
শ্যামনগরে প্রতিপক্ষের দায়েরকৃত মামলায় আট দিন কারাবাসের পর সম্প্রতি জামিন পেয়ে বাড়িতে ফিরেছেন হাফিজুর ও মফিজুল। গ্রেপ্তারের পুর্বে প্রধান শত্রু আরজ খান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে ম্যিথা মামলা করেও খুব একটা সমস্যায় ফেলতে পারেননি তারা। অগত্যা শত্রু ঘায়েলের জন্য বিকল্প পথে হাঁটার পরিকল্পনা নেন সীমান্ত চোরাচালানে জড়িত আপন দুই খালাত ভাই। ফন্দি আটেন স্বামী পরিত্যক্তা অসহায় বোনকে হাতিয়ার বানিয়ে প্রতিপক্ষকে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার।
ঘটনাটি ঘটেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী এলাকায়। যদিও ডাক্তারী পরীক্ষায় আটকে যাওয়ার পাশাপাশি মিথ্যা মামলায় থানা পুলিশের সাড়া না মেলায় আপাতত চুপসে আছে চক্রটি।
জানা যায় সীমান্ত চোরাচালানকে কেন্দ্র করে পশ্চিম কৈখালী গ্রামের হাফিজুর ও মফিজুলের সাথে প্রতিবেশী আরজ খানের বিরোধ দীর্ঘদিনের। তার দেয়া তথ্যে দুই চোরাকারবারীর মাদকসহ ভারতীয় ঔষধের একাধিক চালান আটক হয় আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থার হাতে। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ মফিজুল বাদি হয়ে মারধরসহ হত্যা চেষ্টার অভিযোগে গত ৩০ মার্চ ২০২৪ তারিখে আরজসহ তার পরিবারের চার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মিথ্যা মামলায় দিয়ে সুবিধা করতে না পেরে মফিজুল খালাত ভাই হাফিজুরসহ লোকজন নিয়ে ১৩ জুলাই ২০২৪ তারিখে আরজ খানকে কুপিয়ে আহত করে। সে ঘটনায় আরজের পিতা সামছুর রহমানের দায়েরকৃত মামলায় আসামী হওয়ার সপ্তাহখানিক পরে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেন তারা।
অনুসন্ধানে তথ্য মেলে যে গত ৩ আগষ্ট শনিবার হাফিজুর তার স্বামী পরিত্যক্তা আপন ছোট বোনকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। এসময় বোনকে ভোর রাতে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও তিনি চিকিৎসকদের কাছে দাবি করেন। বোন মুখ না খুললেও উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে হাফিজুর বলেন, পুর্ববর্তী মামলার আসামী আরজ ও তার মামাত ভাই ফরহাদ এমন কান্ড ঘটিয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায় আরজ ও তার পরিবারকে শায়েস্তা করতে এলাকার চিহ্নিত মামলাবাঁজ আব্দুল ওহাবের শরানাপন্ন হয় মফিজুল ও হাফিজুর। পরবর্তীতে ওহাবের পরামর্শে হাফিজুর ঢাকায় গার্মেন্টেস-এ কর্মরত তার স্বামী পরিত্যক্তা বোনকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসে। আর স্বামী বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগে ভোররাতে মামাত ভাইকে সাথে নিয়ে আরাজ প্রায় সাত কিলোমিটার দুরবর্তী গ্রাম থেকে এসে তাকে ধর্ষণ করেছে বলে গল্প ফাঁদে। এলাকায় মামলাবাঁজ হিসেবে পরিচিত ওহাব মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে আরজকে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলেও অনুসন্ধানে তথ্য মিলেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জরুরী বিভাগের চিকিৎসক নাজমুল মনির জানান প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নীরিক্ষায় তারা ঐ নারীর শরীরে ধর্ষণের কোন আলামত খুঁজে পাননি। তবুও অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তার শরীর থেকে সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
বোন ধর্ষিত হওয়ার দাবি করা হাফিজুর শুরুতে ধর্ষক হিসেবে আরজ খানের নাম উচ্চারণ করে মামলা দায়ের করবেন বলে জানান। তবে ডাক্তারী পরীক্ষার পর অনেকটা আশাহত হওয়ার ভঙ্গিতে তিনি আরও বলেন ‘বোন হাসপাতালে, তাই আাপাতত মামলার কথা বলতে পারিছ না। যদিও তথ্য রয়েছে চিকিৎসকরা ধর্ষণের প্রমান না পাওয়ায় মামলা দায়েরের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে হাফিজুর ও মফিজুল।
আরজ খান জানান কারাভোগের পর থেকে মফিজুল ও হাফিজুর তাদেরকে শাসাচ্ছে। বাধ্য হয়ে হয়রানী বন্ধের দাবি জানিয়ে গত ২৬ মে ২০২৪ তারিখে হাফিজুর ও মফিজুলের বিরুদ্ধে আরজের পিতা সামছুর রহমান আদালতে মামলা করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নাজমুল মনির জানান প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবুও সোয়াব পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে আসলে বিষয়টি পরিস্কার হবে।