• রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:০৭
সর্বশেষ :
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত বিইউপিএফের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে শপথ নিলেন চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু *ঐতিহাসিক জানাজা* আগে কখনও দেখিনি ময়মনসিংহে হিন্দু যুবক হ*ত্যাকাণ্ড: গ্রেফতার ১০ নারায়ণগঞ্জ সদরে স্বাস্থ্য সহকারিদের কর্মবিরতি ২১ দিনেও প্রত্যাহার হয়নি কোমরপুরে দুই লক্ষ টাকার ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় কয়রার বাগালি চ্যাম্পিয়ন আশাশুনিতে পুলিশের কঠোর চেকপোস্ট ও টহল কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম শ্যামনগরে পথ নিয়ে বি*রোধ ছু*রিকাঘাতে নি*হত ১, আটক ৯ শরিফ ওসমান বিন হাদির হ*ত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে তালায় বিক্ষোভ

সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় রেমালে মিষ্টি পানির আধাঁর নষ্ট হওয়ায় সংকটে জীব-বৈচিত্র

এস এম মিজানুর রহমান শ্যামনগর, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি / ২০৮ দেখেছেন:
পাবলিশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০২৪
মিষ্টি পানির আধাঁর নষ্ট হওয়ায় সংকটে জীব-বৈচিত্র

সুন্দরবনে ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে ভিতরে খনন করা সুপেয় পানির পুকুরে লবন পানি প্রবেশ করায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিতে পারে, সুন্দরবনে বসবাস করা প্রাণীকূল,জেলে বাওয়ালী,বনকর্মীদের।

বনভিভাগের তথ্য অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে পশ্চিম সুন্দরবনে সাতক্ষীরা রেন্জে সুপেয় পানির পুকুর সহ ১ কোটি ৬ লক্ষ টাকার পরিমান ক্ষতি হয়েছে। তবে এখানে সুন্দরবনে গাছ,বন্যা প্রাণীর কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে সেটার কোন সঠিক তথ্য দিতে পারিনি বনবিভাগ কর্তৃপক্ষ।

খুলনা বিভাগের পশ্চিম সুন্দরবনে ২টা রেন্জ সাতক্ষীরা রেন্জ ও খুলনা রেন্জ। খুলনা রেন্জ ২৩ টা ক্যাম্প ও সাতক্ষীরা রেন্জ ১৬ ক্যাম আছে। খুলনা বিভাগের পশ্চিম বনবিভাগের ২ রেন্জে ৩৯ টা মিষ্টি পানির পুকুর আছে।

প্রতি ক্যাম্পের জন্যে একটি করে মিষ্টি পানির পুকুর খনন করা হয়। গভীর সুন্দরবনের ভিতরের ক্যাম্প গুলোতেও এ পুকুর খনন করা হয়। মূলত সুন্দরবনে বসাবাসে করা প্রাণী ও জেলে বাওয়ালীদের কথা চিন্তা করে পুকুর গুলো খনন করা হয়েছে।

এ পুকুর গুলোতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে, সারা বছর ব্যাবহার করে থাকে। ওই এলাকার সুন্দরবনের বসাবাসরত প্রাণী থেকে শুরু করে,জেলে বাওয়ালীরা, বন বিভাগের কর্মীরা সুপেয় পানি হিসাবে দৈনিন্দন কাজে ব্যাবহার করে থাকে। খাওয়া থেকে শুরু করে,গোসল, রান্না করা কাজে ব্যাবহার হয়।

ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে দীর্ঘ সৃষ্টি জ্বলোচ্ছ্বাসের ফলে প্রতিটা পুকুরে লবন পানি প্রবেশ করে মিষ্টি পানির আধাঁর নষ্ট হয়ে গেছে। এরই মধ্যে সুপেয় পানি সংকটে পড়তে পারে সুন্দরবনে বসবাসরত প্রাণীরা।

দ্রুত সময়ের মধ্যে লবন পানি নিস্কাষন করে মিষ্টি পানির ব্যাবস্থা না করলে সুপেয় পানি সংকটে পড়বে সুন্দরবনের প্রাণীকুল।

এছাড়া রেমালের ধরণ ও প্রভাব অনেকটাই আইলা ও কিছুটা ফণী ও বুলবুলের মত। সুন্দরবন দীর্ঘসময় জলোচ্ছ্বাসের লবণাক্ত পানিতে তলিয়ে ছিল। এ কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বনতল।

বনের নিচু স্তরের অণুজীব, উদ্ভিদ, প্রাণী ও ম্যানগ্রোভ বীজের বেশি ক্ষতি হয়েছে। উদবা ভোঁদড়, বেজি, গুইসাপ, ব্যাঙসহ বহু সরীসৃপদের সমস্যা হবে। হরিণ, বুনো শূকরদের মৃত্যু এবং দীর্ঘমেয়াদী নানা অসুখ হতে পারে বেশি। বানর, বাঘ কিংবা অজগর সাপেরা হয়তো কিছুটা নিরাপদ থাকতে পেরেছে।

জেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা বনে মাছ ধরতে এসে। বনের ভিতরে যে পুকুর কাটা আছে। সেখান থেকে খাওয়ার পানি নিয়ে খেয়ে থাকি। যে কয়দিন বনের মধ্যে মাছ ধরি। ঝড়ে লবন পানি উঠে গেছে এখন আর মিষ্টি পানি কোথায় পাবো।

 

প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রতিবেশ বিষয়ক গবেষক পাভেল পার্থ রেমালের প্রভাবে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে তিনি জানান, বনের ভেতর মিষ্টিপানির পুকুর গুলি তলিয়ে যাওয়ায় সুন্দরবনে এখন পানীয় জলের সংকট বাড়বে। বহু বন্যপ্রাণী খাদ্য সংকটে পড়বে। প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ও খাদ্যশৃংখল বিনষ্ট হবে। বন্যপ্রাণীদের বিচরণ এলাকার সমস্যা হবে।

ঘূর্ণিঝড় এবং জ্বলোচ্ছ্বাস বা বিপদের সময় বন্যপ্রাণীরাও একটা মানসিক ট্রমার ভেতর থাকে। এইটা কাটিয়ে খাপ খাওয়াতে সময় লাগে। যত দ্রুত পারা যায় বনের ভেতর সকল মিষ্টিপানির পুকুরের জল সেচে আবার মিষ্টিপানি বা বৃষ্টির পানি দিয়ে ভরতে হবে। আরো পানির আধার তৈরি করতে হবে। বন্যপ্রাণীরা যাতে নিজেদের মতো করে একটা মানিয়ে নিতে পারে এজন্য কিছুদিন সুন্দরবনে বাণিজ্যিক পর্যটন বন্ধ রাখা দরকার।

 

একইসাথে গাছ, বন্যপ্রাণী, অণুজীবসহ সামগ্রিকভাবে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণকে পাবলিকলি প্রকাশ করতে হবে। এই ক্ষয়ক্ষতিকে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত জাতীয় ক্ষয়ক্ষতি প্রতিবেদনে’ যুক্ত করতে হবে। সর্বশেষ দুবাই জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক ক্ষয়ক্ষতি তহবিল গঠিত হয়েছে।

 

ঘুর্ণিঝড় রেমালের কারণে সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এই তহবিলের অর্থায়ন সরকারকে নিশ্চিত করতে জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। একইসাথে কেবল বন্যপ্রাণ নয়, সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল বনজীবী মৌয়াল, জেলে, বাওয়ালীদের জীবনযাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতিকে বনের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার সাথে যুক্ত করেই পরিকল্পনা করতে হবে।

সাতক্ষীরা রেন্জ কর্মকর্তা একে এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সাতক্ষীরা রেন্জ ১৫ টি ক্যাম্পে সুপেয় পানির পুকুর সহ ১কোটি ৬ লক্ষ টাকার পরিমান মালামালের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তবে গাছে বা প্রাণীদের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এখনো জানাযায়নি। পানি সেচের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে।


এই বিভাগের আরো খবর

https://www.kaabait.com