সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের ভালুকা চাঁদ পুর পূর্ব পাড়া আহলে হাদিস জামে মসজিদের বর্তমান সভাপতি নুর ইসলামের সাথে সাধারণ সম্পাদক মোঃ রবিউল ইসলামসহ পুরো কমিটি ও স্থানীয় মুসল্লীদের মধ্যে চরম বিরোধ সৃষ্টি হয়। নেপথ্যে সভাপতি নুর ইসলামের পিতা ও মসজিদের জমিদাতা মৃত আলহাজ্ব ইসহাক আলী সরদারের কবরের পাশে অছিয়ত করা জায়গায় তার মায়ের কবর না দিয়ে জোর পূর্বক মসজিদের সামনের আংশিক পথ বন্ধ করে দাফন করায় পুরো এলাকাবাসীর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
একপর্যায়ে মারামারি ও থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। বিষয়টি আমার বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের মাধ্যমে জানতে পেরে এবং তাদের কয়েকজনের আহবানে গত ১৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে আমি সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে সবকিছু জানার ও বুঝার চেষ্টা করি। আল্লাহর ঘর মসজিদের মত জায়গা নিয়ে চরম অপ্রত্যাশিত এঘটনায় স্থানীয়দের মত আমিও মর্মাহত হই।
বিষয়টির গুরুত্ব ও তাৎপর্যসহ এলাকাবাসীর বক্তব্য তুলে ধরে একটি লাইভ সম্প্রচার করি। চরম স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে করা লাইভটি প্রচার হওয়ার পর চারিদিকে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রুপ নেয়। দেশ বিদেশ থেকে অসংখ্য প্রিয় মানুষ, ভাই, বন্ধু ও শুভাকাঙ্খীরা বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে কথা বলেন।
এসময় তারা প্রত্যেকে তাদের মতামত জানিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার জন্য জোর দাবি করেন। বাহিরে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দা আমার একজন চাকরিজীবি বন্ধুসহ বেশ কয়েকজন জানান- তাদের জীবনের প্রথম নামাজ আদায় করা এ-ই মসজিদের বিরোধ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টির কথা। পত্রিকায় নিউজ করার জন্য অনুরোধ করেন। যাতে প্রশাসনের দৃষ্টি গোচর হয়। বিষয়টি শান্তিপূর্ণ ভাবে আপোষ মিমাংসা করার জন্যও আমার সহযোগিতা চান। আমিও আমার ক্ষুদ্র অবস্থান থেকে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সব ধরনের চেষ্টা করার ব্রত নিয়ে কাজ শুরু করি। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে ঘটনার অন্তরালে নিহিত মুল সমস্যা চিহ্নিত ও অনুধাবন করার চেষ্টা করি।
বিডিএফ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও আমার মামা আল. শাহাদাৎ হোসেন বাবুর সাথে পরামর্শ করি। তিনি সবকিছু জানার পর বিষয়টি নিয়ে নিউজ না করে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিমাংসা করে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেন। স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে কোন নিউজ না করার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নেই। এসময় তিনি আরও জানান- ওই মসজিদ কমিটির সভাপতি আমাদের আত্মীয়। যদিও ঠিকমতো আসা যাওয়া নেই দীর্ঘদিন। তিনিও ঘটনাটি মিমাংসা করার জন্য অনেকের সাথে কথা বলেন এবং কাজ শুরু করেন। কিভাবে সহজে বিষয়টি সমাধান করা যায় তা নিয়ে আমরা সাতক্ষীরা সিটি কলেজের প্রফেসর শেখ আব্দুল ওয়াদুদ ভাইয়ের সাথে পরামর্শ করি। সবকিছু জানার পর তিনিও আমাদের মতো মর্মাহত হলেন। যেকোনো মূল্যে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিট মিমাংসা করে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা মূলক পরামর্শসহ সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। পরে উভয় পক্ষের সাথে দফায় দফায় কথা বলারপর প্রেসক্লাবের সভাপতির পরামর্শে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের প্রফেসর শেখ আব্দুল ওয়াদুদ ভাইকে নিয়ে গত ইং ১৮ নভেম্বর মঙ্গলবার বিকেলে বি.ডি.এফ প্রেসক্লাবে আলোচনায় বসি। আমরা বুঝতে পারলাম পরস্পর আন্তরিকতার ঘাটতি ও জেদাজেদিতে আল্লাহর ঘর পবিত্র মসজিদ নিয়ে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিবেকের আয়নায় সঠিক সিদ্ধান্ত কি হওয়া দরকার সেটা সবাই বুঝতে পারছেন। প্রফেসর শেখ আব্দুল ওয়াদুদ ভাই অত্যন্ত গঠনমুলক তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য দেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল নি:সন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। তার অসাধারণ ক্যারিশম্যাটিক ভুমিকার জন্য আমরা গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
এসময় মসজিদ কমিটির সভাপতি নুর ইসলাম সরদার খুব উদারতার পরিচয় দিয়ে একবাক্যে আমাদের যেকোন সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। এসময় সাথে তার থাকা সিনিয়র সাংবাদিক এস এম আমীর হামজা ভাই প্রস্তাব দিলেন কবরটা স্থানান্তর না করে প্রাচীর দিয়ে আড়াল করে দেওয়ার। আর সভাপতি নুর ইসলাম সরদার তার নিজ খরচে মসজিদের সামনের জমিটুকু মসজিদের নামে রেজিষ্ট্রেশন করে দেবেন। আমরা কোন সিদ্ধান্ত না দিয়ে বরং উভয় পক্ষের অন্ত নিহিত মুল বিরোধের দিকে ফোকাস দিলাম। তাদের পরষ্পরের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আপোষ মিমাংসা করে দিলাম।
এসময় সভাপতি নুর ইসলাম দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বললেন আমি নিজ খরচে ওই জমি মসজিদে লিখে দেবো এবং মসজিদ কমিটির সাথে আর কোন বিরোধ থাকবে না। আমি তাদের দাবি এখন আমারও দাবি। যাতে ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। একপর্যায় পরস্পর তাদের ভূল বুঝতে পেরে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। তাদের চোখের পানিতে ধুয়ে যায় সব ভুল বুঝাবুঝি। সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিস্থিতির। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলাম সভাপতি নুর ইসলাম আর তার ভগ্নিপতি আব্দুল খালেকসহ উপস্থিত সকলের চোখের পানিতে সব ভুল বুঝাবুঝি ও জেদাজেদির অবসান হয়ে গেল। আমি সংশ্লিষ্ট সবাই কে আন্তরিক শুভেচ্ছা অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানালাম।
(লেখক: জি এম আমিনুল হক, গণমাধ্যমকর্মী)
" বিবিসি সাতক্ষীরা "
সম্পাদক ও প্রকাশক : আব্দুল মতিন।
মেইল- bbcsatkhira@gmail.com ঠিকানা- পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ।
""বি:দ্র: এই সাইটের কোন লেখা বা ছবি কপি করা আইনত দন্ডণীয়""
zahidit.com