ধর্ম: কোরআনে কারিম নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ২৩ বছরব্যাপী বিভিন্ন ঘটনাকে উপলক্ষ করে নাজিল হলেও এর বিধানগুলো চলমান সব সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর। মহান আল্লাহ মানবজাতিকে পৃথিবীতে প্রেরণ করে তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য যে দিকনির্দেশনা দান করেছেন, তার অপরিহার্যতা বর্ণনার ভঙ্গি প্রবাহে ঐতিহাসিক ঘটনার চিত্র তুলে ধরে মানবজাতিকে এ থেকে শিক্ষাগ্রহণের জোর তাগিদ প্রদান করেছেন।মহান আল্লাহ এসব পথভ্রষ্ট মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য নবী-রাসুলদের প্রেরণ করেছেন। তাদের মাধ্যমে পাঠানো বিধানসমূহ নাজিল করেছেন। এ কিতাব (কোরআন মাজিদ) যাতে রয়েছে অলঙ্ঘনীয় বিধান, যা অকাট্য দলিল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন, ‘এটা সেই কিতাব যাতে কোনোই সন্দেহ নেই, (আর এটা) পথ প্রদর্শনকারী পরহেজগার (আল্লাহভীরু)-দের জন্য।’-সুরা বাকারা : ২
এভাবে কোরআন মাজিদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রয়োজনে আল্লাহতায়ালা যে সুরা এবং আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছেন, তা শুধু ওই সময়ের প্রয়োজনই মেটায় না, তা মানবসমাজের অনাদিকালের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের নির্ভুল সূত্র উদঘাটন করে থাকে। মক্কার মুশরিক কোরাইশরা নবী কারিম (সা.) ও মুসলমান জনগোষ্ঠীর সঙ্গে নেতিবাচক আচরণ, ষড়যন্ত্র, অকথ্য অত্যাচার ও নির্যাতন করত তার মুখোশ উন্মোচন করে আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে বাতিল শক্তির বিরুদ্ধে যে নীতি-কৌশল অবলম্বনের বিধান নাজিল করেছেন, তা বর্তমান বিশ্বের চলমান ঘটনা প্রবাহের জটিলতা নিরসনসহ মুসলিম জাতিকে সঠিকপন্থা পদ্ধতি গ্রহণের তাগিদ প্রদান করে। নবী কারিম (সা.)-এর ইসলাম প্রচার যুগে ইসলাম বিদ্বেষীরা যেসব বাধার পাহাড় গড়ে তুলেছিল, সে সম্পর্কিত কর্মকৌশল নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহতায়ালা নবী কারিম (সা.)-এর কাছে যে বার্তা প্রেরণ করেন তা এ রকম- ‘সুতরাং আপনি এর প্রতিই আহŸান করুন এবং হুকুম অনুযায়ী অবিচল থাকুন; আপনি তাদের খেয়ালখুশির অনুসরণ করবেন না। বলুন, আল্লাহ যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আমি তাতে বিশ্বাস স্থাপন করেছি। আমি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ আমাদের পালনকর্তা ও তোমাদেরও পালনকর্তা। আমাদের জন্য আমাদের কর্ম এবং তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম। (অতএব) আমাদের ও তোমাদের মধ্যে বিবাদ নেই (কারণ) আল্লাহ আমাদের (সবাই)-কে সমবেত করবেন এবং তারই দিকে প্রত্যাবর্তন হতে হবে।’-সুরা শুরা : ১৫
হাফেজ ইবনে কাসির (রহ.) বর্ণিত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, আয়াতটির ১০টি বাক্যে বিশেষ বিশেষ বিধানের কথা বলা হয়েছে। আয়াতটিতে প্রথম যে বিধানটির বিষয় উল্লেখ রয়েছে, তা হলো- যদিও মুশরিকদের কাছে আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত কঠিন মনে হয়, তথাপি আপনি এ দাওয়াত দান কার্যক্রম থেকে বিরত হবেন না বরং সব প্রতিক‚লতা মোকাবিলা করে এ কঠিন দায়িত্ব পালন করতে থাকুন। দ্বিতীয়ত, আপনি এ দ্বীনের ওপর স্বয়ং নিজে অবিচল থাকুন যেমন আপনাকে আদেশ করা হয়েছে। এ আদেশের উদ্দেশ্য হলো- যাবতীয় বিশ্বাস, কর্ম, চরিত্র, অভ্যাস ও সামাজিকতার যথাযথ সমতা ও ভারসাম্য কায়েম রাখুন। তৃতীয় যে বিষয়টি এ আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে, তা হলো- মহান রবের পক্ষ থেকে যে বিধান প্রচারের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছে তা প্রচারের ব্যাপারে কারোর তোয়াক্কা না করে সঠিক সিদ্ধান্তে দৃঢ় থাকুন। বর্ণিত এ কথার দ্বারা যে বিষয় প্রমাণিত হয়, তা হলো- সত্য, ন্যায় তথা আল্লাহর একত্ববাদের উঁচু আওয়াজ কোনো প্রতিবন্ধকতাতেই স্তিমিত হওয়ার নয়। চতুর্থ হলো- হে রাসুল! আপনি ঘোষণা করুন আল্লাহতায়ালা যত কিতাব নাজিল করেছেন, সবগুলোর প্রতি আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি। মানুষ সৃষ্টির পর থেকে যুগে যুগে যত নবী এসেছেন, তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা যত বিধান নাজিল করেছেন, সবগুলোকে অকপটে মেনে নেওয়াটাই হলো ইসলামের নিঃশর্ত দাবি। এ আয়াতে পঞ্চম যে বিষয়টির বলা হয়েছে, আমি তোমাদের মধ্যে ন্যায়বিচার করতে আদিষ্ট হয়েছি। এখানে পারস্পরিক বিরোধের মামলা মোকাদ্দমার বিষয়ে আল্লাহ রাসুলসহ (সা.) মুসলিম উম্মাকে ন্যায়, সাম্য ও শান্তির জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। ষষ্ঠত, আল্লাহ আমাদের সবার ¯্রষ্টা ও পালনকর্তা। এখানে যে বিষয়টি বোঝানো হয়েছে যে, কেউ মেনে নিক বা না নিক আল্লাহ সবারই ¯্রষ্টা অর্থাৎ সবাইকে সৃষ্টি করেছেন তিনি এবং সবাইকে লালন-পালন করেন তিনি। সপ্তম যে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে, তা হলো- আমাদের কাজকর্ম আমাদের জন্য কাজে লাগবে আর তোমাদের কর্মকাÐের জন্য তোমরা দায়ী থাকবে। আল্লাহতায়ালা মানুষকে জ্ঞান বুদ্ধি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন এবং ভালোমন্দ বিচার বিবেচনা করার মতো শক্তি দান করেছেন। কাজেই মানুষ যার যার কাজের জন্য সে নিজেই দায়ী থাকবে। অষ্টম বিষয় হলো- সত্য, স্পষ্ট ও প্রমাণিত হবার পরও যদি তোমরা সত্য বিরোধিতা অব্যাহত রাখো এবং শত্রæতাকেই কাজে লাগাতে থাকো তাহলে এসব তর্ক-বিতর্কের কোনো অর্থ নেই, তোমরা আমাদের দ্বীনি কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে তোমরা যে ভ্রান্তপথে চলছ চলতে থাকো। নবম বিষয়টি আল্লাহতায়ালা আল্লাহদ্রোহীদের পরিষ্কারভাবে তার রাসুল (সা.)-এর মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছেন- কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ সবাইকে একত্র করবেন। ওই দিন সবাইকে তিনি নিজ নিজ কর্মের প্রতিফল দান করবেন তখন তোমরা বুঝতে পারবে কারা সঠিক পথের অনুসারী ছিল? দশম বিষয় হলো- আমরা সবাই তার কাছেই প্রত্যাবর্তন করব। পৃথিবীতে কেউই যে চিরদিন থাকবে না এ কথা চিরসত্য। সেই মহাপ্রভুর দরবারে জবাবদিহির জন্য তৈরি হয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আয়াতটির বিষয়বস্তু বর্তমান সময়ের জন্যও অতিশয় প্রাসঙ্গিক। কারণ বর্তমান বিশ্বে ইসলাম বিরোধীরা যেভাবে ইসলামি আন্দোলন, ইসলামের প্রচার-প্রসার ও কাজকর্মকে স্তিমিত করে দেওয়ার অপচেষ্টায় তৎপর, তার পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামের পক্ষের লোকদের এ বিষয়গুলো সামনে রেখেই সত্যের পথে অগ্রসর হতে হবে।
https://www.kaabait.com