সাতক্ষীরায় ইউরিয়া সারের চরম সংকট! হতাশায় কৃষক

দেবাশীষ চক্রবর্ত্তী বাবু: সার কৃষকের নিত্যদিনের কৃষিকাজের প্রয়োজনীয় উপাদেয় উপাদান। সার ছাড়া কৃষকের ফসল ফলানো অসম্ভব তেমনি ফসল ফলানো ছাড়া কৃষকের চলা অসম্ভব। বর্তমানে ভরা বোরো ধানের মৌসুমে এমন সার সংকটে দিশেহারা কৃষক।

অন্যান্য বছরের তুলনায় ধানের জমিতে সারের প্রয়োজন হচ্ছে বেশি, কারণ অনাবৃষ্টিতে সময় মত ধানের আবাদ করতে পারেনি কৃষক।  অসময়ে রোপনকৃত ধানের জমিতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সারের প্রয়োজন হয়। সে হিসেবে সারের প্রয়োজনীয়তা থাকা সত্বেও সার পাচ্ছে না সাধারণ কৃষক। তাই চরম আকারে ইউরিয়া সারের সংকট দেখা দিয়েছে কলারোয়ার বাজার গুলিতে।

অন্যান্য সারের পর্যাপ্ততা থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য ইউরিয়া সার পাওয়া যাচ্ছে বাজারে তাও আবার অধিক মূল্য দিয়ে ইউরিয়া সার ক্রয় করতে হচ্ছে। যেখানে ইউরিয়া সারের সরকার নির্ধারিত মূল্য ১৬ টাকা, সেখানে বাজার থেকে ৩০টাকা কেজি দরে ইউরিয়া সার ক্রয় করতে হচ্ছে। একদিকে সংকট অপর দিকে মূল্য বৃদ্ধি। এমন সার সংকট ও মূল্য বৃদ্ধিতে চরম হতাশায় ভুগছেন কৃষকরা।

এদিকে অন্যান্য সারের পর্যাপ্ততা থাকলেও ইউরিয়া সার বাজারে নেই বল্লেই চলে। ইউরিয়া সার ছাড়া অন্যান্য সার অকেজো, জমিতে অন্যান্য সারের সাথে ইউরিয়া সার প্রয়োগ না করলে সারের প্রয়োজনীয় ফলাফল পাওয়া যায় না।  তাই ইউরিয়া সার কৃষকের নিত্যদিনের অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। বাজারে ইউরিয়া সারের সংকট থাকায় অন্যান্য সারের প্রয়োজন তেমন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

সাতক্ষীরার কলারোয়ার ধানদিয়া বাজারে সার ব্যাবসায়ী মনিরুজ্জামান মনি সার সংকটের বিষয়ে জানিয়েছেন, কলারোয়ার ডিলার তাদের পর্যাপ্ত পরিমানে সার দিতে পারছে না, যা দিচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি সামান্য।

ধানদিয়ার আরেক সার ব্যাবসায়ী হাবিবুর রহমান হবি জানিয়েছেন,  পর্যাপ্ত পরিমানে সার না পাওয়ায় কৃষকদের সার দিতে পারছি না। যা দুই এক বস্তা দিচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য।

কলারোয়ার জয়নগরের কৃষক সুভাষ হাজরা জানিয়েছেন, ফসল ফলাতে কৃষকের নিত্য প্রয়োজন ইউরিয়া সার। সেই ইউরিয়া সার বাজারে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না, আর যদিও পাওয়া যাচ্ছে সেটা ২৮/৩০টাকা কেজি, তাও প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। এখন ফসলের ভরা মৌসুম সার দেওয়ার প্রয়োজন। এখনি এমন সার সংকটে আমি দিশেহারা। এমনকি সারের সন্ধানে বাজারে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছি।

কলারোয়ার জয়নগরের কৃষক তপন দাস জানিয়েছেন, এলাকার কোন বাজারে সার না পেয়ে পাটকেলঘাটা থেকে সার এনেছেন। এলাকার বাজারে ২৮/৩০ টাকা কেজি ইউরিয়া আর পাটকেলঘাটায় ২২/২৫ টাকা কেজি। কেনো যে এমন পার্থক্য তা বুঝতে পারছি না। ফসলের ভরা মৌসুমে ইউরিয়া সারের এমন সংকট কৃষকদের চিন্তায় ফেলেছে।

(১৫ সেপ্টেম্বর) সকালে কলারোয়ার ধনদিয়া বাজার ঘুরে একটি দোকানে ইউরিয়া ৩/৪ বস্তার দেখা মিলেছে, তাও ৩০ টাকা কেজির কমে দোকানি বিক্রয় করবেন না। তিনি বলছেন, বাইরের উপজেলা থেকে রাত ৪ টার দিকে চুরি করে সার কিনে এনেছেন, তাও বেশি দামে। এতে করে বোঝা যাচ্ছে সারের কৃত্রিম সংকট তৈরী করে কৃষকের সর্বনাশের পায়তারা করা হচ্ছে।

এব্যাপারে বিজ্ঞমহল আশংকা করছেন, এখনই যদি এই সমস্যার সমাধান না করা হয়। তাহলে সারের অভাবে যেমন ফসল ফলানো অসম্ভব হবে। তেমনি ফসল ফলাতে না পারলে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভবনাও আছে। এদিকে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা এব্যাপারে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।