দেশের বস্ত্রখাত এখন আর একজন মোড়লের ওপর নির্ভরশীল নয়। তবে কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গার্মেন্টস শিল্পকে ব্যবহার করতে চায়। অসন্তোষ সৃষ্টি করে আমাদের দেশের পণ্য উৎপাদনকে ব্যাহত করে, এ শিল্প বাজারটিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করছে বলে জানিয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। বুধবার দুপুরে সচিবালয়ে পোশাকশিল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে বিজিএমইএ’র পরিচালনা পর্ষদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রউফ, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসানসহ অন্যান্য নেতারা। নির্বাচনের আগে বলা হচ্ছিল পোশাক শিল্পের বাজার কমে যাচ্ছে, ছোট হয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন, বিজিএমইএ’র সভাপতি বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। আপনি যে জায়গার কথা ইঙ্গিত করছেন, আমিও সেই জায়গার কথা ইঙ্গিত করে, তার রিপোর্টে আজ আশ্বস্ত হয়েছি। আমরা একজন মোড়লের ওপরে নির্ভরশীল নই। বিশ্ববাজার আমরা দখল করছি। শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে তিনি বলেন, এখানে গার্মেন্টস মালিকদের অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে। আমি তাদের সামনেই বলতে চাই, গার্মেন্টস কর্মীদের বেতন কত ছিল, আজকে তাদের কত বেতন। আমি বলবো না তাদের অনেক বেতন। তবে আমি এ কথাও বলব, কেউ কেউ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে গার্মেন্টস শিল্পকে ব্যবহার করতে চায়। কেউ কেউ অসন্তোষ সৃষ্টি করে আমাদের দেশের পণ্য উৎপাদনকে ব্যাহত করে, এ শিল্পবাজারটিকে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র করে। সে ষড়যন্ত্র বার বার উদঘাটন হয়েছে এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি। যেখানে শ্রমিক আছে, যেখানে কর্মী আছে, যেখানে কর্মচারী আছে সেখানে দেনদরবার থাকবেই। কাজেই দেন দরবারের মধ্য দিয়েই আমাদের চলতে হবে। সবাইকেই একটি উইন-উইন অবস্থার মধ্যে দিয়ে চলতে হবে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সফলতার পরে স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে যে নবযাত্রা করেছেন সেই নবযাত্রায় আমরা সবাই মিলে এক সঙ্গে যোদ্ধা হিসেবে কাজ করব। যেকোনো জাতীয়/আন্তর্জাতিক পরিবেশ/পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমার সবাই বিগত দিনে ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি এবং থাকবো। বিজিএমইএর সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক পুরনো। এ শিল্পে যখনই সংকট তৈরি হয়েছে আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। সেটা কি অগ্নিকাÐ, কি শ্রমিক অসন্তোষ, কি রানা প্লাজা ধস সব জায়গাই আমি দায়িত্ব পালন করেছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে বিদ্যুৎ সরবরাহকে স্বাভাবিক রাখার জন্য। গ্যাস সংকট রয়েছে। এটাই স্বাভাবিক। গ্যাসের ব্যবহারও অনেক। চেষ্টার কোনো ত্রæটি করা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ব্যবহারে সর্বদা সাশ্রয়ী হতে হবে, মিতব্যয়ী হতে হবে। তিনি বলেন, ভারত ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) সনদ নিলেও টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ছিল, আমাদের আছে, আমাদের থাকবে। এজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাওয়াসহ যা যা করা দরকার তা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ভারত সরকার টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে সনদ দিয়েছে। পরে বাংলাদেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্টস, ডিজাইন এবং ট্রেডমার্ক বিভাগ (ডিপিডিটি) টাঙ্গাইল শাড়িকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে একটি জার্নাল প্রকাশ করে। ভারতও টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই সনদ নিয়েছে। এখন সরকার কী পদক্ষেপ নেবে-জানতে চাইলে বস্ত্রমন্ত্রী বলেন, রাতে যখন বিষয়টি আমরা অনলাইনে পেয়েছি, পর দিন সকালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিয়ে অফিসে বসেছি। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যে সংবাদটি পরিবেশন করেছে, আমাদের তৎপতার কারণে তারা সন্ধ্যার পর সেটি সরিয়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, সত্যি কথা-এটি আমাদের আগে নেওয়া উচিত ছিল। আমরা নিতে পারিনি। এখন আমাদের যেখানে যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমরা নিচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যাবো। মন্ত্রী বলেন, টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের ছিল, আমাদের আছে, আমাদের থাকবে। সেটি প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে যা যা করা দরকার আমরা তা করবো। আমরা এগোচ্ছি। এ সময় বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রউফ, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসানসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
https://www.kaabait.com