• শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:১৫
সর্বশেষ :
স্ত্রী হ ত্যা মামলায় স্বামী রাসেল গ্রেপ্তার ডুমুরিয়ায় এক ঘন্টার দুধের হাট বিক্রয় হয় লক্ষ লক্ষ টাকা জামায়াত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ সাতক্ষীরায় সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে মধ্যরাতে স্পিড ব্রেকারে রং করল শহর ছাত্রদল ফেসবুক পোস্ট মুছে ফেলাকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা সরকারি বালক বিদ্যালয়ে সংঘ র্ষ,আহত-৩ পাটকেলঘাটায় সমন্বিত পদ্ধতিতে মৎস্য ঘেরে হাঁস চাষ, এক জমিতে দ্বিগুণ লাভ এবারও বিএনপির মনোনয়ন পেলেন না রুমিন ফারহানা নারায়ণগঞ্জে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মীদের কর্মবিরতির ৩য় দিন সাতক্ষীরায় ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল আন্ত: বিভাগ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ২০২৫ এর উদ্বোধন শ্যামনগরে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার হ্রাসের দাবিতে মানববন্ধন

জামায়াত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দীর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ

শেখ মাহাতাব হোসেন, ডুমুরিয়া, খুলনা / ১৩ দেখেছেন:
পাবলিশ: শুক্রবার, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতের হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী। পেশায় তিনি একজন ঢর্নাঢ্য ব্যবসায়ি। ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের আগে তাকে কোন রাজনৈতিক দলের কোন প্রেগ্রামে দেখা যায়নি। যদিও তিনি দাবি করেন যে ২০০৩ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে তিনি জড়িত। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনামলে তিনি সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কৃষ্ণ নন্দী খুলনা- ১ আসনে জামায়াত মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেলেও এখনও আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু করেননি। দু’একদিনের মধ্যে নির্বাচনী মাঠে নামবেন। তবে নির্বাচনী মাঠ তৈরীতে তাকে নানামুখি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এসব চ্যালেঞ্জর মধ্যে রয়েছে- দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত খুলনা-১ আসনের বাসিন্দা নন তিনি। এলাবাসীর সাথে তিনি পরিচিতও নন, কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী দেওয়ায় জামায়াতের অনেক নেতাকর্মীই মেনে নিতে পারছেন না। প্রকাশ্যে কিছু না বললেও ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন তারা। জামায়াতকে ঐক্যবদ্ধ করা তার জন্য চ্যালেঞ্জ।

 

এছাড়া এ আসনের বড় একটি অংশ হচ্ছে হিন্দু ভোটার। তারা জামায়াতকে বা প্রতীক ‘ দাড়ি পাল্লা’ পছন্দ করেন না। হিন্দু ও খ্রীষ্টানদের ভোট তার পক্ষে টানা খুবই কঠিন। আরো দুটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পতিত আওয়ামীলীগের বড় ঘাটি হচ্ছে এই আসনটি। কাজেই আওয়ামীলীগের কর্মী সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে এনে দাড়ি পাল্লায় ভোট দেওয়াও বড় একটি চ্যালেঞ্জ। গ্রামে ধর্মীয় অনুভুতি মারাত্মক কাজ করে। সেক্ষেত্রে মুসলমানদের ভোট কৃষ্ণ নন্দীর পক্ষে টানা খুবই কঠিন। সব মিলিয়ে নির্বাচনী মাঠে কঠিন চ্যালেঞ্জর মুখোমুখি হচ্ছেন কৃষ্ণ নন্দী।

 

বৃহস্পতিবার দাকোপ-বটিয়াঘাটার বিভিন্ন ভোটার ও রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানাগেছে।

 

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে দাকোপ দেশের একমাত্র হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ উপজেলা। এখানে ৫৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ বাসিন্দাই হিন্দু। এ ছাড়া খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী আছে ২ দশমিক ১২ শতাংশ। অন্য ৪৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাসিন্দা ইসলাম ধর্মের অনুসারী। আর বটিয়াঘাটা উপজেলার ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ বাসিন্দা হিন্দু ধর্মের। সবমিলিয়ে এ আসনে হিন্দু ও খ্রিষ্টিয়ান ভোটার বেশী।

 

১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখনকার খুলনা-১ আসনটি খুলনা-৫ নামে ছিল। আসনটিতে বেশির ভাগ সময় সংখ্যালঘু প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। এই আসনে প্রথম এমপি হন কুবের চন্দ্র বিশ্বাস। দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জয় পান প্রফুল্ল কুমার শীল। এরশাদ সরকারের শাসনামলের শেষের দিকে বির্তকিত নির্বাচনে এ আসনে জয়লাভ করেন জাতীয় পার্টির শেখ আবুল হোসেন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেতেন প্রফুল্ল কুমার মণ্ডল। ১৯৯৬ সালে জয়ী হন শেখ হাসিনা। পরে তিনি আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শেখ হারুনুর রশিদ। কিন্তু সংখ্যালঘু প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র পঞ্চানন বিশ্বাসের কাছে হেরে যান। যদিও পঞ্চানন বিশ্বাস আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে শপথ নেন। ২০০১ সালে আবার জয়ী হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী জন আওয়ামী লীগের ননী গোপাল মণ্ডল। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবার এমপি হন পঞ্চানন বিশ্বাস। ২০২৪ সালে জয়ী হন ননী গোপাল মণ্ডল।
সূত্র জানায় হিন্দু-অধ্যুষিত এই আসনে ১৯৯৬ সালে নির্বাচন করেন জামায়াত নেতা মাওলানা আবু ইউসুফ। পরের পাঁচটি নির্বাচনে জামায়াত আর প্রার্থী দেয়নি। তিন দশক পর আবার সেখানে মাওলানা আবু ইউসুফকে প্রার্থী দিলেও পরে পরিবর্তন করে জামায়াত প্রার্থী দেয় কৃষ্ণ নন্দীকে। এ নিয়ে দলটির তৃণমূল পর্যায়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

 

জানতে চাইলে বটিয়াঘাটা উপজেলার একজন মাদ্রাসা শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মাওলানা আবু ইউসুফ দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এলাকায় তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। সব বয়সের মানুষ তাকে সম্মান করে। কাজটি ঠিক হয়নি। আমরা কোন অন্য ধর্মালম্বীর পক্ষে কাজ করবো না। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, কেন একজন হিন্দুকে প্রার্থী করতে হবে।

 

দাকোপ উপজেলার পানখালি এলাকার কয়েকজন মৎস্য ঘের ব্যবসায়ির বলেন, কৃষ্ণ নন্দী নামে আমরা কোন প্রার্থীকে চিনি না। এই প্রথম শুনলাম।

 

বটিয়াঘাটা কলেজের একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, আজ পত্রিকায় দেখলাম কৃষ্ণ নন্দী নামের একজনকে জামায়াত প্রার্থী দিয়েছে। তার বাড়ি ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে। তিনি তো এই এলাকার বাসিন্দা নন, তিনি এসে কি করবেন।
এছাড়াও কয়েকজন কৃষ্ণ নন্দীর জামায়াতে যোগাদানের বিষয়টি ভালোভাবে নেননি। হিন্দু সম্প্রদায়ের বড় একটি অংশ এবং স্থানীয় জামায়াতের একটি অংশ কৃষ্ণ নন্দীকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়ে গোটা জেলাজুড়ে জামায়াতের তৃণমূল পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

 

তবে আগের প্রার্থী মাওলানা আবু ইউসুফ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনা-১ আসনের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী। তাঁর পক্ষে আমি প্রচারণা শুরু করেছি। যেহেতু আমাকেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক করা হয়েছে, সেহেতু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি যথাসম্ভব কাজ করব, ইনশা আল্লাহ।’

 

ডুমুরিয়ার চুকনগর এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি বলেন, কৃষ্ণ নন্দী আওয়ামী লীগের লোক। সাবেক মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের ডান হাত ছিলেন। ব্যবসা থেকে আয়ের বড় অংশ আওয়ামী লীগের জন্য ব্যয় করতেন। তিনি কিভাবে জামায়াতের সাথে গেলেন বুঝি না।

 

বিএনপির ডুমুরিয়ার বিএনপির আরেক নেতা বলেন, চব্বিশের ৫ আগস্ট ক্ষুদ্ধ জনতা তার ঘর বাড়িতে আগুন দেয়। চুকনগরে মোটর সাকেলের শো’রুমসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ও ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। আর নিজেকে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্যই এখন জামায়াতের ঘাড়ে বসেছে।
খুলনা জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ও খুলনা – ৬ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মনিরুল হাসান বাপ্পী বলেন, জামায়াত আওয়ামী লীগকে পূর্নবাসনের চেষ্টা করছে। আর এর অংশ হিসেবে একজন হিন্দুকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি বলেন, জামায়াতের তো হিন্দুদের সাথে যায় না। কেন এটা হয়েছে তা আমরা বুঝি। হিন্দু বিদ্বেষী জামায়াত হঠাৎ হিন্দু প্রিতী কেন তা জনগণ জানে। ভন্ড জামায়াতকে এদেশের মানুষ বয়কট করবে।

 

এদিকে কৃষ্ণ নন্দীর মনোনয়ন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন সাবেক ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান পাপুল। তিনি বলেন, জামায়াতের প্রার্থী হতে হলে কৃষ্ণ নন্দীকে আগে ধর্মান্তরিত হতে হবে। জামায়াত ইসলামীর কথা বলে। অথচ তাদের উচিত ছিল কৃষ্ণ নন্দীকে আগে মুসলমান করা। এটা জামায়াতের ভন্ডামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি বলেন, কৃষ্ণ নন্দীর বাড়ি খুলনা ৫ আসনে। ১ আসনে তাকে কেউ চেনে না। দাকোপ – বটিয়াঘাটাবাসী বাইরের কাউকে ভোট দেবে না।

 

খুলনা- ১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী কৃষ্ণ নন্দী শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর বটিয়াঘাটা কৈয়া বাজার থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করবেন। এই এলাকাটি খুলনা-১ ও খুলনা-৫ এলাকার সীমান্তবর্তী হওয়ায় সেখানে প্রধান নির্বাচন কার্যালয় স্থাপন করবেন বলে বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘ বলেন।
কৃষ্ণ নন্দী বলেন, আমি ২০০৩ সালে জামায়াতের বর্তমান সেক্রেটারী জেনারেল গোলাম পরওয়ারের হাত ধরে জামায়াতে ইসলামী যোগদান করি। দাকোপ-বটিয়াঘাটা হিন্দু অধ্যাষূত এলাকা। আমি বিশ্বাস করি হিন্দুরা আমাকেই ভোট দেবে।

 

নির্বাচিত হলে আমি প্রথমে তিনটি কাজ করতে চাই। সেটি হলো- সন্ত্রাস, চাদাবাজী ও মাদকমুক্ত করা। এছাড়া নির্বাচিত হলে দাকোপ-বটিয়াঘাটায় যাতায়াত আরো সহজ করার লক্ষ্যে পানখালি সেতু নির্মাণ করতে সংসদে কথা বলবো।
এক প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, আমাকে মনোনয়ন ঘোষণা দেওয়ার পর গত ১ ডিসেম্বর রাতে এলাকায় গিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলেছি। এলাকার মানুষ আমাকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে গ্রহণ করেছে। এলাকার মুনষকে একত্রিত করেই নির্বাচন করবো। আশাকরি কোন বিভেদ থাকবে না।


এই বিভাগের আরো খবর

https://www.kaabait.com