• বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:১০
সর্বশেষ :
দেবহাটায় ৩দিনব্যাপী ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধন নিরাপদ সড়কের জন্য দুই রাজনৈতিক নেতার প্রতিশ্রুতি নিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন জেন্ডার ট্রাসফরমেটিভ ওয়াশ বিষয়ক কর্মশালা শ্যামনগরে মৎস্য ঘের দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত-৩ ধানদিয়ায় উন্নয়ন প্রচেষ্টার উদ্যোগে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত দেবহাটায় শহীদ আসিফ স্মৃতি ব্যাডমিন্টন টুনামেন্ট অনুষ্ঠিত দেবহাটায় গ্রাম আদালত বিষয়ক মতবিনিময় সভা দেবহাটায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাদল গাজীর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দা ফ ন সম্পন্ন মনিরামপুরে ব্র্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের প্রত্যাশা ২ প্রকল্পের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত আশাশুনির দরগাহপুর বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

সাতক্ষীরার দেবহাটার বাজারে উঠতে শুরু করেছে পানিফল, লাভের আশায় কৃষক

কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি / ১০৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪
লাভের আশায় কৃষক

সাতক্ষীরা জেলার বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে পানি ফল। আগাম চাষ করা ফল বিক্রি করে লাভের আশা করছেন চাষীরা। অন্য ফলের পাশাপাশি পানি ফল বাজার দখল করতে শুরু করায় দিনে দিনে চাহিদা বাড়ছে। সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফলটি ছোট বড় সকলের কাছে পছন্দের।

 

কৃষি অফিসের তথ্য সুত্রে জানা গেছে, এ ফলের ইংরেজি নাম Water chestnut এবং উদ্ভিদতাত্বিক নাম Trapa bispinosa। পানি ফলের আদিনিবাস ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকা হলেও এর প্রথম দেখা পাওয়া যায় উত্তর আমেরিকায়। বাংলাদেশের সাতক্ষীরা জেলায় পানি ফলের বাণিজ্যিকভাবে চাষ অনেক আগেই শুরু হয়েছে। পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। জলাশয় ও বিল-ঝিলে এ ফলটি জন্মে। পানি ফলের এক একটি গাছ প্রায় পাঁচ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানি ফলের আরেক নাম ‘ পানি সিংড়া’।

 

প্রাপ্ত তথ্য মতে, ফল চাষ শুরু হয় ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এবং ফল সংগ্রহ করা হয় অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে। পানিফল কচি অবস্থায় লাল, পরে সবুজ এবং পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। ফলটির পুরু নরম খোসা ছাড়ালেই পাওয়া যায় হৃৎপিন্ডাকার বা ত্রিভুজাকৃতির নরম সাদা শাসঁ। কাঁচা ফলের নরম শাসঁ খেতে বেশ সুস্বাদু। পানি ফল কাঁচা খাওয়া হয়, তবে সিদ্ধ করেও খাওয়া যায়। কাঁচা পানিফল বলকারক দুর্বল ও অসুস্থ মানুষের জন্য সহজপাচ্য খাবার। ফলের শুকনো শাঁস রুটি করে খেলে এলার্জি ও হাত-পা ফোলা রোগ উপশম হয়। পিওপ্রদাহ, উদরাময় ও তলপেটের ব্যথ্যা উপশমে পানিফল খাওয়ায় প্রচলন রয়েছে। বিছাপোকা কামড়ের যন্ত্রণায় থেঁতলানো কাঁচা ফলের প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়।

 

দেবহাটার সখিপুর গ্রামের পানিফল চাষি আব্দুল গফ্ফার জানান, গত কয়েক বছর ধরে আমি পানি ফল চাষ করছি। প্রথমে মানুষের মাঝে তেমন সাড়া পাওনা না গেলেও দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

 

পানিফল চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, এ বছর তিনি একটি ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে পানি ফলের চাষ শুরু করেছেন। শুরুতেই এই চাষ লাভের আশা দেখিয়েছেন তাকে। তিনি আগামী বছর আরও বেশি জমি নিয়ে চাষ করবেন বলেও জানান।

 

আরেক পানিফল চাষি শামছুর রহমান বলেন, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে পানিফল চাষ করে আসছেন। এবছর তিনি ১০ বিঘা জমিতে এ চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি ১৫/২০ মন ফলন পাচ্ছেন। শুরুতেই যার প্রতি কেজি ৪০ টাকা দরে পাইকারি বিক্রয় করে লাভবান হচ্ছেন।

 

সখিপুর মোড় এলাকার খুচরা পানিফল বিক্রেতা আব্দুল গফুর জানান, বর্তমানে তিনি ৪০টাকা কেজিতে ক্রয় করে ৫০টাকা কেজিতে বিক্রয় করছেন। এতে তিনি কেজিতে ১০টাকা হারে লাভ করে দিনে ৫০০/৭০০ টাকা উপার্জন করছেন।

 

সখিপুর মহিলা কলেজ এলাকার ইমরান হোসেন জানান, প্রতিদিন সকালে চাষিদের কাছ থেকে পানিফল ক্রয় করে সারাদিন ধরে তা বিক্রয় করেন। এ ব্যবসা করে তিনি সাংসারিক চাহিদা মেটাচ্ছেন।

 

পাইকারি পানিফল ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, চাষের মৌসুম আসার আগে তিনি অর্ধ শতাধিক চাষীর মাঝে অর্থ বিনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ফলন আসার পরে বাজার দর অনুযায়ী উৎপাদিত ফসল ক্রয় করেন। এভাবে ১০/১২ বছরের বেশি সময় তিনি পানিফল ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। প্রতিদিন তিনি ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, বরগুনা, চিটাগাং, সিলেট, রাজশাহী, বেনাপোল, যশোর, নাটোর, বগুড়া, দর্শনা, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ ফল রপ্তানি করেন। বর্তমান জেলার বাইরের বাজার ভেদে পাইকারীভাবে বিক্রি করেন তিনি।

 

উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. ইউনুস আলী জানান, এবছর দেবহাটাতে আনুমানিক ৫০ হেক্টর জমিতে পানিফল চাষাবাদ করা হচ্ছে। প্রতি বিঘায় ১৫/২০মন ফলন পেয়ে ২০/২৫ হাজার টাকা লাভবান হবেন কৃষক।

 

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার শওকত ওসমান জানান, পানিফল কৃৃষি খাতে চাষ হিসেবে ধরা না হলেও এটি অতিদ্রুত চাষের খাতে আনা হতে পারে। তাছাড়া অন্য বছরের তুলনায় এবছর আবাদ বেড়েছে। কৃষি অধিদপ্তর থেকে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ অবাঞ্চিত ফলটি চাষাবাদে খরচ কম ও অল্প পরিশ্রমে বেশ লাভবান হওয়ায় প্রতিবছর আগ্রহ বেড়ে চলেছে পানি ফল চাষিদের।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com