মোরেলগঞ্জ প্রতিনিধি: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের
চরহোগলাবুনিয়া গ্রামে প্রতারণার মাধ্যমে এলাকাবাসীর নিকট থেকে প্রলোভন দেখিয়ে
প্রায় ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা সেই প্রতারক সাজ্জাদ আটক। টাকা ফেরত ও
বিচার দাবীতে ভূক্তভোগীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ প্রতিনিয়ত অব্যাহত রেখেছেন।
প্রতারক শেখ সাজ্জাদ (৪২) ওরফে এবাদুল ওরফে এমদাদুল ২০০৭ সালে দায়েরকৃত একটি
প্রতারণা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী। গত ১৩ মার্চ ঢাকা মহাম্মদপুর থেকে র্যাব-০৪
এর একটি টিম গ্রেপ্তার করে তার নিজ উপজেলা ইন্দুরকানী থানায় হস্তান্তর করেছেন
বলে ইন্দুরকানী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কামরুজ্জামন তালুকদার নিশ্চিত করেছেন।
পরবর্তীতে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রতারক সাজ্জাদের গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে পিরোজপুর, ইন্দুরকানী ও মোরেলগঞ্জ
উপজেলার হোগলাবুনিয়া ইউনিয়নের শতাধীক ভূক্তভোগীরা ইন্দুরকানী থানা এলাকায় জড়ো
হয়ে তাদের পাওনা টাকা ফেরত ও প্রতারকের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।
এদিকে, এ ঘটনায় শনিবার বিকেলে চরহোগলাবুনিয়া গ্রামে মো. মিজান শেখ, আসমা
আক্তার, মো. তুহিন শেখ, মো. তারিখ শেখসহ একাধীক ভুক্তভোগীরা জানান, পার্শ্ববর্তী
ইন্দুরকানি উপজেলার কলারন গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে প্রতারক এবাদুল
মোরেলগঞ্জ উপজেলার চরহোগলাবুনিয়া গ্রামে তার নানা বাড়ী হওয়ার সুবাদে মামাতো ভাই
মাষ্টার সরোয়ার হোসেন ও সংশ্লীষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ওই এলাকায় এসে পুল,
কালভাট, রাস্তা, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, ক্লিনিকসহ বেশ কিছু সামাজিক
প্রতিষ্ঠান নির্মান করে প্রতারনার ফাঁদ তৈরি করে। ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জন
করতে সংশ্লীষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানকে সভাপতি ও স্থানীয় গন্যমান্যদের উপস্থিতিতে বার
বার সভা সেমিনার করে আসছিলো। যা ছিল তার প্রতারণার একটি কৌশল।
এলাকার মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে সুকৌশলে প্রায় শতবিঘা জমি লিজ নিয়ে ছোট বড়
কয়েকটি স্থাপনা তৈরি করে। এভাবে সে ‘শেখ ফজলুর রহমান ফাউন্ডেশন ও সৌদি বহুমুখী
প্রকল্প’ সংস্থার নামে এলাকার দরিদ্র মানুষের বসত ঘর বরাদ্দ, সৌদি সংস্থার মসজিদ
নির্মাণ, ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প, কওমি মাদ্রসা, প্রতিবন্ধী স্কুল, টেকনিক্যাল কলেজ,
কমিউনিটি ক্লিনিক, কৃষিকাজ, ধান চাষ, মৎস্য চাষ, সৌদি আরব, কুয়েতসহ বিভিন্ন
দেশে লোক পাঠানোসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কথা বলে প্রকল্পগুলিতে বিনিয়োগ করতে
এলাকা বাসীকে আগ্রহী করে তোলে।
এছাড়া ৫ কক্ষ বিশিষ্ট ১২ শত ঘর নির্মাণ করে বরাদ্দ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে
চরহোগলাবুনিয়া গ্রামের রুস্তুম হাওলাদার, আঃ রশিদ হাওলাদার, মোকলেছ চৌকিদার ও
কামরুল চৌকিদারসহ ২৫ জনেরও বেশী লোকের কাছ থেকে ৬০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা
হাতিয়ে নেয়। স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজে চাকুরীসহ বিদেশে লোক পাঠানোর কথা বলে ১ লক্ষ
থেকে ৫ লক্ষ টাকা করে শতাধিক অসহায় পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা
হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক। এরপর থেকে শেখ সাজ্জাদ ওরফে এবাদুল ওরফে এমদাদুল
এলাকা ছেড়ে গাঁ ঢাকা দিয়ে আত্মগোপন করে থাকে। এ ঘটনায় গত বছর ভুক্তভোগীদের
পক্ষে চরহোগলাবুনিয়া গ্রামের মাওলানা জাকারিয়া বাদী হয়ে মোরেলগঞ্জ থানায়
সাজ্জাদের বিরুদ্ধে একটি প্রতারণার মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে
বাগেরহাট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে পৃথক পৃথক একাধীক
অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা আরো জানান, প্রতারক সাজ্জাদ কুয়েতি সংস্থার মসজিদ তৈরী করে দেয়ার
কথা বলে ওই এলাকার শেখ মুনসুর আলীর কাছ থেকে প্রতারক সাজ্জাদের মামাতো ভাই
মাষ্টার সরোয়ার হোসেনের মাধ্যমে ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। কারিগরি
কলেজে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২৫ জনের নিকট থেকে ৩ থেকে ১০ লক্ষ টাকা নিয়েছে।
এছাড়াও স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার কথা বলে অর্ধশতাধীক লোকের কাছ থেকে ৫০ হাজার
টাকা করেও হাতিয়ে নেয় ওই প্রতারক। প্রতিবন্ধী স্কুল, কওমি মাদ্রাসা, ক্লিনিক,
মহিলা মাদ্রাসা, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার কথা
বলে ২ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে। সৌদি আরব, কুয়েত সহ
বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে সৌদি প্রবাসী মো. নাঈমসহ ২০ ব্যবসায়ীর কাছ
থেকে ৩ থেকে ১০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে এলাকা থেকে দীর্ঘ দিন গাঁ ঢাকা দিয়ে
আত্মগোপনে থাকে সাজ্জাদ।
এ বিষয় জানতে চাইলে হোগলাবুনিয়া ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.
আকরামুজামান বলেন, সাজ্জাদ ওরফে এবাদুল এলাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান করেছে বলে
জানতে পেরেছি, সেখানে আমার নাম সভাপতি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে শুনেছি। আমি
কখনো কোন সভা বা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করিনি। ৮ মাস পূর্বে কয়েকজন স্থানীয়দের
কাছ থেকে নেয়া গরু উদ্ধার করে নিজ নিজ মালিকদের ফেরত দেয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের
ধান ফসল সংশ্লীষ্ট ওয়ার্ড মেম্বারের জিম্মায় রেখে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বন্টন করা
হয়েছে। সে এলাকার অনেক লোক জনের কাছ থেকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে অনেক টাকা
নিয়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা অনেকেই আমাকে জানিয়েছে।
এ সম্পর্কে মোরেলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সামছুদ্দীন বলেন,
সাজ্জাদের আটকের বিষয় তিনি অবহিত নন, তবে তার বিরুদ্ধে গত বছর মোরেলগঞ্জ
থানায় একটি মামলা দায়ের হয়। মামলাটি আদালতে চলমান রয়েছে।
https://www.kaabait.com