সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার সাবেক সমাজসেবা কর্মকর্তা ও বর্তমান বাগেরহাট জেলার সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন কর্মকর্তা শেখ শহিদুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আলমগীর কবিরের নামে ভিক্ষুক পুনর্বাসন খাতের বরাদ্দকৃত ৩০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলার মথুরেশপুর ইউনিয়নের চরদাহ গ্রামের আবুল কাশেমের পঙ্গু প্রতিবন্ধী ছেলে আলমগীর হোসেনের বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত এবং মহা দুর্নীতিবাজ সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ শহিদুর রহমানের বিচারের দাবিতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিভাগীয় পরিচালক ও জেলা প্রশাসক সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানান।
উক্ত অভিযোগের প্রেক্ষিতে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক শাহাজাহান আলী রবিবার (১৬ নভেম্বর-২৫) দুপুর ১২ টা থেকে ৩ ঘন্টাব্যাপী কালিগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন।
তদন্ত শেষে ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের পরিচালক শাহজাহান আলী সাংবাদিকদের জানান, আমি প্রাথমিক ভাবে ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেনেশুনে পরে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রমাণিত হলে কঠোর আইনুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তদন্তের সময় অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজ সমাজসেবা কর্মকর্তা শহিদুর রহমানের সঙ্গে একান্ত আলাপ চারিতাকে কেন্দ্র করে তদন্তকারী কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সাংবাদিকদের কাছে তার পরিচয় না দিতে চাওয়াকে কেন্দ্র করে বাঁদানুবাদের সৃষ্টি হয়।
এ সময়ে দুর্নীতিবাজ সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ শহিদুর রহমান তার টাকা নেওয়াও দুর্নীতির বিষয়টি স্বীকার করে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে । নিজের চাকুরী ও দুর্নীতি ঢাকতে মোটা অংকের টাকায় অভিযোগকারীর অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য চাপ সৃষ্টি করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন সংলগ্ন গোল ঘরে ভিক্ষুক আলমগীর কবির তার স্ত্রী ফাতেমা ও মাকে বসিয়ে রাখে। যাতে করে তদন্তের সময় তদন্তকারী কর্মকর্তার সামনে হাজির না হয় সে জন্য গোপনে টাকাও খাবার দিয়ে লুকিয়ে রাখেন। পরে তদন্তের সময় সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে ক্রাচে ভর করে পঙ্গু প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আলমগীর কবির তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম এবং মাকেকে নিয়ে তদন্ত কর্মকর্তার সামনে হাজির হয়। ঐ সময় অবস্থা বেগতিক দেখে সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ শহিদুর রহমান মোটা অংকের টাকা নিয়ে তার দুর্নীতি, অপকর্ম ঢাকতে উপস্থিত সাংবাদিকদের ম্যানেজ করার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এ সময়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ শহিদুর রহমান জানান, আলমগীর কবিরের টাকা তার মায়ের নিকট দিয়েছি। তবে টাকা দেওয়া নিয়ে পরস্পর বিরোধী চাঞ্চল্যকর বক্তব্য পাওয়া যায়।
অভিযোগকারী ভুক্তভোগী আলমগীর কবির সাংবাদিকদের জানান, তিনি ঘটনার সময় বাড়িতেই ছিলেন না যশোরে ছিলেন। অভিযোগ করার পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচা মোল্লাকে দিয়ে আমার বাড়িতে মায়ের নিকট টাকা পাঠিয়ে ওই টাকার ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে প্রমাণের চেষ্টা করে।
তবে এ বিষয়ে প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক আলমগীর কবিরের মা এক এক সময় দুর্নীতিবাজ শহীদের শেখানো এক এক কথা বলেন । তিনি জানান আমার নিকট ব্যাংকের একটি চেক দেওয়ার কথা জানালেও তার কোন সত্যতা মেলেনি। প্রতিবন্ধী আলমগীর কবির তার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন কালিগঞ্জ উপজেলার ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ২০ অক্টোবর সমাজসেবা অফিস হতে ট্রাই সাইকেল কেনার জন্য আমার নামে ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে সমাজ সেবা কর্মকর্তা শহিদুর রহমান আমার কাছ থেকে দরখাস্ত নিয়ে তার অফিসের হুমায়ুন কবীরকে দিয়ে প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র সাতক্ষীরা থেকে আমার নামে একটি ট্রাই সাইকেল গ্রহণ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে আমাকে ঐ বছরের ২৮ নভেম্বর একটি ট্রাই সাইকেল দেওয়া হলেও ভিক্ষুক পুনর্বাসন প্রকল্প হতে বরাদ্দ ৩০ হাজার টাকা আমাকে না দিয়ে সমাজসেবা কর্মকর্তা শহিদুর রহমান নিজে তুলে আত্মসাৎ করেন। বহুল আলোচিত দুর্নীতিবাজ শেখ শহিদুর রহমান সাতক্ষীরায় দীর্ঘদিন চাকরি করার সুবাদে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বরাদ্দের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সাতক্ষীরায় আলিশান বাড়ি তৈরি সহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সংবাদ শিরোনামে পরিণত হয়েছে। তার দুর্নীতির কারণে কালিগঞ্জ থেকে শ্যামনগরে বদলি করলে সেখানে ওই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উপজেলাবাসি প্রতিবাদ বিক্ষোভ জানালে তাকে বাগেরহাট বদলি করা হয়। সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ শহিদুর রহমান যেখানে চাকরি করেছেন সেখানেই তাকে দুর্নীতির দায়ে বরখাস্ত বা বদলি করা হয়েছে। বর্তমান এই মহা দুর্নীতিবাজ সমাজসেবা কর্মকর্তা শেখ শহিদুর রহমান নিজেকে বাঁচাতে ঢাল হিসাবে নিজের এলাকার বর্তমান মন্ত্রী পরিষদ সচিবের নাম ভাঙিয়ে পার পাওয়ার পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে বলে একাধিক ভুক্তভোগীরা সাংবাদিকদের জানান।
https://www.kaabait.com