বিদেশ : প্রতি বছর রমজান মাসে সৌদি আরবের মক্কায় বায়তুল্লাহ শরিফ মসজিদুল হারাম ও মদিনার মসজিদে নববীতে অপূর্ব আধ্যাত্মিক আবহের সৃষ্টি হয়। সৌদি সরকারের কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মক্কার মসজিদুল হারামে প্রতিদিন বিশ্বের অন্যতম বড় ইফতার সমাবেশ হয়। মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র এই মসজিদে ইফতার করতে ছুটে আসেন বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ। সৌদির ইসলাম, দাওয়াহ ও নির্দেশনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, মক্কায় মসজিদুল হারামে প্রতিদিন এক লাখ ইফতারি প্যাকেট মুসল্লিদের মাঝে বিতরণ করা হয়। তবে ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে ইফতারের চাহিদা। ইফতার বিতরণের জন্য কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্হা নেওয়া হয়েছে। মক্কার মসজিদুল হারামে ইফতার বিতরণে জন্য ৪০ হাজার কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। পাশাপাশি ইফতারে অংশ নিতে আসা নারীদের সহায়তার জন্য ১০ হাজার নারী কর্মীও নিয়োগ দিয়েছে সৌদি সরকার। মসজিদুল হারামে ইফতার করার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আসরের নামাজের পর মুসল্লিরা উপস্থিত হতে থাকেন। সৌদি আরবেও সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে খাদ্যাভ্যাস, সেই সঙ্গে ইফতারও। এখন মসজিদুল হারামে প্রতিদিন ইফতারে রোজাদারদের জন্য দেওয়া হয় বিভিন্ন ধরনের মসলাদার খাবার, স্যুপ বা শরবত, কাবাব, ফাতির (রুটি), লবণ, সবজি, খেজুর ও জমজমের পানি। ইফতার সরবরাহ সওয়াবের কাজ। তাই আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে মক্কা নগরীর হাজার-হাজার মানুষ ছাড়াও পবিত্র ওমরাহ পালন করতে আসা বিশ্বের লাখ লাখ মুসলমান, যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী ইফতার সামগ্রী নিয়ে ছুটেন মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে। এবার নতুন নিয়মে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গণে ইফতারির আয়োজন করা হচ্ছে। যারা ইফতার সামগ্রী প্রদান করেন তারা সুপারভাইজার ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবেন। তারা ইফতার সাজানো ও পরিষ্কারের দায়িত্ব পালন করবেন। মসজিদুল হারামের প্রায় ৯০টি গেট দিয়ে রোজাদার মুসল্লিরা ধীরস্থীরভাবে প্রবেশ করেন। সব ভেদাভেদ ভুলে এভাবে একসঙ্গে পাশাপাশি বসে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জন করতে ইফতার গ্রহণের এমন দৃশ্য বিশ্বের আর কোথাও দেখা যায় না। রমজান আসার ১৫ দিন আগে থেকেই মক্কায় রোজার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। রমজানকে ঘিরে চারদিকে পড়ে যায় সাজ সাজ রব। একে অন্যকে জানায় রমজানের অভিবাদন। দেখা-সাক্ষাতে মানুষ রমজানের সওগাত জানায় ‘শাহরু আলাইকা মোবারাক’ বলে। রমজানকে ঘিরে দাওয়াতি কাজ শুরু করেন অনেকেই। বিভিন্ন রকমের হ্যান্ডবিল, লিফলেট, ছোট পুস্তিকা, সকাল-সন্ধ্যার দোয়ার ছোট কার্ড ইত্যাদি ছাপিয়ে মসজিদে মসজিদে বা ব্যক্তিপর্যায়ে বিতরণ করা হয়। আর এ ধারা অব্যাহত থাকে রমজান মাসজুড়ে। এ বছর ওমরা পালনকারীদের এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় বেশি। এক সরকারি পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে সৌদি গেজেট। তবে সৌদি নাগরিকরা রমজানের অর্ধেক অতিবাহিত হওয়ার পর ওমরা আদায়ে মনোযোগী হবেন এবং রমজানের শেষ দশকে হারামাইন শরিফে ইতিকাফের জন্য একত্রিত হবেন। এভাবেই ওমরা আদায় ও পূণ্য কাজের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে রমজানের সিয়াম পালন করেন মহানবী (সা.) এর দেশের নাগরিক ও অতিথিরা।
https://www.kaabait.com