ডুমুরিয়ায় বানিজ্যক ভাবে মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। মূল্য পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি

শেখ মাহতাব হোসেন,ডুমুরিয়া খুলনা। খুলনার বিখ্যাত উপজেলায় এবার বিষ মুক্ত মিষ্টি কুমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। মূল্য পাওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি।

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার বরাতিয়া গ্রামের প্রশান্ত ২ বিঘাপ্রতি জমিতে মাত্র ‌২২হাজার টাকা খরচ করে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে সেই কুমড়া বিক্রি হচ্ছে ১লক্ষ‌৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে লাভ থাকছে প্রায় ২০ গুন। বাজারে এমন দাম পাওয়ায় উপজেলার অনেক চাষী মিষ্টি কুমড়া চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

 

 

ডুমুরিয়া উপজেলায় এবার ২০ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে। সারা বছর কম-বেশি কুমড়ার চাষ হলেও আলুর মৌসুমে এর চাষ বেশি হয় বলে জানা গেছে। কৃষক আলু রোপণের পর সেই জমিতেই মিষ্টি কুমড়ার বীজ রোপণ করেন। যে কারণে জমিতে নতুন করে চাষ করতে হয় না। জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নে এবার কুমড়া চাষে এগিয়ে।

 

 

দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা সরাসরি কৃষকদের জমি থেকেই পাইকারী দরে কুমড়া কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। খুচরা বাজারে ৩৫-৪০ টাকা কেজি দরে কুমড়া বিক্রি হলেও কৃষক ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন মাত্র ২৫ থেকে ৩০টাকা দরে। বরাতিয়া গ্রামের কৃষক প্রশান্ত মন্ডল বলেন, এক বিঘা জমিতে প্রথমে আলুর আবাদ করেছিলাম। আলুর সঙ্গে মিষ্টি কুমড়ার বীজও রোপণ করেছিলাম। আলু তোলার পর এখন মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়েছে। ২ বিঘা জমিতে ১ লক্ষ ৫হাজার টাকার মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হবে বলে আশা করছি।

 

কৃষক মিলন হোসেন বলেন, মিষ্টি কুমড়ায় একবার সেচ ও হালকা কিছু সার দিতে হয়। এতে শ্রমিকের খরচসহ বিঘাপ্রতি সর্বোচ্চ ৫ -৬হাজার টাকা খরচ হয়। আর কুমড়া বিক্রি হবে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। আমার জমিতে থাইল্যান্ড ও ব্যাংককের মিষ্টি কুমড়া রয়েছে।

 

শোভনার কৃষক আশরাফুল ইসলাম বলেন, থাইল্যান্ড, ব্যাংকক, সুইটি ও ওয়ার্ডারবলসহ বিভিন্ন জাতের কুমড়া আমার জমিতে রয়েছে। ৮ শতক জমিতে খরচ পড়েছে ৮০০ টাকা। ১৮ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি।
এ বিষয়ে খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান জানান, জেলায় এবার ১৫৫ হেক্টর জমিতে কুমড়া চাষ হয়েছে। এবার বাজারমূল্যও ভালো। প্রতি হেক্টরে প্রায় ২০ মেট্রিক টন ফলন পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ ইনসাদ ইবনে আমিন জানান আমাদের দেশে মিষ্টি কুমড়া বারো মাসই পাওয়া যায়। মিষ্টি কুমড়া জনপ্রিয় ও সুস্বাদু একটি সবজি‌ এখন বানিজ্যক ভাবে মিষ্টি কুমড়ার চাষ হচ্ছে, তাছাড়া মিষ্টি কুমড়ার শুধু কুমড়া নয় এর ডগাও খুবই পুষ্টিকর। কচি মিষ্টি কুমড়া সবজি হিসেবে এবং পাকা ফল দীর্ঘদিন রেখে সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।

 

 

মিষ্টি কুমড়া তরকারি বা পণ্য হিসেবেও ব্যবসায়িক মূল্য রয়েছে। তাই মিষ্টি কুমড়া চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে ডুমুরিয়া চাষীদের। খুলনা সাতক্ষীরা সড়কের দুই পাশে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে মিষ্টি কুমড়ার গাছ। কৃষকের নিপুণ হাতে লাগানো কুমড়া গাছের সবুজ লতানো গাছ মাঠের মাটির উপর বিছানার মতো ছড়িয়ে আছে। কম খরচে অধিক ফলন পাওয়ায় এবং লাভজনক ফসল হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া চাষে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ।