ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোরেশোরে প্রস্তুতি নিচ্ছে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। তবে প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকায় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা এখন দলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ কারণেই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে বসছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
গত দুই দিনে দলের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। এসব বৈঠকে মনোনয়ন, ত্যাগ, ঐক্য এবং দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে দিয়েছেন কঠোর নির্দেশনা। বৈঠকে তারেক রহমান তুলে ধরেন খালেদা জিয়ার ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস। তিনি বলেন, দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে বেগম খালেদা জিয়া নিজের এবং পরিবারের সুখ বিসর্জন দিয়েছেন। কারাবরণ করেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন, কিন্তু মাথা নত করেননি।
তার বক্তব্যে সভার পরিবেশ হয়ে ওঠে আবেগঘন। তিনি নেতাকর্মীদের স্মরণ করিয়ে দেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলনে খালেদা জিয়া, ইলিয়াস আলীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর ত্যাগ দলীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে আছে। তারেক রহমান মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বলেন, প্রতিটি আসনে একাধিক যোগ্য প্রার্থী আছেন। কিন্তু মনোনয়ন পাবেন একজন। তাই বাদ পড়লেও কেউ যেন ক্ষোভ বা বিভেদে না জড়ান।
তিনি আরও সতর্ক করেন, ঐক্য ভাঙলে ক্ষতি হবে দলেরই। ঐক্য রক্ষা করতে পারলে বিজয় সুনিশ্চিত। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, সঞ্চালনা করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রবিবার ও সোমবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকগুলোতে অংশ নেন ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম, রংপুর, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও কুমিল্লা বিভাগের নেতারা।
বৈঠকে তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের একটি গল্পও শোনান— দুই মা একটি শিশুকে দাবি করলে কাজি প্রস্তাব দেন শিশুটিকে ভাগ করে দেওয়ার। তখন প্রকৃত মা সন্তানকে ভাগ না করে অন্যজনকে দিতে রাজি হন। কাজি তখন বুঝতে পারেন প্রকৃত মা কে। তারেক রহমান বলেন, “দলের জন্যও এমন ত্যাগের মানসিকতা দেখাতে হবে। ধানের শীষের জন্য ত্যাগ স্বীকারেই মিলবে প্রকৃত বিজয়।
তিনি নির্দেশ দেন, মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থী যেন আনন্দ মিছিল বা মিষ্টি বিতরণ না করেন। বরং প্রথমে যিনি মনোনয়ন পাননি, তাঁর কাছেই যেতে হবে এবং তাঁকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে নামতে হবে। একইসঙ্গে মনোনয়নবঞ্চিতদেরও দলের স্বার্থে *মনোনীত প্রার্থীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
বৈঠকে অংশ নেওয়া নেতারা বলেন, তারেক রহমানের নির্দেশনায় তাঁরা *ইস্পাতকঠিন ঐক্যের শপথ নিয়েছেন। মেহেরপুর-১ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী জাকির হোসেন বলেন, “তিনি বলেছেন, দলের স্বার্থই সবার আগে। আমরা সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, ঐক্যবদ্ধ থাকব।
বরিশাল বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ১৭ বছর ধরে বিএনপির ওপর অমানুষিক নির্যাতন হয়েছে। এবার জনগণের ভালোবাসায় বিজয় উপহার দিয়েই তার জবাব দেব। রাজশাহী বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, ধানের শীষের পক্ষে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। ঐক্য থাকলে বিজয় অনিবার্য।
দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমান সম্প্রতি বিএনপির বাইরের পেশাজীবী, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনগুলোর মাধ্যমে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা যাচাই করেছেন। যাচাইয়ের ফলাফলে প্রতিটি আসনেই পাওয়া গেছে একাধিক জনপ্রিয় প্রার্থী। তবুও বিএনপি প্রতিটি আসনে একক প্রার্থী দিতে চায়, তাই চলছে এই বিশদ মতবিনিময়।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এখন ত্যাগ, ঐক্য ও শৃঙ্খলার বার্তা নিয়ে এগোচ্ছে। দলের ভেতরে প্রতিযোগিতা থাকলেও, বার্তাটি স্পষ্ট, ধানের শীষের বিজয়ের জন্য ত্যাগই এখন প্রকৃত নেতৃত্বের মানদণ্ড।
সুত্র-বার্তা বাজার
" বিবিসি সাতক্ষীরা "
সম্পাদক ও প্রকাশক : আব্দুল মতিন।
মেইল- bbcsatkhira@gmail.com ঠিকানা- পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরা, বাংলাদেশ।
zahidit.com