পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারবে বলে উল্লেখ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। শনিবার সকালে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ‘ভুটান থেকে বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর’ সর্বশেষ আপডেট তথ্য নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন মন্ত্রী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি বাংলাদেশে আগেও অনেক হয়েছে, তবে বিদেশি প্রথম রোগী ভুটানের ২৩ বছর বয়সী কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী কারমা দেমার সফল সার্জারি বার্ন ইনস্টিটিউটের একটি বড় অর্জন। তিনি আরও বলেন, দেশের চিকিৎসায় সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানোর লক্ষ্যেই কাজ করছে সরকার। এ ছাড়া ভুটান বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থেকে ১০-১৫ ইউনিটের বার্ন ইউনিট করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অন্তত সার্কভিত্তিক দেশগুলোতে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বিভিন্ন ক্যাম্প করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসকরা মানের দিক থেকে বিশ্বের কোনো দেশের তুলনায় পিছিয়ে নেই। তবে, তাদের মেধা প্রকাশে সুযোগের ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় চিকিৎসকদের জন্য সুযোগ তৈরিতে কাজ করার কথা জানান তিনি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ভালো কাজ করার জন্য পরিবেশ লাগে। সেই পরিবেশের অভাবে অনেকে তাদের জ্ঞানটা ঠিকমতো প্রকাশ করতে পারে না। শুধু এ কারমা দেমার (ভ‚টান থেকে আসা রোগী) বিষয় নয়, সা¤প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের চিকিৎসকরা মাথা জোড়া লাগানো শিশুকে অপারেশনের মাধ্যমে সফলভাবে আলাদা করেছেন। যদিও হাঙ্গেরির চিকিৎসক ছিল। তারপরেও বাংলাদেশি চিকিৎসকদের যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে, তা প্রশংসার দাবিদার। অপারেশনের পরেও চিকিৎসার অনেক বিষয় থাকে, তা আমাদের চিকিৎসকরাই দেখেছেন। ওপরওয়ালার আশির্বাদে বাচ্চা দুইটা এখনও সুস্থ অবস্থায় বেঁচে আছে। এটি বিশ্বে একটি বিরল ঘটনা। প্রথমবার বিদেশ থেকে রোগী আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভ‚টানে আমাদের একটা টিম গিয়েছিল। আমরা যখন গিয়েছিলাম, আমি আউটডোরে ছিলাম তখন এ মেয়েটা সম্পর্কে আলাপ হয়। আমরা তাকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার কথা ভাবি। আমি সে সময় সেদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং প্রধানমন্ত্রীকে মেসেজ করি। আমরা তাকে একজন রোগী নিয়ে আসার কথা জানাই। তিনি আমাদের বলেন ঠিক আছে নিয়ে আসো। কারমা দেমার চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার প্লাস্টিক সার্জারিতে চিকিৎসকরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তাদের পরিশ্রমের ফলে মেয়েটাকে আজকে এ অবস্থায় আনা সম্ভব হয়েছে। সে এর আগে দিল্লিসহ অনেক জায়গায় গিয়েছে। কিন্তু কোনো স্থানেই তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। যে অপারেশনটি করা হয়েছে তা এখানেই শেষ নয়। এরপরেও আরও অপারেশন আছে। আমরা এখন তাকে ছেড়ে দেবো, পরে আবার আসবে। তখন তার নাককে আরও সুন্দর পর্যায়ে নিয়ে যাবো। এর মাধ্যমে আমি শুধু এটুকু মেসেজ দিতে চাই যে, আমরাও পারি। সেই প্রথম রোগী যে মেডিকেল ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। এজন্য প্রত্যেকের সহযোগিতা পেয়েছি। সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় জানিয়ে সামন্ত লাল সেন বলেন, কয়েকদিন আগে নেপালের রাষ্ট্রদূত আমার কাছে এসেছিলেন। আমি উনাকেও বলেছি, আমরা নেপালেও এমন একটি টিম নিয়ে যেতে চাই। সেখানে যদি এমন ক্রিটিক্যাল রোগী থাকে, উনারে যেন আমাদের এখানে নিয়ে আসেন। আমরা চাচ্ছি, সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে একটি পারস্পরিক সম্পর্ক তৈরি করতে। তারা আমাদের এখানে আসবে এবং আমরা যাবো। আমরা মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে কাজ করবো। এর আগে ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্লাস্টিক সার্জারি টিম ভুটানে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুদেশের সরকারের উদ্যোগে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে সাত দিনব্যাপী প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প পরিচালিত হয়। ওই ক্যাম্পে বাংলাদেশের সার্জনরা ১৬টি সফল জটিল প্লাস্টিক সার্জারি করেন। সেই ক্যাম্পেই প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নাক ঠিক করার জন্য কারমা দেমাকে নিয়ে আসা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভুটানের রাষ্ট্রদূত রিনচেন কুয়েনসিলসহ ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
https://www.kaabait.com