খুলনার ডুমুরিয়ায় ইট ভাটায় ব্যবহার হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এতে জমির উর্বরতা নষ্ট হওয়ায় ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বছরে একাধিকবার ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে ইট ভাটায়। খুলনা ডুমুরিয়া কৃষি অধিদপ্তর এই ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন কৃষকরা।
চারপাশে ফসলি জমি তার মাঝে ইটভাটা। আর ইট তৈরির জন্য মাটি নেয়া হচ্ছে আশপাশের ফসলি জমি থেকে। জমির উপরের অংশের উর্বর মাটি ইটভাটায় চলে যাওয়ায় ফলন কমে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, খুলনা জেলায় ডুমুরিয়া ইটভাটা রয়েছে; সেগুলোর ৬০টি এলাকায়। একেকটি ইট ভাটার কারণে কমপক্ষে চার একর ফসলি জমি নষ্ট হয়। এভাবে ১২০টি ইট ভাটায় ৪৮০ একর জমি নষ্ট হয়েছে। এসব তিন ফসলি জমিতে বছরে প্রায় দুই হাজার পাঁচশ মন চাল উৎপাদন করা যেতো যা দিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের শর্করার চাহিদা মেটানো সম্ভব।ভাটা। এতে পারবেশ ও ফসল
উৎপাদন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
এদিকে পদ্মা নদী থেকে সারাবছর অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালি ও কৃষি জমির টপ সয়েলের সহজলভ্যতার কারণে এরইমধ্যে শহর সংলগ্ন গুটুদিয়া ইউনিয়নের ওয়াপদার রাস্তায় পার্শ্বে গড়ে উঠেছে এক ডজনেরও বেশি ইটের ভাটা। এর মধ্যে একেবারেই গ্রামীণ এলাকা ডাঙ্গা জমিতে মাত্র ২০০ গজের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি ইটভাটা। এভাবে কৃষি জমির ওপর একের পর এক ইটের ভাটা গড়ে ওঠায় ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। সেইসাথে নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশগুলো বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ইট ভাটার চিমনির ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ ছড়াচ্ছে। ধোঁয়া ও ধুলা দূষণে বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ। ডাঙ্গা কৃষি জমি ধ্বংস করে পাশাপাশি তিনটি ইটের ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে কালু নামের জৈনক ব্যাক্তীর দুটো পুরনো ভাটার পাশাপাশি তিন ফসলি জমিতে বছরে প্রায় দুই হাজার পাঁচশ মন চাল উৎপাদন করা যেতো যা দিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার মানুষের শর্করার চাহিদা মেটানো সম্ভব।
একদিকে ভাটার ধোঁয়া অন্য দিকে মাটি ও ইট বোঝাই ট্রাকের কারণে শব্দ ও বায়ু দূষণ চরম আকার ধারণ করছে। এতে আশপাশের এলাকার মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে। এসব ইট ভাটা কৃষি জমির অপূরণীয় ক্ষতি করছে। জমি থেকে মাটি নিতে বাধা দিলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে জমির মালিক বা কৃষককে।
স্থানীয়রা জানান, ইটভাটায় চলাচলকারী ট্রাকের কারণে সৃষ্ট ধূলায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। প্রভাবশালীদের ভয়ে কিছু বলার সাহস পান না ভূক্তভোগীরা। ইট ভাটার কারণে ফসলি জমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন খুলনা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ হাফিজুর রহমান জানালেন, ২০২৫ সাল নাগাদ এসব ভাটা আর থাকবে না।বিভাগীয় কৃষি অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহন কুমার ঘোষ বলেন, এসব অবৈধ ইটভাটা খুব দ্রুত বন্ধ করে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এভাবে ইটভাটায় ফসলি জমির মাটি ব্যবহার করা হলে, পরিবেশের ওপর ব্যাপক বিরুপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
তবে যে হারে ফসলি জমি থেকে মাটি নেয়া হচ্ছে তাতে ২০২৫ সাল নাগাদ জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি আর অবশিষ্ট থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলের মোট ফসলি জমির পরিমাণ ৩ লাখ ৩২ হাজার ৯১৮ হেক্টর। এর মধ্যে নিট ফসলি জমি ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯৫৮ হেক্টর। পতিত জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৪৬২ হেক্টর। এক ফসলি জমি ১৪ হাজার ১৭ হেক্টর। দো-ফসলি জমি ৭১ হাজার ৭১২ হেক্টর এবং তিন ফসলি জমির পরিমাণ ৫২ হাজার ৪০৪ হেক্টর। জেলা-উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সর্বত্রই প্রতিদিন অবৈধভাবে আবাদি জমি ধ্বংস করে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। ডুমুরিয়া এলাকা থেকে এসকেবেটার মেশিন (খনন যন্ত্র) দিয়ে অবৈধভাবে মাটি খনন করে গাড়িতে নতুন নির্মিত রাস্তা দিয়ে প্রতিনিয়ত মাটি নেওয়ার কারণে রাস্তার দুই পাশ ভেঙে যাচ্ছে।
শহর ঘেঁষে বিভিন্ন গ্রাম এলাকার কৃষি জমিতে একের পর এক গড়ে উঠেছে ইটের ভাটা। এতে পরিবেশ ও ফসল উৎপাদন মারাত্মক এটা ভাটা। এতে পারবেশ ও ফসল উৎপাদন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
এদিকে পদ্মা নদী থেকে সারাবছর অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালি ও কৃষি জমির টপ সয়েলের সহজলভ্যতার কারণে এরইমধ্যে শহর সংলগ্ন গুটুদিয়া ইউনিয়নের খড়িয়া মৌজার মেসার্স মাষ্টার বিকস গড়ে উঠেছে ৫/৬ বেশি ইটের ভাটা। এর মধ্যে একেবারেই গ্রামীণ এলাকা ডাঙ্গা জমিতে থেকে মাত্র ২০০ গজের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি ইটভাটা। এভাবে কৃষি জমির ওপর একের পর এক ইটের
ভাটা গড়ে ওঠায় ফসলি জমি কমে যাচ্ছে। সেইসাথে নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশগুলো বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ইট ভাটার চিমনির ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ ছড়াচ্ছে। ধোঁয়া ও ধুলা দূষণে বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ। কৃষি জমি ধ্বংস করে পাশাপাশি তিনটি ইটের ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁন মিয়া ও লিয়াকত মাতুব্বরের দুটো পুরনো ভাটার পাশাপাশিআরশাদ ব্যাপারী মালিকানাধীন মাষ্টার ব্রিকস ও এম এক্স ব্রিকস নামে নতুন আরও একটি ইটের ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল লতিফ জমাদার বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে ভাটা তৈরি হোক এটা আমরাও চাই না। তাহলে পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে তাদের অনুমতি দেয়?
সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া ইউনিয়নের খড়িয়া মৌজার ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। ভাটা মালিকরা ফসলি জমি কেটে মাটি গিলে খাচ্ছে। মাটি কাটছেন এমন একটি ফসলি জমির মালিক কালু গুটুদিয়া ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রামের মোসলেম মোল্যা বলেন, মাটির ভালো দাম পাওয়ায় জমির মাটি বিক্রি করে দিয়েছি। জমির ফসলে তেমন লাভ না হওয়ায় মাটি বিক্রি করে পুকুর খনন করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের সুনাল বিশ্বাস, কমল কুমার বালা, জয়দেব বিশ্বাস, সুতালীয়া গ্রামের অমর বিশ্বাস, ময়না গ্রামের মুকুল কুমার, তারা জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্বোধন কর্তৃপক্ষের আশু তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান।।
https://www.kaabait.com