জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব খুলনা কৃষি অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই কৃষি উৎপাদন ও কৃষিজীবী মানুষের জীবিকায় নেতিবাচক ছাপ ফেলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাড়ছে লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা। দুর্বল পোল্ডার ও বেড়িবাঁধ ব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত চিংড়ি চাষ, জলোচ্ছ্বাস এবং উচ্চ জোয়ারের পানিতে কৃষিজমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে চাষাবাদে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
এছাড়া মানসম্পন্ন কৃষি উপকরণের স্বল্পতা, শ্রমিক সংকট এবং শুষ্ক মৌসুমে মাটি ও পানির অতিরিক্ত লবণাক্ততা অনেক জমিকে অনাবাদি করে ফেলছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খুলনা কৃষি অঞ্চলে গ্রহণ করা হয়েছে “ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে খুলনা কৃষি অঞ্চলের জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন প্রকল্প”।
প্রকল্পটি ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর তারিখে ৪৯.৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত হয় এবং ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে এর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পটি খুলনা বিভাগের ৪টি জেলা—নড়াইল, খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের ২৮টি উপজেলা এবং ২টি মেট্রো অফিসে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ জুন ২০২৫।
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে খুলনা অঞ্চলে রবি ও খরিপ মৌসুমে মোট চাষযোগ্য জমির প্রায় এক-চতুর্থাংশ পতিত পড়ে থাকে। এই সমস্যা সমাধানে রিলে ফসল, মিশ্র ফসল, আন্তঃফসল, পলি-মালচ, সর্জন ও ডিপ সেচ প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা পতিত জমিকে আবাদে নিয়ে আসছেন। এতে কৃষি উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে।
প্রকল্পটি দক্ষ পানি ব্যবস্থাপনা, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষা, ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার, উন্নত যান্ত্রিকীকরণ, অভিযোজন সক্ষম ফসল উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাস্তবভিত্তিক কাজ করছে। কৃষকেরা স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত হয়ে প্রাথমিক উৎপাদন, বাজার বিশ্লেষণ ও আয় বাড়ানোর পদ্ধতি রপ্ত করেছেন। এতে করে তারা উৎপাদনে যেমন সফল, তেমনি খরচ সাশ্রয়েও উপকৃত হয়েছেন।
প্রকল্পের আওতায় অনেক এলাকায় মিনি পুকুর ও বরো পিট খনন করা হয়েছে, যা এক ফসলি জমিকে দুই ফসলিতে রূপান্তর করেছে। জলাবদ্ধতা দূর করে জমির জো অবস্থা আনয়ন করা হয়েছে, ফলে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে। সূর্যমুখী এক্সপেলার মেশিন সরবরাহের মাধ্যমে এ অঞ্চলে সূর্যমুখীর আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোকোনাট ক্লাইম্বারের মাধ্যমে নারিকেল গাছে আরোহন ও পরিচর্যা সহজ হয়েছে।
ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্প এলাকায় অভ্যন্তরীণ সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, স্বল্প পানির ফসল আবাদ, ঘেরের পাড়ে আগাম উচ্চমূল্যের ফসল চাষ, গ্রীষ্মকালীন সীম, টমেটো, অফ সিজন তরমুজ ও সূর্যমুখীর চাষাবাদ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। স্থানীয় ফসলের উন্নত জাত ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য সংরক্ষণ ও ফলন বৃদ্ধিতে কৃষকেরা নতুন উদ্দীপনা পেয়েছেন।
এই প্রকল্পের ফলে খুলনা অঞ্চলের কৃষকরা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় কার্যকর অভিযোজন সক্ষমতা অর্জন করছেন। বছরের পর বছর পতিত থাকা জমি এখন উৎপাদনের আওতায় এসেছে, যা শুধু কৃষি নয়—সারা উপকূলীয় অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথকে গতিশীল করে তুলছে।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার বলেন বাণিজ্যিক কৃষি র জন্য আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য এবং ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি বিকল্প নেই। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ডুমুরিয়ার অনেক কৃষক ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি তাদের মাঠে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আধুনিক টেকসই ও লাভজন বাণিজ্যিক কৃষি করতে সক্ষম হয়েছে। এ সকল প্রযুক্তি ডুমুরিয়া সকল কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সব সময় ডুমুরিয়া কৃষি অফিস পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।
https://www.kaabait.com