দুর্গন্ধে রোগী-স্বজন চিকিৎসকদের ভোগান্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ
খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হাসপাতাল। কিন্তু দেখে তো মনে হয় না। দেখে মনে হচ্ছে হাসপাতাল তো নয় যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ের মধ্যে বসবাস করছি। চারপাশের পরিবেশ এতটাই নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন যে টিকে থাকায় দায়। আর আবর্জনার দুর্গন্ধে পেটের নাড়িভুঁড়ি উল্টে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। আর টয়লেটের কথা কি বলবো গেলেই বমি চলে আসে। নাক- মুখ চেপে ধরেও যাওয়া না। এই অবস্থায় একজন সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়বে। এই কথা বলছিলেন রহিমা বেগম। তিনি তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেন,একই অভিযোগ তার আশপাশে থাকা এবং পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তিসহ অসংখ্য রোগী স্বজনদের।
সরেজমিনে হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে, রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। নির্ধারিত শয্যার বাইরেও সামনের মেঝে, করিডোর এবং ঢাল সিঁড়িতে পাটি বিছিয়ে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে যত্রতত্র পড়ে আছে পচা রক্তের ব্যাগ, রক্তমাখা ব্যান্ডেজ, নোংরা ও আবর্জনা কাগজ, বোতল এবং ড্রেসিং ও অপারেশনে ব্যবহৃত গজ তুলাসহ অন্যান্য বর্জ্য। এখানকার টয়লেটের অবস্থা আরও ভয়াবহ। নিধারিত ডাস্টবিনে উপচে পড়ে আছে পচাবাসী খাবারের প্যাকেট, পলিথিন, তুলা, টিস্যুসহ সব প্রকারের উচ্ছিষ্ট এবং মেডিকেল বর্জ্য। টয়লেটের পানি এসে গড়িয়ে পড়ছে বাইরে নয় পুরাতন ভবনের প্রতিটি ওয়ার্ড এবং টয়লেট জুড়েই একই অবস্থা দেখা গেছে। এমন অবস্থায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে চিকিৎসা নিতে রোগী ও স্বজন, চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের।
তাদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোগী ও দর্শনার্থীরা দুর্গন্ধে নাকাল হয়ে উঠলেও নীরব ভূমিকায় রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে সর্বত্রই যত্রতত্র পড়ে আছে বর্জ্য। কর্তপক্ষের উদাসিনতায় এবং অব্যবস্থাপনার কারণে হাসপাতালের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে।
সরেজমিনে ডুমুরিয়া হাসপাতালে ভবনে বিভিন্ন ওয়ার্ডগুলো ঘুরে দেখা গেছে, ময়লা-আবর্জনা, টিস্যু ফেলার জন্য নেই কোনও ঝুড়ি। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা আর মেডিকেলবর্জ্যের স্তূপ। প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে শত শত রোগীর চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত বর্জ্য যেমন- সিরিঞ্জ, সূচ, রক্ত, পুঁজযুক্ত তুলা, ব্যান্ডেজ-গজ, হ্যান্ডগ্লাভস, ওষুধ ও ওষুধের বোতল-শিশি, ব্লাড ব্যাগ, স্যালাইন ব্যাগসহ বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য। টয়লেটে মধ্যে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা থাকলেও তা কমই কম। ডাস্টবিনের ময়লা উপচে পড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে চারপাশে। পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেই। টয়লেটগুলোর ভেতরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। টয়লেটের সামনে রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সিরিয়াল। নেই কোন ছিটকানি ও বদনা এবং পানির ব্যবস্থা। আবার কোনটায় দেখা গেছে মানুষের মল ত্যাগে ভরে গেছে। টয়লেটে পানি বাইরে এসে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আর পানি জমে আশপাশে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উচ্ছিষ্ট খাবারসহ নানা ময়লা-আবর্জনার ফেলার কারণে মশা-মাছি ভনভন করছে। পানি জমে স্যাঁত স্যাঁত হয়ে আছে। কাগজ, পলিথিন ব্যাগ, কাগজ, চিপসের প্যাকেট, খাবারের প্যাকেট, পানির বোতল, ইঞ্জেকশনের এ্যাম্পুল, অপারেশনে ব্যবহৃত গজ তুলাসহ মানুষের ব্যবহৃত বিভিন্ন পত্র পড়ে রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেলে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল জাতীয় দ্রব্য, আববাব পত্র, চেয়ার-টেবিল ও ট্রলিসহ চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত জীবাণুযুক্ত তুলো এবং বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়িয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যদিও হাসপাতালের নতুন ভবনের ওয়ার্ডসহ টয়লেটেগুলোর পরিবেশ কিছুটা উন্নত দেখা গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছে, হাসপাতালে ভেতরের সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনা আর নোংরা পরিবেশে হাসপাতাল যেন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও দুর্গন্ধের কারণে কঠিন। সুস্থ হতে এসে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি। আর টয়লেটগুলো যেন মলমূত্র ও ময়লা-আবর্জনায় ভরে গেছে। মনে হয় না দিনে একবারও পরিষ্কার করে।
নাক মুখ চেপে এখানে ময়লা ফেলতে এসেছেন কোহিনূর নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, আমি এক সপ্তাহ ধরে মেয়েকে নিয়ে এখানে ভর্তি। আমি প্রতিদিনই দেখি সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত নানা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ময়লা ভরে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এখানে বক্স না রাখলে কেউ তো ময়লা ফেলতো না। আর ময়লা ফেললেও ঠিক সময়ে কেউ পরিস্কার করছে না। ফলে এখান থেকে রোগ-জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।
হাসপাতালের জরুরী বিভাগের অফিসকক্ষের পাশেই বর্জ্যের বিকট দুর্গন্ধ। হাসপাতালে ওয়ার্ডসহ বিভিন্ন টয়লেটে খাবারের উচ্ছিষ্ট,পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বোতল, ওষুধের বোতল, ইনজেকশনের শিশি-সিরিঞ্জ, ব্যান্ডেজ-গজ, স্যালাইনের প্যাকেট, রক্ত ও পুঁজমাখা তুলা-গজসহ নানা মেডিকেল বর্জ্য চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়াও ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ বেশি রোগী। শয্যা সঙ্কুলান না হওয়ায় ঠাঁই নিতে হচ্ছে মেঝেতে। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। টয়লেটের দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে মশা, মাছি ভোঁ ভোঁ করছে। এব্যাপারে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ কাজল মল্লিক বলেন পরিচ্ছন্ন কর্মী না থাকায় ড্রেন ও ডাস্টবিনে ময়লা পড়ে আছে। আমি আমার উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের কাছে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের কথা লিখেছি, পরিচ্ছন্ন কর্মী দিলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
ডুমুরিয়া উপজেলা নিবার্হী অফিসার মুহাম্মাদ আল আমিনের নিকট ডুমুরিয়া হাসপাতালের ব্যাপারে তার মুঠো ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
" বিবিসি সাতক্ষীরা "
সম্পাদক ও প্রকাশক : আব্দুল মতিন।
মেইল- bbcsatkhira@gmail.com ঠিকানা- পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ।
zahidit.com