ডুমুরিয়ায় বানিজ্যিক ‌ভাবে মাছ চাষ করে সরাসরি কোলকাতার বিভিন্ন বাজারে বিক্রয়

শেখ মাহতাব হোসেন,ডুমুরিয়া খুলনা:  দেশি প্রজাতির পাবদা মাছ চাষ করে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হাসানপুর গ্রামের আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার (৩৮) সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর খামার থেকে তুলেই মাছ নিয়ে যাওয় হচ্ছে সরাসরি পশ্চিমবঙ্গে। বিক্রি হচ্ছে তা কলকাতার বাজারে। চাহিদা থাকায় তা গ্রামের আরও চাষিদের উৎসাহিত করছে।

 

 

উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের জোয়াদ্দার মৎস্য খামারে আলোচিত পাবদা চাষি ও যশোর থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২১ সালে হাসানপুর গ্রামের এক মসজিদের ৬ একর জলাশয় বছরে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হারি (ভাড়া) নিয়ে আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার, বন্ধু বেনজির জোয়াদ্দার-কে সঙ্গে নিয়ে পাবদা চাষ শুরু করেন। পূর্বের অভিজ্ঞতা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শে ওই বছর ফুলতলার ব্যবসায়ী টিটো মোল্লা’র মাধ্যমে বগুড়া থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার পাবদার বাচ্চা এনে চাষ করেন। ওই সঙ্গে ১০ হাজার পিস রুই-কাতলা-মৃগেল মাছও ছাড়েন। বছর শেষে সর্বমোট মাছ বিক্রি হয় ৫০ লাখ টাকা। খরচ ৩২ লাখ টাকা হলেও তাদের ১৮ লাখ টাকা লাভ থাকে।

 

 

 

অভিজ্ঞতা লাভ করেন তারা। পাবদা মাছ সাধারণত ৪ মাসের ফসল, একই পুকুরে বছরে ২ বার চাষ ও বিক্রি করা সম্ভব।’ ওই শিক্ষাকে কাজে লাগাতে চলতি বছর চৈত্র (মার্চ) মাসে পুকুর তৈরি শেষে ১ একরের নার্সিং পুকুরে ২৫ দিন বয়সী ৫ লাখ ৮ হাজার পাবদার বাচ্চা (পোনা) ছাড়েন। দেড় মাস পরে ওই পাবদাগুলো পাশেই ৪ একরের বড় জলাশয়ে ছাড়েন। তাছাড়াও ওই পুকুরে ৫ লাখ পারশে, ৫ হাজার ভাংগন ও ১০ হাজার পিস রুই জাতীয় সাদা মাছও ছাড়া হয়। নিয়ম মেনে সকল প্রকার খাবার ও ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি পুকুরের পানিতে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখতে সার্বক্ষণিক ৫টি এরেটর কাজ করছে। তাছাড়া পরিচর্যার কাজে আচেন ৪ জন কর্মচারি।

 

 

জোয়াদ্দার মৎস্য খামার থেকে পাবদা ধরে সাথে-সাথে বরফ দিয়ে বাক্স (কসকেট) বন্দি করে ট্রাকে করে যশোর-বেনাপোল সীমান্ত হয়ে সরাসরি কোলকাতার বিভিন্ন বাজারে নেওয়া হবে, এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে সম্প্রতি সকাল ১১টায় খুলনা মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক তোফাজ উদ্দিন আহমেদসহ একটি প্রতিনিধি দল সেখানে যান।

 

 

মাছ ধরা শেষে দুপুরে ২৩০ টাকা কেজি দরে ব্যবসায়ী টিটো মোল্লা ৮০ মন পাবদা কিনে প্যাকেটজাত করে ট্রাকে তুলে ভারতের কোলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। আর গতকাল শনিবারও তিনি ১০ মন নিয়ে গেছেন।

 

 

এ প্রসঙ্গে সফল পাবদা চাষি আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার বলেন, ২০১৬ সাল থেকে বিভিন্ন জাতের মাছ-সহ পাবদা চাষের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০২১ সালে বড় আকারে পাবদা চাষ শুরু করে সফল হয়েছি। প্রতি কেজি পাবদা উৎপাদনে ১৮০ টাকা খরচ হলেও বিক্রি হয় ২৩০ টাকা। এ বছরের প্রথম ৪ মাসে ২০ লক্ষাধিক টাকা খরচ হলেও গত ২ দিনে ১৩ লাখ টাকা বিক্রি করেছি। আশা করছি, এখনও ৩০ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হবে। তাছাড়া আগামী ২০ দিনের মধ্যে নাসিং পুকুর থেকে দেড়মাস বয়সী ৫ লাখ নতুন পাবদা বড় পুকুরে ছাড়বো। আড়াই মাস পরে সেগুলোও বিক্রি হবে। এভাবে বছরে ২ বারেরও বেশি পাবদা চাষ অব্যাহত রাখবো। পাবদা ব্যবসায়ী টিটো মোল্লা বলেন, আমি বগুড়া ও ময়মনসিং থেকে পাবদা’র রেনু পোনা এনে এই এলাকার চাষিদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি মাছের খাবার ওষুধও সরবরাহ করি। আর ৪ মাসের মাথায় তাদের খামার থেকেই মাছ কিনে যশোরের বাগআঁচড়া এলাকার কেবিসি কোম্পানির মাধ্যমে কলকাতায় নিয়ে বিক্রি করি। সেখানে পাবদা’র ভালো চাহিদা রয়েছে।

 

 

 

সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গলদা-বাগদা-রুই জাতীয় মাছের এলাকা বলে খ্যাত ডুমুরিয়াতে আজ বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির মাছ পাবদা চাষে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। তাকে স্বীকৃতি দিয়ে এবছর মৎস্য সপ্তাহের দৃষ্টিনন্দন কার্ডে বড় কাতলা মাছসহ আলাউদ্দিনের ছবি ছাপিয়েছি। খুলনা জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব পাল বলেন, মানুষের পুষ্টির চাহিদাপূরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, আর্থিক সমৃদ্ধি ও বৈদেশি মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে আমরা পাবদা চাষকে উৎসাহ দিচ্ছি। সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী খুলনা- ৫ সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, আমি মন্ত্রী থাকাকালে দেশি প্রজাতির মাছ চাষে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলাম। আজ খুব ভালো লাগছে, আমাদের ডুমুরিয়ার আলাউদ্দিন পাবদা চাষ করে ব্যতিক্রমী সাফল্য পেয়েছে। তার সাফল্য দেখে এলাকার বেকার যুবকরা মাছ চাষে এগিয়ে আসবে বলে আমি আশাবাদী।