বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, রমজান উপলক্ষে যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে, ফলে পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সুযোগ নেই। সোমবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০২৪-এর দ্বিতীয় দিনের চতুর্থ অধিবেশনে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের কার্য অধিবেশন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, রমজান উপলক্ষে এবার কোনো পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ যথেষ্ট সরবরাহ আছে। আমাদের প্রত্যেকটি বড় তেল উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরিগুলো ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে পরিদর্শন করা হয়েছে। তারা তেলের মূল্য ঠিকভাবে লেখা হচ্ছে কিনা সেটি পরিদর্শন শেষ। ডিসিদের আমরা বলেছি, বাজার মনিটরিং করতে। পরিবহন ব্যবস্থা যাতে শৃঙ্খলিত থাকে এবং সরবরাহে কোথাও যাতে প্রতিবন্ধকতা না হয়, সেই বিষয়ে পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা এক কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিচ্ছি রমজান উপলক্ষে। সেখানে চাল, তেল, চিনি, ডাল, খেজুর ও ছোলা থাকবে। এই পণ্যগুলোর বিতরণ যেন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়, সেজন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর এই তালিকাটা ২০২০ সালে করোনার সময় করা। এই তালিকাটা আপডেট করার জন্য তাদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছি। তারা যেন আগামী দুই মাসের মধ্যে সংযোজন ও পরিবর্তন করে পরিপূর্ণ একটি তালিকা দেয়। তিনি বলেন, সারাদেশে আমাদের ৭ হাজার ৭০০ জনের মতো টিসিবির ডিলার আছেন। এই ডিলাররা প্রাথমিকভাবে ট্রাকে এবং পরবর্তীতে খোলা জায়গায় পণ্য বিতরণ করতেন। এতে মানুষের অনেক কষ্ট হয়৷ একটি দিন চলে যায় টিসিবির পণ্যের একটি প্যাকেজ নিতে। এটা স্থায়ী দোকানে কীভাবে ডিলার নিয়োগ করতে পারি, সে ব্যাপারেও আগামী দুই মাসের মধ্যে জনপ্রতিনিধিদের পরামর্শ অনুযায়ী জনপ্রশাসন এই তালিকা আমাদের পাঠাবে। আগামী অর্থবছরে স্থায়ী দোকানের মাধ্যমে টিসিবির পণ্যগুলো মানুষ পাবে বলেও জানান তিনি। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ষপণ্য হিসেবে হস্তশিল্পকে ঘোষণা করেছেন। এই হস্তশিল্পটা আমাদের জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ‘একটি গ্রাম, একটি পণ্য’ এই ব্যানারে প্রতিটি গ্রাম থেকে একটি পণ্যকে তুলে নিয়ে আসতে চাই। আমরা সেসব পণ্যকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে বাজারজাত করবো। আগামী রপ্তানি মেলায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত সেসব পণ্য ও কারিগরদের আমরা সহযোগিতা করবো। তাদের কারিগরি, আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি পণ্যটি বিপণনের ব্যবস্থা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ই-কমার্সের মাধ্যমে করে দেবে। টিটু বলেন, ডাবিøউটিও’র একটি ফান্ড করা হয়েছে ই-কমার্স ও নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে। সেখানে আমরা সহযোগিতা চাইবো। অনেকগুলো বন্ধু রাষ্ট্র আমাদের এই বিষয়ে সহযোগিতা দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। আশা করি যখন যেটা পাবো, সেই অনুযায়ী আমরা পণ্যটি দেশ-বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে দৃশ্যমান করবো। ভারত থেকে চিনি ও পেঁয়াজ কবে আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিঠি আমরা পেয়ে গেছি। আমাদের দূতাবাস কাজ করছে। তারা (ভারত) আমাদের কবে নাগাদ ও কীভাবে পণ্য পাঠাবে তা আজকে আমরা জানতে পারবো৷ রোজার আগে এসব পণ্য আসবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই রোজার আগে আসবে। পেঁয়াজের দাম নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কৃষি পণ্য উৎপাদন হয়, কৃষকরা যদি মূল্য পায় তাহলে উৎপাদন বাড়বে। আমরা মাঠ পর্যায়ে তদারকি করছি, এবার হাটগুলোতে ৮০-১০০ টাকার মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। যা গত বছর অর্ধেক ছিল। এটা ঠিক। কিন্তু কৃষকরা যদি একটু ভালো দাম পায়, আগামী বছর এই সময় উৎপাদন দ্বিগুণ হবে। এটা আপনারা লিখে রাখতে পারেন। কারণ কৃষকরা তাহলে উৎসাহিত হবে। অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়ায় পেঁয়াজের দামটা একটু বেশি। এদিকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৫৬ যুগোপযোগী করা হবে বলে জানিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে মূলত প্রস্তাবনা ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তারা (ডিসি) কীভাবে ভ‚মিকা রাখতে পারে। এবং তাদের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা ছিল ১৯৫৬ এর নিত্যপ্রয়োজনী কমিউনিটির যে আইন সেটা যুগোপযোগী করা এবং সেখানে যে পণ্যগুলো আছে, সেগুলো আপডেট করা। তিনি বলেন, আমরাও তাদের সঙ্গে একমত। আমরা অচিরেই বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নিয়ে একটি মিটিং করে কীভাবে এ আইনটাকে আরও যুগোপযোগী করা যায়, পণ্যের তালিকাটাকে কীভাবে সুন্দর করা যায়, সেটি করবো। গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে চার দিনের জেলা প্রশাসক(ডিসি) সম্মেলন-২০২৪ এর উদ্বোধন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সম্পর্কিত কার্য-অধিবেশনে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানিযোগ্য পণ্য বহুমুখীকরণ, চামড়াজাত শিল্পের উন্নয়ন ও চামড়া রপ্তানির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া, রোজার মাস সামনে রেখে তেল, চিনি ও চালের দাম নিয়ন্ত্রণ, প্রকল্প বাস্তবায়নে ভ‚মি অধিগ্রহণের বিষয়টি দ্রæত নিষ্পত্তি করা এবং সার্বজনীন পেনশন স্কিম বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। এবারের সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে থাকছে ৩৫৬ প্রস্তাব। প্রস্তাবগুলোর জনসেবা বৃদ্ধি, জনদুর্ভোগ হ্রাস করা, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ, পর্যটনে বিকাশ, আইন- কানুন বা বিধিমালা সংশোধন, জনস্বার্থ সংক্ষণের বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২২টি প্রস্তাব পড়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে। সম্মেলনে সর্বমোট অধিবেশন ৩০টি। এর মধ্যে কার্য-অধিবেশন ২৫টি (১টি উদ্বোধন অনুষ্ঠান, ১টি স্পীকারের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময় এবং ১টি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সদয় নির্দেশনা গ্রহণ এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানিকতা ২টি। এছাড়া অংশগ্রহণকারী কার্যালয়: ১টি (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়)। এবারের ডিসি সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবরা বিভাগীয় কমিশনার ও ডিসিদের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরবেন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেবেন।
https://www.kaabait.com