আন্তর্জাতিক: তাইওয়ানের ‚ভুমিকম্পে এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্মকর্তারা বলছেন। আহত হয়েছে আরো ৭১১ জন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ৭৭ জন আটকা পড়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন বলেছেন, উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে এবং কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার আহবান জানিয়েছেন। এদিকে চীনা কর্তৃপক্ষ ভুমিকম্পের পরপরই একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে, তারা এই দুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা দিতে ইচ্ছুক। চীনের পূর্ব-উপকুল তাইওয়ান থেকে মাত্র ১৮০ কিলোমিটার (১১১ মাইল) দূরে অবস্থিত। স্টেট কাউন্সিলের তাইওয়ান অ্যাফেয়ার্স অফিসের মুখপাত্র ঝু ফেংলিয়ান বলেছেন, ‘মূল ভ‚খÐ পরিস্থিতি নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন এবং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আন্তরিক সহানুভ‚তি প্রকাশ করেছে।’ এর আগে তাইওয়ানের পূর্ব উপক‚লে ৭.৫ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভুমিকম্প আঘাত হেনেছে। স্থানীয় সময় বুধবার সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে ১৫.৫ কিলোমিটার গভীরে ভুমিকম্পটি আঘাত হানে। এর জেরে তাইওয়ান ও এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়। পরে অবশ্য সেই সতর্কতা তুলে নেওয়া হয়। এ ছাড়া কমপক্ষে ৯টি ৪ বা তার বেশি মাত্রার আফটারশক দেশটিতে আঘাত হানে। ২৫ বছরের মধ্যে এটি তাইওয়ানের সবচেয়ে শক্তিশালী ভুমিকম্প বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মার্কিন ভুতাত্তি¡ক জরিপ অনুসারে, ভ‚মিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল তাইওয়ানের হুয়ালিয়েন শহরের প্রায় ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল) দক্ষিণে। হুয়ালিয়েনে একাধিক ভবন আংশিকভাবে ধসে এবং হেলে পড়েছে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাজধানী তাইপেইতে অবস্থিত ভবনগুলো শক্তিশালী ভ‚মিকম্পে কাঁপছে। তাইওয়ানের পাহাড়ি অঞ্চলও শক্তিশালী ভুমিকম্পে কেঁপে ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, ভ‚মিকম্পে বিশাল ভ‚মিধস হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি থেকে সেরে উঠতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তরা। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর ফুটেজে দেখা গেছে, ধসে পড়া আবাসিক ভবন, বাড়ি ও স্কুল থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় টিভিবিএস-এর ভিডিও অনুসারে, ভুমিকম্পে যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ইন্টারনেট মনিটরিং গ্রুপ ‘নেটবুক’ অনুসারে, দ্বীপটি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং ইন্টারনেট বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। এদিকে প্রতিবেশী জাপানের কর্তৃপক্ষ সতর্ক করে বলেছিল, ৩ মিটার পর্যন্ত সুনামির ঢেউয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম উপক‚লের বিশাল এলাকায় আঘাত হানতে পারে। তবে জাপানের আবহাওয়া সংস্থা পরে এই সতর্কতা তুলে নেয় এবং বাসিন্দাদের প্রায় এক সপ্তাহ পরবর্তী আফটারশকের জন্য সতর্ক থাকতে বলে। ফিলিপাইনের সিসমোলজি এজেন্সিও ভুমিকম্পের পরপরই সুনামির সতর্কতা জারি করে। বাসিন্দাদের উঁচু স্থানে সরে যাওয়ার আহবান জানায়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র ভুমিকম্পের প্রায় দুই ঘণ্টা পর জানায়, সুনামির হুমকি এখন কেটে গেছে। চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, চীনের দক্ষিণ-পূর্ব ফুজিয়ান প্রদেশের কিছু অংশে কম্পন অনুভুত হয়েছে। তাইপেইয়ের সিসমোলজি সেন্টারের পরিচালক উ চিয়েন ফু বলেছেন, ‘সমগ্র তাইওয়ান এবং উপক‚লীয় দ্বীপগুলোতে এ ভুমিকম্প অনুভ‚ত হয়… যা ২৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল।’ ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বরে তাইওয়ানে ৭.৬ মাত্রার ভ‚মিকম্প আঘাত হানে। ওই ভুমিকম্পে দুই হাজার ২০০ লোক মারা যায় এবং পাঁচ হাজার ভবন ধ্বংস হয়ে যায়। সূত্র : বিবিসি
https://www.kaabait.com