• রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:০৭
সর্বশেষ :

দেশ সেরা গরু ডুমুরিয়াতে, দাম হাকিয়েছে ১২লক্ষ টাকা

শেখ মাহতাব হোসেন, ডুমুরিয়া, খুলনা প্রতিনিধি  / ২৪০ দেখেছেন:
পাবলিশ: মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
দেশ সেরা গরু ডুমুরিয়াতে, দাম হাকিয়েছে ১২লক্ষ টাকা

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের মিকশিমিল গ্রামের মাষ্টার মোজাহার আলী শেখের স্ত্রী রুমিছা বেগম এর প্রায় ১৬ শত কেজি ওজনের সাড় গরু নিজস্ব ফার্মে ৪বছর যাবত লালন পালন করে দেশের সেরা গরু হিসাবে দাবি করেন তিনি, তার গরু ১২লক্ষ টাকা বিক্রিয় করবেন বলে গরুর মালিক রুমিছা বেগম জানান ।

 

কয়েক বছর আগেও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমার থেকে আমদানীকৃত গরু দিয়েই মিটত দেশের মাংসের চাহিদা। প্রতি বছর কোরবানির সময় দেশ দুটি থেকে আমদানি হতো ২২-২৫ লাখ গবাদিপশু। কিন্তু সেই নির্ভরতা কমিয়ে এখন স্বয়ম্ভরতার পথে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য বলছে, চলতি বছর বাংলাদেশে পালনকৃত গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি। শুধু তা-ই নয়, গবাদিপশুটি পালনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে দ্বাদশ অবস্থানে রয়েছে।

 

দেশের গরু পালনে বড় উল্লম্ফন হয়েছে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের পর। ২০১৪ সালে ভারতের তত্কালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের গোরক্ষানীতির ফল হিসেবে দেশটি থেকে গরু আমদানিতে ভাটা পড়ে। এ প্রেক্ষাপটে গরু-ছাগলের চাহিদা মেটাতে স্বয়ম্ভরতা অর্জনের ওপর জোর দেয় সরকার। ভারত থেকে গবাদিপশু আসা বন্ধ হওয়ার দুই বছর পরই প্রতি বছর গড়ে ১৫-২০ শতাংশ হারে গবাদিপশুর
খামার বাড়ছে দেশে। বর্তমানে দেশে মোট নিবন্ধিত খামার প্রায় ৭০ হাজার এবং অনিবন্ধিত খামারের সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় এক লাখ। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ায় একদিকে গরু আমদানিনির্ভরতা যেমন কেটেছে, তেমনি গবাদিপশুটির বৈশ্বিক উৎপাদনেও বেড়েছে বাংলাদেশের অংশ। গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা করার পাশাপাশি তরুণদের কর্মসংস্থানে আকৃষ্ট করতেও বিশেষ অবদান রাখছে গরু।

 

দেশে গরু পালন যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষ দশে প্রবেশ করতে সমর্থ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডাক্তার মোঃ লুৎফর রহমান আমাদের ডুমুরিয়া খুলনা প্রতিনিধি শেখ মাহতাব হোসেন কে বলেন, একসময় ২০- ২২ লাখ গরু আমদানি হতো, সেটি ২০-২২ হাজারে নেমে এসেছে। এ তথ্যই বলে দেয় বাংলাদেশের অর্জন ও দেশটির সামর্থ্য। গরুর চাহিদা মেটাতে আমাদের এ স্বনির্ভরতার পেছনে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং গরু মোটাতাজাকরণের পাশাপাশি খামারিদের একান্ত আগ্রহ কাজ করেছে। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগ এর পেছনে ক্রিয়াশীল ভূমিকা রেখেছে। তবে গরু পালনে বৈশ্বিক অবস্থান সুদৃঢ় হলেও মাংসের দাম কমাতে আমরা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছি। সেটি মূলত গরু
লালনপালনে খরচ বেশি হওয়ার কারণেই হচ্ছে। সেখানে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

রফতানিকারক দেশের বাণিজ্য বাধা কিংবা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও যে আমদানিকরক দেশের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ বাংলাদেশ। ছয় বছর আগে ভারত বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পরই দেশে মাংসের চাহিদা মেটাতে গরু-ছাগল পালনে জোর দেয় সরকার। সে সময় মাংস উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হয়। বিশেষ করে জাত উন্নয়ন, গরু মোটাতাজাকরণ ও কৃত্রিম প্রজনন, মানসম্পন্ন ব্রিড তৈরি করা ছাড়াও খামারিদের নানা ধরনের সহায়তা
দেয়া শুরু হয়। খামারিদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিপণন কৌশল ও বাজারের সঙ্গে তাদের সংযোগ বাড়াতে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়। বিচ্ছিন্নভাবে পালন না করে খামারিদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অর্থায়ন শুরু হয়।

এতে সংকটকে দুই বছরের মধ্যে সম্ভাবনায় পরিণত করার ফলে এ বছর গরু পালন ২ কোটি ৪০ লাখ ছাড়িয়েছে।

 

ডুমুরিয়া উপজেলা ভেটেরিনারি সার্জন ডাক্তার শারমিন আলম বলেন ডুমুরিয়া উপজেলার চাহিদার চেয়ে শতভাগ দেশে পালিত পশুর মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি রফতানি বাজারে মাংসের চাহিদা মেটানোর সুযোগ কাজে লাগাতে পারে বাংলাদেশ। এজন্য খামারিদের অর্থনৈতিকভাবে লাভবান করতে ঋণ ব্যবস্থাকে সহজ করতে হবে, স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করতে হবে। গরু পালনে খামারিদের খরচ কমিয়ে মুনাফা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে। উৎপাদনশীল গরু জবাই বন্ধে আইন বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কম সময়ে বা কম খাবারে গরু উৎপাদনক্ষমতা যাতে বৃদ্ধি করা যায় সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ভালো মানের ব্রিড ও সিমেন আমদানি করতে হবে। বিশেষ করে বেসরকারি পর্যায়েও সিমেন আমদানির মাধ্যমে গরু উৎপাদন ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রম আরো বৈজ্ঞানিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি তারা গরু মোটাতাজা করতে স্টেরয়েডজাতীয় (ডেকাসন, বেটামেথাসন ও পেরিঅ্যাকটিন), ডেক্সামেথাসন, পাম ট্যাবলেট ছাড়াও ইউরিয়া সার খাওয়ানো পন্থাগুলোকে কঠোর
হস্তে বন্ধ করতে হবে। তবে আমদানি করা মাংস উদ্বেগ বাড়াচ্ছে খামারিদের।

 

কোনো ধরনের উন্নত পরীক্ষা ছাড়াই এসব মাংস প্রবেশ করেছে দেশে। তাই মাংস আমদানিতে শুল্কারোপের পাশাপাশি অশুল্ক বাধাগুলো বেশি পরিমাণে প্রয়োগ করতে সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

এ বিষয়ে দেশের অন্যতম বৃহৎ গরু পালনকারী খামার রুমিছা বেগম বলেন, আমার গরুর নাম নুন্টু বয়স জন্ম ১৮মে ২০২০ সালে ।
দেশের এ অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে শিক্ষিত তরুণ ও খামারিরা। বেকার তরুণদের বড় অংশ এখন বাণিজ্যিক খামারে মনোনিবেশ করছে। ভালো লাভ পাওয়ায় সাধারণ খামারিরা লালনপালন বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে পশুখাদ্যের অত্যধিক উচ্চমূল্য, বিদ্যুৎ ও পানির বিল কৃষির আওতায় না এনে বাণিজ্যিকীকরণসহ নানা সমস্যার কারণে দেশের দুগ্ধ খামার শিল্প পিছিয়ে পড়ছে। প্রতিযোগিতায় একটু হলেও পিছিয়ে পড়েছে। এজন্য মাংস আমদানি চিরতরে বন্ধ করতে হবে। দেশী জাত উন্নয়নের গবেষণায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে দেশী জাত দিয়েই আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারব।

 

গরু পালনে বর্তমানের অর্জনকে ধরে রাখতে এবং টেকসই করতে হলে তিনটি উদ্যোগ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন ডুমুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল কবির,তিনি বলেন, প্রথমত, পশু পালনকে অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক খাত হিসেবে দাঁড় করাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। খামারিদের বাজার ব্যবস্থাপনায় সর্বোচ্চ পরিমাণে সুযোগ দিতে হবে। পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রাণিসম্পদ খাতের উৎপাদন বাড়াতে অব্যশই বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। দেশের বাণিজ্যিক চাষকে উৎসাহের পাশাপাশি ক্ষুদ্র খামারিদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। তাছাড়া বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ খাতে বিনিয়োগে আকর্ষণ করার পদক্ষেপ নিতে হবে। ছোট খামারিদের নীতি সহায়তার মাধ্যমে সুরক্ষা করতে পারলে দেশেই সারা বছরের চাহিদা মেটানোর জন্য পশু উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে কর্মসংস্থান যেমন বাড়বে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের গতিশীলতা আসবে।


এই বিভাগের আরো খবর
https://www.kaabait.com