লাইফস্টাইল: সুস্থ থাকতে খাবার ও ঘুমের বিকল্প নেই। সারা দিনের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি কাটানোর জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি। তবে অনেকেরই ঘুম আসে না। চেষ্টা করেও মেলে না ফলাফল। এর ফলে ঘুমের ওষুধের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েন। তবে ঘুমের ওষুধ আপনার ঘুম আনলেও আপনি কি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানেন। তাই চলুন জেনে নিই ঘুমের ওষুধ নিয়মিত খেয়ে কী কী বিপদ ডেকে আনছেন- ¯িøপ ফাউন্ডেশনের মতে, অনিদ্রা, জেট ল্যাগ বা অন্য একটি অস্থায়ী সমস্যা যা আপনাকে রাতে জাগিয়ে রাখে সেগুলোকে সহায়তা করার জন্যও ঘুমের ওষুধ নেয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই মনে রাখবেন, ঘুমের ওষুধ দীর্ঘমেয়াদী কোনো সমাধান নয়। সুস্থ থাকতে আপানকে এটি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এছাড়া আপনার যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমিয়ে পড়তে সমস্যা হয় তবে ঘুমের ওষুধগুলো আপনাকে আপনার শোবার সময়সূচীর সাথে সামঞ্জস্য করতে সাহায্য করতে পারে। তবে এগুলি দুই সপ্তাহের বেশি কোনোভাবেই নেয়া উচিত নয়।
দ্রæত সহনশীলতা গড়ে তুলতে পারেন
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক ¯িøপ ডিসঅর্ডার সেন্টারের একজন চিকিৎসক প্রীতি দেবনানি বলেছেন, আপনি যখন দীর্ঘ সময়ের জন্য প্রেসক্রিপশনে ঘুমের ওষুধ খান, তখন আপনার শরীর ওষুধের সাথে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে। এ কারণে ঘুমের ওষুধ দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার করা উচিত নয়। এগুলোকে প্রয়োজনের ভিত্তিতে নেয়া উচিত। এছাড়া ওষুধ খাওয়াটা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং কারো কারো ক্ষেত্রে ওষুধ খাওয়ার পরও কাজ হয় না।
অন্য পদার্থের সাথে ঘুমের ওষুধ মেশানো উচিত নয়
ঘুমের ওষুধের ক্ষেত্রে ডোজের দিকে মনোযোগ দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে আপনাকে অন্য ওষুধগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিহিস্টামাইনস, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস এবং অ্যান্টি-অ্যাংজাইটি ওষুধ ইত্যঅদি। এগুলো আপনার ওষুধের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া ঘুমের ওধুষ সেবনের সময় অ্যালকোহল পান করা যাবে না। ঘুমের ওষুধ সেবনের সময় অ্যালকোহল পানে মৃত্যুও হতে পারে। ঘুমের ওষুধ আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসকে আরও ধীর করে দেয়। আপনি যদি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের কোনো রোগে আক্রান্ত থাকেন, সেক্ষেত্রে ঘুমের ওষুধ আপনার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।
তন্দ্রাচ্ছন্ন এবং কম সতর্ক বোধ করা
ঘুমের ওষুধের কারণে এক ধরনের ঘোর কাজ করে। এছাড়া মাথা ঘোরা, ঝিমুনি ভাব, সকালের পর মানসিকভাবে কম তীক্ষ্ণ বোধ করার মতো সমস্যা হতে পারে। এই উপসর্গগুলো বিশেষত তীব্র হয় যদি আপনি ওষুধের প্রভাব থেকে দূরে ঘুমানোর জন্য নিজেকে আট ঘণ্টার বিশ্রাম না দেন বা যদি আপনি রাতের মাঝপথে অন্য ডোজ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের কনজিউমার রিপোর্টের সমীক্ষা অনুসারে, প্রায় ৪০ শতাংশ আমেরিকান যারা ওভার-দ্য-কাউন্টার ঘুমের ওষুধ গ্রহণ করে। তারা বলেছে যে, তারা পরের দিন সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন বা তন্দ্রাচ্ছন্ন বোধ করে। আরও ৩২ শতাংশ যারা প্রেসক্রিপশন ¯িøপ এইড গ্রহণ করে তারা এই লক্ষণগুলো অনুভব করে।
অস্বাভাবিক আচরণ
অস্বাভাবিক কথাবার্তা বলা বা স্থূল কথা বলা ঘুমের ওষুধের আরেকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। অনেকেই ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পর এ ধরনের আচরণ করে থাকেন। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ সেবনের কারণে অনেকেরই অ্যামনেশিয়া বা স্মৃতিলোপের সমস্যা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই অবস্থা পরিবর্তনের জন্য মেডিটেশন করা জরুরি। ২০২০ সালে জার্নাল অফ কনটেম্পোরারি ফার্মেসি প্র্যাকটিস-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্করা যারা প্রতি রাতে ঘুমের বড়ি সেবন করেন তাদের পড়ে যাওয়া বা বিভিন্ন আঘাতের সম্মুখীন হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। হঠাৎ পড়ে যাওয়া ঘুমের ওষুধ খাওয়ার আরেকটি সমস্যা। ঘুমের ওষুধ বেশি সেবন করলে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হতে দেখা যায়।
কোমা অথবা মৃত্যু
দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের ওষুধ খেলে অবসাদগ্রস্ত বা বিষাদগ্রস্ত শ্বাসের সমস্যা হতে পারে। অবস্থা জটিল হলে এর ফলে মৃত্যু বা কোমায় চলে যাওয়ার মতো কঠিন অবস্থাও তৈরি হতে পারে। যারা অ্যাজমার রোগী তাদের এই ওষুধ সবসময় এড়িয়ে যাওয়া ভালো। ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) ব্যতীত যে ওষুধগুলো বিক্রি করা যায় না, ঘুমের ওষুধ তার মধ্যে অন্যতম। ঘুমের ওষুধের ফলে দেহে বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকা জরুরি।
https://www.kaabait.com