাবে। ২০ লাখ টাকা তাদের দেওয়া হবে। এটা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হচ্ছে যে, তারা কে কীভাবে কাজ করছে আমরা সেটা দেখতে চাই।’
https://www.kaabait.com